Friday, March 24, 2023

কাদিয়ানি মতবাদ

 কাদিয়ানি মতবাদ


এই দলের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ১৮৩৯/৪০ খ্রিস্টাব্দ পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিজ এলাকাতেই লাভ করেন। লেখা-পড়া সমাপ্ত করে পাঞ্জাবের এক অফিসে কেরানির চাকুরী গ্রহণ করেন। পূর্ব হতেই তার পরিবার ইংরেজদের তল্পীবাহক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। গোলাম আহমাদ প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজদের প্রকাশ্য দালালী ও নিজেকে মূলহাক, (যার অন্তরে দৈব বাণী অবতীর্ণ হয়) মুহাদ্দাস (আল্লাহ যার সাথে অন্তরে অন্তরে কথা বলেন), প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ, নিজেকে প্রথমে নবী এবং পরিশেষে ‘আমিই সর্বশেষ নবী’ ইত্যাদি অসংখ্য জঘন্য ভ্রান্ত আকীদার দাবী করে বসলে তার আসল চেহারা ফাঁস হয়ে যায় এবং সমস্ত হক্কানী আলেম উলামা তাকে মুরতাদ ফাতাওয়া দেন।


তার কিছু ভ্রান্ত আকীদা ও তার খন্ডন নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ


(১) আল্লাহ সম্পর্কে তার আকিদাঃ

মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী লিখেছেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি আমিই আল্লাহ’। (আয়েনায়ে কামালাতে মির্জা পৃ.৫৬৪,৫৬৫, কাদিয়ানী মাযহাব পৃ.৩২৮)


অথচ কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক, তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। (সূরা বাকারা.২৫৫)

 

সুতরাং ঘুমের মধ্যে আল্লাহ হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা তার মিথ্যুক হওয়ারই প্রমাণ বহন করে। মির্জা কাদিয়ানীর বইতে আছে ‘আল্লাহ তাকে বলেছেন শুন!  হে আমার ছেলে’। (গোলাম আল বুশরা ১/৪৯, ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩০৮)


অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। (সূরা ইখলাসঃ ৩) আরও দেখুন সূরা নিসাঃ১৭১, সূরা ইউনুসঃ৬৮)


হাদীসে কুদসীতে আছেঃ- আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ তার এরূপ করার কোনো অধিকার নেই এবং সে আমাকে গালি দিয়েছে, অথচ তার এরূপ করার কোনো অধিকার নেই। আর আমাকে মিথ্যারোপ করাটা এভাবে যে, সে বলে তিনি আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে কিছুতেই পুনরুত্থান করতে পারবেন না। আর আমাকে গালি দেওয়াটা এভাবে যে, সে বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন অথচ আমি অমুখাপেক্ষী, আমার সন্তান নেই এবং আমি কারও সন্তান নই এবং আমার কোনো সমকক্ষ নেই। (বুখারী হাদীস নং ৪৯৭৪, নাসাঈ হাদীস নং ২০৭৮)


(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তার আকীদাঃ 

মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজ বইতে লিখেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী নন, বরং গোলাম আহমাদ সর্বশেষ নবী। (হাকীকাতুন নবুয়াত পৃ.৮২, তিরইয়াকুল কুলূব পৃ.৩৭৯, আদইয়ানে বাতেলা আওর সিরাতে মুতাকীম পৃ.১৩২)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কারো পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ’। সূরা আহযাবঃ ৪০


এক হাদীসে এসেছে, শীঘ্রই আমার উম্মতের মাঝে ৩০ জন মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটবে, তারা প্রত্যেকেই অমূলক দাবি করবে যে, সে আল্লাহর নবী, অথচ আমিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবী নেই। (আবূ দাউদ ২/২২৮, তিরমিযী ২/৪৫, বুখারী হাদীস নং ৩৫৩৫, মুসলিম হাদীস নং ২২৮৬)


সে আরো লিখেছে, ‘গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক মর্যাদাবান’ (হাকীকুতুন নাবুয়াত পৃ.২৭২, আরবাঈন পৃ.৩০৮, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩২, ইসলামী আকীদা পৃ. ৩০৮)


অথচ কুরআনে এসেছে, ‘সমস্ত নবীদের থেকে আল্লাহ তা‘আলা এ অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তোমরা যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানা পাও তাহলে তোমরা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে’ (আল ইমরানঃ ৮১)


এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল নবীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ আর গোলাম আহমাদ তো নবী নয় এমনকি একজন সাধারণ মুসলমানও নয় অতএব তার মর্যাদা একজন মুমিন থেকেও বহুগুন নিচে, তাহলে তার মর্যাদা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশি হয় কীভাবে?


আর কুরআনে বিশের অধিক জায়গায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু মির্জা সাহেবের দাবি হলো এসব জায়গায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নয় বরং তাকে সম্বোধন করা হয়েছে। (দাফেউল বালা পৃ.১৩, ইজাযে আহমাদীঃ ১১/২৯১)


এমন মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, ‘তোমরা আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা বলতে ও তার নির্দেশ সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে, সে জন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে (সূরা আনআমঃ৯৩)


কুরআন শরীফে নবীজীকে সম্বোধন করাটা মির্জা গোলাম আহমাদ নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে কতবড় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে!


(৩) ঈসা আ. ও অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে তার আকিদাঃ 

গোলাম আহমাদের বইতে আছে, ঈসা আ. এর তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। (ইজাযে আহমাদী পৃ.১৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী আর কে হতে পারে? (সূরা নিসাঃ ৮৭) আর নবীগণ যা কিছু বলেন আল্লাহর হুকুমেই বলেন। অতএব নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী কখনো মিথ্যা হতে পারে না। সুতরাং কাদিয়ানীর ঈসা আ. এর তিনটি ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা হওয়ার দাবি করা পরোক্ষভাবে একথারই দাবি করা যে, আল্লাহই মিথ্যা বলেছেন (না‘উযুবিল্লাহ)


কাদিয়ানীর বইতে আছে, হয়রত ঈসা আ. মৃত্যু বরণ করেছেন, তিনি কিয়ামাতের পূর্বে আগমন করবেন না। (ইযালায়ে কুলাঁ ২/৩১১, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৪)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘কাফিররা বলে থাকেঃ আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি, অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, কিন্তু তাদের বিভ্রম হয়েছিল। তারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এ সম্বন্ধে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করে নাই বরং আল্লাহ তাকে আসমানে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আল্লাহ যবরদস্ত শক্তিমান ও হিকমাতওয়ালা’। (সূরা নিসাঃ১৫৭)


হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অচিরেই তোমাদের মধ্যে মারইয়াম তনয় ঈসা আ. আসবে ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ রূপে.... (বুখারী হাদীস নং ৩৪৪৮)


কাদিয়ানীর বইতে আছে, ‘মির্জা সাহেব বনী ইসরাইলের নবীদের চেয়ে উত্তম’ (দাফেউল বালা পৃ.২০)


অথচ সর্ব সম্মত আকীদা হলঃ কোন মুমিন চাই সে যত বড় বুযূর্গ হোক না কেন কোনো নবীর চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হতে পারে না। (শরহে আকায়েদ পৃ.১৬১) তাহলে মির্জা সাহেব যিনি সাধারণ মুমিনের সমান নয়, তিনি কীভাবে বনী ইসরাঈলের নবীদের ঊর্ধ্বে মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারেন? 


(৪) ফেরেশতা সম্পর্কে আকীদাঃ

মির্জার বইতে আছে ‘ফেরেশতা বলতে কিছু নেই’ (তাওযীহে মারাম পৃ. ২৯, আদইয়ানে বাতেলা পৃ. ১৩৩) অথচ কুরআনে এসেছে ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয় তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও..... (আল ইমরানঃ১৮, সূরা বাকারা.৩০,১৬১, সূরা নিসাঃ৯৭) ঈমানে মুফাস্সালের মধ্যে দ্বিতীয় নাম্বারে ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনার ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া চারজন বড় বড় ফেরেশতার নাম কার অজানা? সুতরাং একমাত্র বেঈমান ব্যতীত অন্য কেউই ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার করতে পারে না।


কাদিয়ানীর বইতে আছে ‘জিহাদের হুকুম রহিত হয়ে গেছে।’ (হাশিয়ায়ে আরবাঈন পৃ.১৫৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩) 


অথচ কুরআনে এসেছে ‘তোমরা তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে জিহাদ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিৎনা (কুফুরী কর্মকান্ড) দূরীভূত না হয়..’ (সূরা আনফালঃ৩৯, আরো দেখুন, সূরা আন কাবূতঃ ৬৯, হুজুরাতঃ১৫, ফুরকানঃ৫২)


(৫) হাশর সম্বন্ধে কাদিয়ানীর বিশ্বাসঃ 

মির্জা বলেন, ‘মৃত্যুর পর হাশরের ময়দানে কেউ একত্র হবে না। বরং সরাসরি জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (ইযালায়ে আহকামে কুলাঁ পৃ.১৪৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩) 


অথচ আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো যেদিন তাদের সকলকে একত্র করবো। মুশরিকদের বলবো, যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? (সূরা আনআমঃ ২২, আরো দেখুন, কাহাফঃ৪৭, ফাতিহা আয়াতঃ ৩, এছাড়া বহু হাদীসে হাশরের ময়দানের আলোচনা আছে যেমন বুখারী শরীফ ১ম খন্ড বাবুস সুজূদ)


মির্জার আরো কিছু ভ্রান্ত আকিদাঃ

১. মির্জার বইতে আছে, ‘যে ব্যক্তি মির্জার নবুওয়াত মানে না সে জাহান্নামী কাফের’ (রবয়ীন পৃ.৪. আদইয়ানে বাতেলা পৃ. ১৩২) অথচ সমগ্র দুনিয়ার উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া হলো যে, যে ব্যক্তি মির্জাকে নবী মানবে সে কাফের।


২. মির্জা নিজে মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছেন। (আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম পৃ. ৪২৩) (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ ৩২৬) অথচ সে ব্যক্তি হেদায়াত ও ঈমান বঞ্চিত এক বদ নসীব ও হাজারো মানুষকে গোমরাহ করণেওয়ালা।


৩. তারা উপরন্তু ২০ পারার মত কুরআন নাযিল হওয়ার দাবী করেছে। (হাকীকাতুল ওহী পৃ.৩৯১/ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ৩২৭) অথচ নবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া কারো উপর আসমানী ওহী নাযিল হতে পারে না, হ্যাঁ, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক হয়তো তার উপর কোন হুকুম হয়েছিল সেটাকে তিনি ওহী মনে করেছেন। 


৪. তিনি নিজেকে হিন্দুদের শ্রী কৃষ্ণ অবতার হওয়ার দাবী করেছেন। (কাদিয়ানী মাযহাব পৃ.৪৩২/ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ৩২৮) নাঊজুবিল্লাহ, এর দ্বারা তার কাফির হওয়া স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।


৫. তিনি নিজেকে যুলকারনাঈন হওয়ার হাস্যকর দাবি করেছেন। (বারাহীনে আহমদিয়া পৃ.৯৭/ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩২৯) অথচ কুরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন বহু পূর্বে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে ইন্তিকাল করেছেন। এছাড়াও তার আরও অসংখ্য ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে। 


উল্লেখ্য যে, তিনি মিথ্যা নবী না হলে বেইজ্জতির মৃত্যু কামনা করতেন না এবং সেটি তার জীবনে বাস্তবায়িতও হতো না। এটাও তার মিথ্যুক হওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ। এ ছাড়া মুহাম্মাদী বেগম সহ বিভিন্ন ব্যাপারে তিনি অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যার সবগুলি পরবর্তীতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ সত্য নবীদের কোন একটা ওয়াদা অঙ্গিকারও মিথ্যা প্রমাণিত হয় নাই। 


তার এসকল ভ্রান্ত আকীদার পরিপ্রেক্ষিতে সর্ব প্রথম ১৮৮৯ খৃ. লুধিয়ানার আলেমগণ তাকে কাফের বলে ফাতওয়া দেন। এর পর একে একে দারুল উলুম দেওবন্দ হতে ১৯৭৪ সালে, রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলনে ১৪৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠনের পথ হতে তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে সর্বসম্মতভাবে কাফের ঘোষণা করা হয়। এবং ১৯৮৮ সালে ও. আই. সি. এর উদ্যোগে সকল মুসলিম দেশের ধর্ম মন্ত্রীদের এক সম্মেলনে তাকে ও তার অনুসারীদেরকে কাফের ঘোষণা করার লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। সেমতে প্রায় সকল মুসলিম দেশেই তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। (ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩৩২)

কবীরা গুনাহসমূহ

 কবীরা গুনাহসমূহ


গুনাহে কবীরা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না এবং একটি গুনাহই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট, নিম্নে কিছু কবীরা গুনাহের তালিকা দেওয়া হল। যথা-


(১) শিরক করা।


(২) মা-বাপকে কষ্ট দেওয়া।


(৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।


(৪) যিনা ব্যভিচার করা।


(৫) চুরি করা।


(৬) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।


(৭) মিথ্যা অপবাদ লাগানো।


(৮) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।


(৯) না হক যাদু করা।


(১০) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।


(১১) আমানতের খেয়ানত করা।


(১২) গীবত করা।


(১৩) বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ, অধীনস্থদেরকে মালিকের বিরুদ্ধে উস্কানী দেয়া।


(১৪) নেশাযুক্ত জিনিষ পান করা।


(১৫) অবৈধ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা।


(১৬) জুয়া খেলা ও লটারী ধরা।


(১৭) সূদ খাওয়া।


(১৮) ঘুষ খাওয়া।


(১৯) জোর-জুলুম করে অর্থ-সম্পদ লুটে নেয়া।


(২০) অনাথ এতিম, বিধবার মাল খাওয়া। 


(২১) আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।


(২২) মিথ্যা কসম খাওয়া।


(২৩) কোন মুসলমানকে গালি দেয়া।


(২৪) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা। 


(২৫) ধোঁকা দেয়া।


(২৬) অহংকার করা।


(২৭) বাদ্য বাজনা সহ নাচ-গান করা।


(২৮) ডাকাতি করা, লুন্ঠন করা।


(২৯)  স্বামীর নাফরমানী করা।


(৩০) জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করা।


(৩১) শ্রমিকের মজুরী কম দেয়া।


(৩২) মাপে কম দেয়া।


(৩৩) দ্রব্য-সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা। 


(৩৪) খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়া।


(৩৫) স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে শর্তের সাথে হীলা করা।


(৩৬) নিজের অধীনস্থ মহিলাদিগকে পরপুরুষের সাথে অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ দেয়া।


(৩৭) ঘোড় দৌড় বা রেস খেলা।


(৩৮) সিনেমা-টিভি ইত্যাদি দেখা।


(৩৯) পেশাব করে পানি না নেয়া বা পবিত্রতা অর্জন না করা।


(৪০) চোগলখুরী ও কূটনামী করা।


(৪১) গণকের কাছে যাওয়া।


(৪২) মানুষ বা জীবের ফটো তোলা, ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো। উল্লেখ যে আজকাল অনেকে মনে করে যে, ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি অতি মারাত্মক ভুল, কেননা হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে কাপড়ে অংকিত ছবির কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তির ব্যাপারেও ধমকি এসেছে। দেখুন: বুখারী শরীফ হা: নং ৫৯৬১। আর জানা কথা যে কাপড়ে অংকিত ছবি ও ক্যামেরার দ্বারা তোলা ছবির মধ্যে পার্থক্য করার কোন কারণ নেই। অনুরূপভাবে ভিডিওতে রেকর্ড করা ছবিও যেহেতু ছবির সকল উদ্দেশ্য খুব ভালভাবে পুরা করে কাজেই ভিডিওর ছবিও নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত।


(৪৩) পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি বা যে কোন ধরনের অলংকার পরা।


(৪৪) পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরা।


(৪৫) মেয়ে লোকের জন্য শরীরের রূপ ও গঠন প্রকাশ পায় এমন পোশাক পরিধান করা।


(৪৬) ঝগড়া-বিবাদে মিথ্যা মোকাদ্দমা দায়ের করা।


(৪৭) মৃত ব্যক্তির জায়িয ওসীয়ত পালন না করা।


(৪৮) কোন মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়া।


(৪৯) গুপ্তচরবৃত্তি করা অর্থাৎ, মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রের গোপন কথা অন্য সমাজ বা রাষ্ট্রের নিকট প্রকাশ করা।


(৫০) নর হয়ে নারীর এবং নারী হয়ে নরের বেশ-ভূষা অবলম্বন করা।


(৫১) টাকা বা নোট জাল করা।


(৫২) অন্তর এত শক্ত করা যে, গরীব দুঃখীর সীমাহীন কষ্ট দেখেও  দরদ না লাগা।


(৫৩) ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারায় ত্রুটি করা এবং দেশের জরুরী খাদ্য বা হাতিয়ার পাচার করা।


(৫৪) রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নীচে পায়খানা করা।


(৫৫) ঘরবাড়ী, আঙ্গিনা, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, কাপড়-চোপর নোংরা রাখা এবং ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনায় মন-মস্তিস্ক গান্ধা করে রাখা। 


(৫৬) হায়িয বা নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ করা।


(৫৭) যাকাত না দেয়া।


(৫৮) ইচ্ছা করে কোন নামায কাযা করা। 


(৫৯) রমযানের কোন রোযা ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা।


(৬০) জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করা।


(৬১) ষাঁড় দ্বারা গাভীর এবং পাঠার দ্বারা ছাগীর পাল দিতে না দেওয়া।


(৬২) পাড়া-প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।


(৬৩) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করা। 


(৬৪) পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া।


(৬৫) জনগণ যাকে চায়না সে ব্যক্তির বাদশাহী বা নেতৃত্ব করা।


(৬৬) নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখা।


(৬৭) বদগুমানী বা কারো প্রতি খারাপ ধারনা রাখা।


(৬৮) ইলমে দীনকে তুচ্ছ মনে করে অর্জন না করা।


(৬৯) বিনা জরুরতে জনসম্মুখে সতর খোলা।


(৭০) মেহমানের খাতিরে আদর যত্ন ও অভ্যর্থনা না করা।


(৭১) ছেলেদের সঙ্গে কুকর্ম বা সমকাম করা। 


(৭২) আমানতের যোগ্য সৎকর্মীকে নিযুক্ত বা নির্বাচন না করে স্বজন প্রীতি করা।


(৭৩) নিজে ইচ্ছা করে বা দাবী করে জোরপূর্বক কোন পদ গ্রহণ করা।


(৭৪) ইসলামী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী হওয়া।


(৭৫) নিজের পরিবার-পরিজনের খবর না নিয়ে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্টে ফেলা। 


(৭৬) খতনা না করা।


(৭৭) অসৎ কাজ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা না দেয়া।


(৭৮)অন্যায়ের সমর্থন করা।


(৭৯) আত্মহত্যা করা।


(৮০) ফরয গোসলে অনর্থক দেরী করা। 


(৮১) পেশাব-পায়খানা করে ঢিলা-কুলুখ বা পানি ব্যবহার না করা।


(৮২) নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম, নখ বর্ধিত করে রাখা।


(৮৩) উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, এবং আলেম ও হাফেজদের অমর্যাদা করা। 


(৮৪) শুকরের গোশত খাওয়া।


(৮৫) হস্ত মৈথুন করা।


(৮৬)তামাশা দেখার জন্য ষাঁড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদি লড়াইয়ের আয়োজন করা। 


(৮৭) কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া। 


(৮৮) কোন জীবন্ত ও জানদার জীবকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ,মারা।


(৮৯) আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।


(৯০) আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া। 


(৯১) হালাল জানোয়ারকে গাইরুল্লাহর নামে যবেহ করা বা ভিন্ন উপায়ে মেরে খাওয়া। 


(৯২) অপচয় বা অপব্যয় করা।


(৯৩) বখিলী কানজূসী করা।


(৯৪) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন না করা।


(৯৫) ইসলামের নিয়মানুসারে আইন-কানুন জারী হওয়া সত্ত্বেও কোন আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।


(৯৬) ডাকাতি, লুটতরাজ, পকেটমারী করা। 


(৯৭) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সহিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে কাউকে ডাকা, যেমন- হে জোলা, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি।


(৯৮) বিনা অনুমতিতে কারো বাড়ীতে বা ঘরে বা খাস কামরায় প্রবেশ করা।


(৯৯) মানুষের কষ্ট হয় এমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে খুশী হওয়া।


(১০০) সুরত-শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারী করা।


(১০১) বিদআত কাজ করা বা জারি করা। 


(১০২) দুনিয়া হাসিলের জন্য ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া।


(১০৩) ইলম গোপন করা।


(১০৪) জাল হাদীস বর্ণনা করা।


(১০৫) গুনাহের কাজে মান্নত করা।


(১০৬) প্রজাদের অধিকার খর্ব করা, জনগণের হক আদায় না  করা।


(১০৭) অবৈধ ট্যাক্স উসূল করা।


(১০৮) বিনা ঠেকায় ঋণ করে ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।


(১০৯) দুমুখো স্বভাব ইখতিয়ার করা।


(১১০) মহিলাদের খুশবু লাগিয়ে বাহিরে বের হওয়া। 


(১১১) বিজাতিদের অনুকরণ করা।


(১১২) গোঁফ বড় করে রাখা।


(১১৩) অন্যের চুল ব্যবহার করা। 


(১১৪) যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে অভিশাপ দেয়া। 


(১১৫) অহেতুক কুকুর প্রতিপালন করা।


(১১৬) মাতম ও শোক প্রকাশ করা।


(১১৭) একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।


(১১৮) সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা বা সমালোচনা করা।


(১১৯) হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণ করা।