Sunday, March 26, 2023

হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ

 হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ


এই লেখাটি সনাতন ধর্মের অনুসারী হিন্দু ভাই-বোনদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। হিন্দু ভাইয়েরা যেহেতু নিজের হাতের তৈরি মূর্তিকে নিজেই পূজা করে থাকেন, তাই মূল আলোচনার আগে জ্ঞানীদের জন্য মূর্তি পূজা সম্পর্কে অন্তরচক্ষু খুলে দেওয়ার মতো আল কুরআনের একটি উপমা তুলে ধরছিঃ


আল-কুরআনে আল্লাহ তাআলা মূর্তিপূজারীদেরকে মূর্তি পূজা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য খুব সুন্দর একটি উপমা দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘হে মানবমন্ডলী! একটি উপমা দেওয়া হচ্ছে, মনোযোগসহকারে তা শ্রবণ কর; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো (মূর্তি) তারা তো কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এই উদ্দেশ্যে তারা সবাই একত্রিত হলেও পারবে না; এবং মাছি যদি (তাদের সামনে রাখা প্রসাদ থেকে) কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, এটাও তারা মাছির নিকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। পূজারী ও দেবতা কতই দুর্বল!’ (সূরা হজ্জ, আয়াত:৭৩)


আজ বিজ্ঞানের উন্নতির যুগে ভাবতেই অবাক লাগে যে, সুস্থ জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কীভাবে নিজের হাতের তৈরি মূর্তিকে নিজেই পূজা করে! পূজা যদি করতেই হয়, তাহলে মূর্তির জন্য উচিত ছিলো তার তৈরিকারীর পূজা করা। কিন্তু সে পূজা করবে কি, সেতো তার খাদ্যের উপর থেকে একটা মাছিও তাড়াতে পারে না। সে এতই দুর্বল যে, কুকুর তার উপর পেশাব করে দিলেও সে কুকুরকে তাড়াতে পারে না। নিজে দাঁড়াতেও পারে না, বাঁশের খুঁটির জোরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এই যখন মূর্তির অবস্থা তখন কোন যুক্তিতে মূর্তির চেয়ে কোটিগুণ শক্তিশালী মানুষ মূর্তিকে পূজা করতে পারে?


যাই হোক মূল আলোচনা আসা যাক। আজ থেকে প্রায় বিশ-বাইশ বছর আগে ভারতে হিন্দি ভাষায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে গবেষণালব্ধ একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি সমগ্র ভারতে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বইটির নাম “কল্কী অবতার” (যার অর্থ শেষ নবী)। বইটির লেখক একজন স্বনামধন্য হিন্দু পণ্ডিত, পণ্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায়। তাঁর জন্ম এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে। তিনি নিজেও হিন্দু। কিন্তু সত্য প্রকাশ করতে কার্পণ্য করেননি। এলাহাবাদ ইউনিভার্সিটির সংস্কৃত বিভাগের রিসার্চস্কলার, প্রখ্যাত গবেষক এবং স্বনামধন্য পণ্ডিত। ‘কল্কী অবতার’ শীর্ষক গ্রন্থে খ্যাতনামা আরও আটজন হিন্দু পণ্ডিতের সমর্থন রয়েছে। তাদের সত্যায়িত স্বাক্ষরও উক্ত গ্রন্থে রয়েছে।


পণ্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় বলেন, হিন্দু ধর্মের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে যে পথপ্রদর্শক মহাপুরুষ (বিশ্বনবী) এর আগমনবার্তা “কল্কী অবতার” নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে, তিনি মূলত আরবের মুহাম্মাদ সাহেবই। সেই প্রতিশ্রুত ‘কল্কী অবতার’ তিনি ব্যতীত আর অন্য কেউ নন। সুতরাং সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উচিত, আর অপেক্ষা না করে, মহাপুরুষ মুহাম্মাদ সাহেবকে “কল্কী অবতার” (বিশ্বনবী) হিসেবে মেনে নেয়া। (যার দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে- তাঁর উপর ঈমান আনা এবং তাঁর আনীত ইসলাম ধর্মকে গ্রহণ করা।)


বইয়ের লেখক বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় সুস্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, হিন্দু ধর্মের অনুসারীগণ “কল্কী অবতার” এর অপেক্ষা করছেন, কিন্তু এটা এমন একটি অপেক্ষা, কিয়ামত পর্যন্ত যার যবনিকাপাত ঘটবার নয়। কারণ, তারা যে পবিত্র সত্ত্বার, যে মহাপুরুষের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁর তো আত্মপ্রকাশ ঘটে গেছে আজ হতে প্রায় চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেই। তিনি এসে তাঁর মিশন বাস্তবায়িত করে লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন।


পণ্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় তাঁর দাবীর স্বপক্ষে হিন্দু ধর্মের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘বেদ’ ও ‘পুরাণ’ হতে দলীল পেশ করেছেন। তিনি লিখেছেন-


(ক) “পুরাণ” (হিন্দু ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ) এ লেখা আছে ‘ “কল্কী অবতার” এ জগতে ভগবানের (আল্লাহর) সর্বশেষ বার্তাবাহক (পয়গাম্বর) হবেন। তিনি সমগ্র জগত এবং বিশ্ব মানবতার পথপ্রদর্শক হিসেবে প্রেরিত হবেন।’ এ বর্ণনার পর পন্ডিতজী লিখেছেন, এটা একমাত্র মুহাম্মাদ সাহেবের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হচ্ছে। তিনিই সমগ্র জগত ও বিশ্ব মানবতার পথ প্রদর্শক।


(খ) হিন্দু ধর্ম-মতের একটি ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী “কল্কী অবতার” (বিশ্বনবী) একটি দ্বীপ সাদৃশ্য স্থানে জন্মগ্রহণ করবেন। হিন্দু ধর্মের কথিকা অনুযায়ী এ দ্বীপটি আরব দেশই, যা আরব উপদ্বীপ নামে খ্যাত।


(গ) হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থে উল্লেখ আছে, “কল্কী অবতারের” পিতার নাম “বিষ্ণু ভগত” এবং মাতার নাম হবে “সুমানিব”। সংস্কৃতে “বিষ্ণু” এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- “আল্লাহ” এবং “ভগত” এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- “বান্দা”। সুতরাং “বিষ্ণু ভগতের” আরবী রূপ হবে “আবদুল্লাহ্” যার অর্থ হচ্ছে- “আল্লাহর বান্দা”। “সুমানিব” এর অভিধানিক অর্থ হচ্ছে- আমন বা শান্তি- যার আরবী রূপ হচ্ছে “আমিনা”। হযরত মুহাম্মাদ সাহেবের পিতার নাম আবদুল্লাহ্ এবং মাতার নাম আমিনাই ছিল।


(ঘ) হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ আছে- “কল্কী অবতার” এর প্রধান খাদ্য হবে খেজুর ও জয়তুনের তেল এবং তিনি সেখানকার লোকজনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা আমানতদার ও সত্যবাদী হবেন। বলাবাহুল্য, এটাও মুহাম্মাদ সাহেবের উপর পরিপূর্ণরূপে প্রযোজ্য।


(ঙ) বেদগ্রন্থসমূহে লেখা আছে ‘কল্কী অবতার তাঁর এলাকার সর্বাপেক্ষা সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করবেন।’ এটাও পরিপূর্ণভাবে মুহাম্মাদ সাহেবের উপর প্রযোজ্য হয়।


(চ) ‘কল্কী অবতারকে ভগবান (আল্লাহ্) নিজস্ব বার্তাবাহক (ফেরেশতা) এর মাধ্যমে গুহার ভেতর শিক্ষা প্রদান করবেন।’ এটাও মুহাম্মাদ সাহেবের সাথেই খাটে। কারণ, হযরত মুহাম্মাদ সাহেবকে জিবরাইল ফেরেশতার মাধ্যমে হেরা গুহায় শিক্ষা দান করা হয়েছে।


(ছ) ভগবান (আল্লাহ্) এর পক্ষ হতে ‘কল্কী অবতারকে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া প্রদান করা হবে- যার উপর সওয়ার হয়েই সমগ্র জগত এবং সপ্তম আকাশ পরিভ্রমণ করবেন।’ হযরত মুহাম্মাদ সাহেবের “বোরাকে” বসে মি‘রাজ গমনের দিকে উপরের বক্তব্যে সুস্পষ্ট ইংগিত রয়েছে।


(জ) ‘কল্কী অবতারকে ভগবান (আল্লাহ) আসমানী সাহায্য দানে ধন্য করবেন।’ বদর ও উহুদের যুদ্ধে মুহাম্মাদ সাহেবকে ফেরেশতার দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, যা ছিল আসমানী সাহায্য।


(ঝ) সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হচ্ছে- ‘কল্কী অবতার চান্দ্র মাসের ১২ তারিখ জন্মগ্রহণ করবেন বলে হিন্দু ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।’ হযরত মুহাম্মাদ সাহেব চান্দ্র মাসের ১২ তারিখেই জন্ম গ্রহণ করেছেন।


(ঞ) ‘কল্কী অবতার ঘোড় সওয়ার ও তলোয়ার চালনায় হবেন সুদক্ষ।’ এ দলিলটি উল্লেখ করার পর পন্ডিতজী যা লিখেছেন- তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেন- বাস্তব সত্য হচ্ছে- ঐশীগ্রন্থ কুরআনে বর্ণিত, মুহাম্মাদ সাহেবই সেই “কল্কী অবতার” (বিশ্বনবী) যার আলোচনা আমাদের (হিন্দু) ধর্মগ্রন্থসমূহে বিদ্যমান রয়েছে।


উপর্যুক্ত দলীল ছাড়া আরো বহু সংখ্যক দলীল দ্বারা তিনি প্রমাণ করার প্রয়াস পেয়েছেন যে, হিন্দু ধর্মের ধর্মগ্রন্থসমূহে “কল্কী অবতার” (মহাপুরুষ) হিসেবে যার আগমনের কথা উল্লেখ রয়েছে, তিনি আরবের “মুহাম্মাদ সাহেব” ব্যতীত অন্য আর কেউ নন। সুতরাং যারা আমাদের পবিত্র গ্রন্থসমূহের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী “কল্কী অবতার” এর অপেক্ষা করছেন, তাঁদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করা উচিত। (“সাপ্তাহিক আল-জমিয়ত” দিল্লী, ষষ্ঠ বর্ষ, ৩৫ তম সংখ্যা ২৭শে আগষ্ট, ১৯৯৩ ইং এর সৌজন্যে।)


সারকথা, পণ্ডিত বেদ প্রকাশ সাহেবের কথা দ্বারা একথা স্পষ্ট বুঝা গেল যে, হিন্দু ভাইয়েরা যদি আসলেই হিন্দু হয়ে থাকে এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ মেনে থাকে, তাহলে তাদের জন্য জরুরী হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাওয়া। হিন্দু ভাইদের এ কথা জেনে রাখা উচিত যে, আল-কুরআনে সব মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্যকোনো ধর্ম পালন করে, তা কখনো তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ৮৫)


তাই জ্ঞানী হিন্দু ভাই-বোনদের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা যদি পরকালের অশেষ-অসীম জীবনে শান্তি চান, যদি নরক থেকে বাঁচতে চান এবং স্বর্গে যেতে চান, তাহলে আপনাদের ধর্ম গ্রন্থে যে ‘কল্কী অবতারের’ কথা বলা হয়েছে (যিনি মূলত ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে মানুন এবং তাঁর আনীত ধর্ম ‘ইসলাম’ গ্রহণ করে ইহকাল ও পরকালের সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করুন। আমীন।

Friday, March 24, 2023

কাদিয়ানি মতবাদ

 কাদিয়ানি মতবাদ


এই দলের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ১৮৩৯/৪০ খ্রিস্টাব্দ পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা নিজ এলাকাতেই লাভ করেন। লেখা-পড়া সমাপ্ত করে পাঞ্জাবের এক অফিসে কেরানির চাকুরী গ্রহণ করেন। পূর্ব হতেই তার পরিবার ইংরেজদের তল্পীবাহক হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। গোলাম আহমাদ প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে প্রকাশ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজদের প্রকাশ্য দালালী ও নিজেকে মূলহাক, (যার অন্তরে দৈব বাণী অবতীর্ণ হয়) মুহাদ্দাস (আল্লাহ যার সাথে অন্তরে অন্তরে কথা বলেন), প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ, নিজেকে প্রথমে নবী এবং পরিশেষে ‘আমিই সর্বশেষ নবী’ ইত্যাদি অসংখ্য জঘন্য ভ্রান্ত আকীদার দাবী করে বসলে তার আসল চেহারা ফাঁস হয়ে যায় এবং সমস্ত হক্কানী আলেম উলামা তাকে মুরতাদ ফাতাওয়া দেন।


তার কিছু ভ্রান্ত আকীদা ও তার খন্ডন নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ


(১) আল্লাহ সম্পর্কে তার আকিদাঃ

মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী লিখেছেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি আমিই আল্লাহ’। (আয়েনায়ে কামালাতে মির্জা পৃ.৫৬৪,৫৬৫, কাদিয়ানী মাযহাব পৃ.৩২৮)


অথচ কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক, তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না। (সূরা বাকারা.২৫৫)

 

সুতরাং ঘুমের মধ্যে আল্লাহ হওয়ার স্বপ্ন দেখাটা তার মিথ্যুক হওয়ারই প্রমাণ বহন করে। মির্জা কাদিয়ানীর বইতে আছে ‘আল্লাহ তাকে বলেছেন শুন!  হে আমার ছেলে’। (গোলাম আল বুশরা ১/৪৯, ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩০৮)


অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। (সূরা ইখলাসঃ ৩) আরও দেখুন সূরা নিসাঃ১৭১, সূরা ইউনুসঃ৬৮)


হাদীসে কুদসীতে আছেঃ- আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘বনী আদম আমাকে মিথ্যারোপ করেছে, অথচ তার এরূপ করার কোনো অধিকার নেই এবং সে আমাকে গালি দিয়েছে, অথচ তার এরূপ করার কোনো অধিকার নেই। আর আমাকে মিথ্যারোপ করাটা এভাবে যে, সে বলে তিনি আমাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে কিছুতেই পুনরুত্থান করতে পারবেন না। আর আমাকে গালি দেওয়াটা এভাবে যে, সে বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন অথচ আমি অমুখাপেক্ষী, আমার সন্তান নেই এবং আমি কারও সন্তান নই এবং আমার কোনো সমকক্ষ নেই। (বুখারী হাদীস নং ৪৯৭৪, নাসাঈ হাদীস নং ২০৭৮)


(২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তার আকীদাঃ 

মির্জা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজ বইতে লিখেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী নন, বরং গোলাম আহমাদ সর্বশেষ নবী। (হাকীকাতুন নবুয়াত পৃ.৮২, তিরইয়াকুল কুলূব পৃ.৩৭৯, আদইয়ানে বাতেলা আওর সিরাতে মুতাকীম পৃ.১৩২)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কারো পিতা নন বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী, আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ’। সূরা আহযাবঃ ৪০


এক হাদীসে এসেছে, শীঘ্রই আমার উম্মতের মাঝে ৩০ জন মিথ্যুকের আবির্ভাব ঘটবে, তারা প্রত্যেকেই অমূলক দাবি করবে যে, সে আল্লাহর নবী, অথচ আমিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী, আমার পরে কোনো নবী নেই। (আবূ দাউদ ২/২২৮, তিরমিযী ২/৪৫, বুখারী হাদীস নং ৩৫৩৫, মুসলিম হাদীস নং ২২৮৬)


সে আরো লিখেছে, ‘গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক মর্যাদাবান’ (হাকীকুতুন নাবুয়াত পৃ.২৭২, আরবাঈন পৃ.৩০৮, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩২, ইসলামী আকীদা পৃ. ৩০৮)


অথচ কুরআনে এসেছে, ‘সমস্ত নবীদের থেকে আল্লাহ তা‘আলা এ অঙ্গীকার নিয়েছেন যে, তোমরা যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানা পাও তাহলে তোমরা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে’ (আল ইমরানঃ ৮১)


এই আয়াত দ্বারা বুঝা গেল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল নবীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ আর গোলাম আহমাদ তো নবী নয় এমনকি একজন সাধারণ মুসলমানও নয় অতএব তার মর্যাদা একজন মুমিন থেকেও বহুগুন নিচে, তাহলে তার মর্যাদা নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বেশি হয় কীভাবে?


আর কুরআনে বিশের অধিক জায়গায় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু মির্জা সাহেবের দাবি হলো এসব জায়গায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নয় বরং তাকে সম্বোধন করা হয়েছে। (দাফেউল বালা পৃ.১৩, ইজাযে আহমাদীঃ ১১/২৯১)


এমন মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, ‘তোমরা আল্লাহর সম্বন্ধে মিথ্যা বলতে ও তার নির্দেশ সম্বন্ধে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে, সে জন্য আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে (সূরা আনআমঃ৯৩)


কুরআন শরীফে নবীজীকে সম্বোধন করাটা মির্জা গোলাম আহমাদ নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে কতবড় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে!


(৩) ঈসা আ. ও অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে তার আকিদাঃ 

গোলাম আহমাদের বইতে আছে, ঈসা আ. এর তিনটি ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। (ইজাযে আহমাদী পৃ.১৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী আর কে হতে পারে? (সূরা নিসাঃ ৮৭) আর নবীগণ যা কিছু বলেন আল্লাহর হুকুমেই বলেন। অতএব নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী কখনো মিথ্যা হতে পারে না। সুতরাং কাদিয়ানীর ঈসা আ. এর তিনটি ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা হওয়ার দাবি করা পরোক্ষভাবে একথারই দাবি করা যে, আল্লাহই মিথ্যা বলেছেন (না‘উযুবিল্লাহ)


কাদিয়ানীর বইতে আছে, হয়রত ঈসা আ. মৃত্যু বরণ করেছেন, তিনি কিয়ামাতের পূর্বে আগমন করবেন না। (ইযালায়ে কুলাঁ ২/৩১১, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৪)


অথচ কুরআনে এসেছে ‘কাফিররা বলে থাকেঃ আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি, অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, কিন্তু তাদের বিভ্রম হয়েছিল। তারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এ সম্বন্ধে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করে নাই বরং আল্লাহ তাকে আসমানে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আল্লাহ যবরদস্ত শক্তিমান ও হিকমাতওয়ালা’। (সূরা নিসাঃ১৫৭)


হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অচিরেই তোমাদের মধ্যে মারইয়াম তনয় ঈসা আ. আসবে ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ রূপে.... (বুখারী হাদীস নং ৩৪৪৮)


কাদিয়ানীর বইতে আছে, ‘মির্জা সাহেব বনী ইসরাইলের নবীদের চেয়ে উত্তম’ (দাফেউল বালা পৃ.২০)


অথচ সর্ব সম্মত আকীদা হলঃ কোন মুমিন চাই সে যত বড় বুযূর্গ হোক না কেন কোনো নবীর চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হতে পারে না। (শরহে আকায়েদ পৃ.১৬১) তাহলে মির্জা সাহেব যিনি সাধারণ মুমিনের সমান নয়, তিনি কীভাবে বনী ইসরাঈলের নবীদের ঊর্ধ্বে মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারেন? 


(৪) ফেরেশতা সম্পর্কে আকীদাঃ

মির্জার বইতে আছে ‘ফেরেশতা বলতে কিছু নেই’ (তাওযীহে মারাম পৃ. ২৯, আদইয়ানে বাতেলা পৃ. ১৩৩) অথচ কুরআনে এসেছে ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, নিশ্চয় তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণও..... (আল ইমরানঃ১৮, সূরা বাকারা.৩০,১৬১, সূরা নিসাঃ৯৭) ঈমানে মুফাস্সালের মধ্যে দ্বিতীয় নাম্বারে ফেরেশতাদের উপর ঈমান আনার ঘোষণা করা হয়েছে। তাছাড়া চারজন বড় বড় ফেরেশতার নাম কার অজানা? সুতরাং একমাত্র বেঈমান ব্যতীত অন্য কেউই ফেরেশতাদেরকে অস্বীকার করতে পারে না।


কাদিয়ানীর বইতে আছে ‘জিহাদের হুকুম রহিত হয়ে গেছে।’ (হাশিয়ায়ে আরবাঈন পৃ.১৫৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩) 


অথচ কুরআনে এসেছে ‘তোমরা তাদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে জিহাদ করতে থাকো যতক্ষণ না ফিৎনা (কুফুরী কর্মকান্ড) দূরীভূত না হয়..’ (সূরা আনফালঃ৩৯, আরো দেখুন, সূরা আন কাবূতঃ ৬৯, হুজুরাতঃ১৫, ফুরকানঃ৫২)


(৫) হাশর সম্বন্ধে কাদিয়ানীর বিশ্বাসঃ 

মির্জা বলেন, ‘মৃত্যুর পর হাশরের ময়দানে কেউ একত্র হবে না। বরং সরাসরি জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (ইযালায়ে আহকামে কুলাঁ পৃ.১৪৪, আদইয়ানে বাতেলা পৃ.১৩৩) 


অথচ আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো যেদিন তাদের সকলকে একত্র করবো। মুশরিকদের বলবো, যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে তারা কোথায়? (সূরা আনআমঃ ২২, আরো দেখুন, কাহাফঃ৪৭, ফাতিহা আয়াতঃ ৩, এছাড়া বহু হাদীসে হাশরের ময়দানের আলোচনা আছে যেমন বুখারী শরীফ ১ম খন্ড বাবুস সুজূদ)


মির্জার আরো কিছু ভ্রান্ত আকিদাঃ

১. মির্জার বইতে আছে, ‘যে ব্যক্তি মির্জার নবুওয়াত মানে না সে জাহান্নামী কাফের’ (রবয়ীন পৃ.৪. আদইয়ানে বাতেলা পৃ. ১৩২) অথচ সমগ্র দুনিয়ার উলামায়ে কেরামের ফাতাওয়া হলো যে, যে ব্যক্তি মির্জাকে নবী মানবে সে কাফের।


২. মির্জা নিজে মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছেন। (আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম পৃ. ৪২৩) (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ ৩২৬) অথচ সে ব্যক্তি হেদায়াত ও ঈমান বঞ্চিত এক বদ নসীব ও হাজারো মানুষকে গোমরাহ করণেওয়ালা।


৩. তারা উপরন্তু ২০ পারার মত কুরআন নাযিল হওয়ার দাবী করেছে। (হাকীকাতুল ওহী পৃ.৩৯১/ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ৩২৭) অথচ নবী বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া কারো উপর আসমানী ওহী নাযিল হতে পারে না, হ্যাঁ, ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক হয়তো তার উপর কোন হুকুম হয়েছিল সেটাকে তিনি ওহী মনে করেছেন। 


৪. তিনি নিজেকে হিন্দুদের শ্রী কৃষ্ণ অবতার হওয়ার দাবী করেছেন। (কাদিয়ানী মাযহাব পৃ.৪৩২/ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদঃ৩২৮) নাঊজুবিল্লাহ, এর দ্বারা তার কাফির হওয়া স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।


৫. তিনি নিজেকে যুলকারনাঈন হওয়ার হাস্যকর দাবি করেছেন। (বারাহীনে আহমদিয়া পৃ.৯৭/ ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩২৯) অথচ কুরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন বহু পূর্বে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে ইন্তিকাল করেছেন। এছাড়াও তার আরও অসংখ্য ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে। 


উল্লেখ্য যে, তিনি মিথ্যা নবী না হলে বেইজ্জতির মৃত্যু কামনা করতেন না এবং সেটি তার জীবনে বাস্তবায়িতও হতো না। এটাও তার মিথ্যুক হওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ। এ ছাড়া মুহাম্মাদী বেগম সহ বিভিন্ন ব্যাপারে তিনি অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যার সবগুলি পরবর্তীতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ সত্য নবীদের কোন একটা ওয়াদা অঙ্গিকারও মিথ্যা প্রমাণিত হয় নাই। 


তার এসকল ভ্রান্ত আকীদার পরিপ্রেক্ষিতে সর্ব প্রথম ১৮৮৯ খৃ. লুধিয়ানার আলেমগণ তাকে কাফের বলে ফাতওয়া দেন। এর পর একে একে দারুল উলুম দেওবন্দ হতে ১৯৭৪ সালে, রাবেতা আলমে ইসলামীর সম্মেলনে ১৪৪টি মুসলিম রাষ্ট্রের সংগঠনের পথ হতে তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে সর্বসম্মতভাবে কাফের ঘোষণা করা হয়। এবং ১৯৮৮ সালে ও. আই. সি. এর উদ্যোগে সকল মুসলিম দেশের ধর্ম মন্ত্রীদের এক সম্মেলনে তাকে ও তার অনুসারীদেরকে কাফের ঘোষণা করার লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। সেমতে প্রায় সকল মুসলিম দেশেই তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। (ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ পৃ.৩৩২)

কবীরা গুনাহসমূহ

 কবীরা গুনাহসমূহ


গুনাহে কবীরা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না এবং একটি গুনাহই জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট, নিম্নে কিছু কবীরা গুনাহের তালিকা দেওয়া হল। যথা-


(১) শিরক করা।


(২) মা-বাপকে কষ্ট দেওয়া।


(৩) আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।


(৪) যিনা ব্যভিচার করা।


(৫) চুরি করা।


(৬) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।


(৭) মিথ্যা অপবাদ লাগানো।


(৮) মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।


(৯) না হক যাদু করা।


(১০) অঙ্গীকার ভঙ্গ করা।


(১১) আমানতের খেয়ানত করা।


(১২) গীবত করা।


(১৩) বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ, অধীনস্থদেরকে মালিকের বিরুদ্ধে উস্কানী দেয়া।


(১৪) নেশাযুক্ত জিনিষ পান করা।


(১৫) অবৈধ যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা।


(১৬) জুয়া খেলা ও লটারী ধরা।


(১৭) সূদ খাওয়া।


(১৮) ঘুষ খাওয়া।


(১৯) জোর-জুলুম করে অর্থ-সম্পদ লুটে নেয়া।


(২০) অনাথ এতিম, বিধবার মাল খাওয়া। 


(২১) আল্লাহর ঘর যিয়ারতকারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করা।


(২২) মিথ্যা কসম খাওয়া।


(২৩) কোন মুসলমানকে গালি দেয়া।


(২৪) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা। 


(২৫) ধোঁকা দেয়া।


(২৬) অহংকার করা।


(২৭) বাদ্য বাজনা সহ নাচ-গান করা।


(২৮) ডাকাতি করা, লুন্ঠন করা।


(২৯)  স্বামীর নাফরমানী করা।


(৩০) জায়গা-জমির সীমানা নষ্ট করা।


(৩১) শ্রমিকের মজুরী কম দেয়া।


(৩২) মাপে কম দেয়া।


(৩৩) দ্রব্য-সামগ্রীতে ভেজাল মিশ্রিত করা। 


(৩৪) খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়া।


(৩৫) স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে শর্তের সাথে হীলা করা।


(৩৬) নিজের অধীনস্থ মহিলাদিগকে পরপুরুষের সাথে অবাধ মেলা-মেশার সুযোগ দেয়া।


(৩৭) ঘোড় দৌড় বা রেস খেলা।


(৩৮) সিনেমা-টিভি ইত্যাদি দেখা।


(৩৯) পেশাব করে পানি না নেয়া বা পবিত্রতা অর্জন না করা।


(৪০) চোগলখুরী ও কূটনামী করা।


(৪১) গণকের কাছে যাওয়া।


(৪২) মানুষ বা জীবের ফটো তোলা, ঘরে রাখা বা টাঙ্গানো। উল্লেখ যে আজকাল অনেকে মনে করে যে, ক্যামেরা দ্বারা তোলা ছবি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি অতি মারাত্মক ভুল, কেননা হাদীস শরীফের বর্ণনা মতে কাপড়ে অংকিত ছবির কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তির ব্যাপারেও ধমকি এসেছে। দেখুন: বুখারী শরীফ হা: নং ৫৯৬১। আর জানা কথা যে কাপড়ে অংকিত ছবি ও ক্যামেরার দ্বারা তোলা ছবির মধ্যে পার্থক্য করার কোন কারণ নেই। অনুরূপভাবে ভিডিওতে রেকর্ড করা ছবিও যেহেতু ছবির সকল উদ্দেশ্য খুব ভালভাবে পুরা করে কাজেই ভিডিওর ছবিও নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত।


(৪৩) পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটি বা যে কোন ধরনের অলংকার পরা।


(৪৪) পুরুষের জন্য রেশমী কাপড় পরা।


(৪৫) মেয়ে লোকের জন্য শরীরের রূপ ও গঠন প্রকাশ পায় এমন পোশাক পরিধান করা।


(৪৬) ঝগড়া-বিবাদে মিথ্যা মোকাদ্দমা দায়ের করা।


(৪৭) মৃত ব্যক্তির জায়িয ওসীয়ত পালন না করা।


(৪৮) কোন মুসলমানকে ধোঁকা দেওয়া।


(৪৯) গুপ্তচরবৃত্তি করা অর্থাৎ, মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রের গোপন কথা অন্য সমাজ বা রাষ্ট্রের নিকট প্রকাশ করা।


(৫০) নর হয়ে নারীর এবং নারী হয়ে নরের বেশ-ভূষা অবলম্বন করা।


(৫১) টাকা বা নোট জাল করা।


(৫২) অন্তর এত শক্ত করা যে, গরীব দুঃখীর সীমাহীন কষ্ট দেখেও  দরদ না লাগা।


(৫৩) ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারায় ত্রুটি করা এবং দেশের জরুরী খাদ্য বা হাতিয়ার পাচার করা।


(৫৪) রাস্তা-ঘাটে বা ছায়াদার ফলদার বৃক্ষের নীচে পায়খানা করা।


(৫৫) ঘরবাড়ী, আঙ্গিনা, আসবাবপত্র, থালা-বাসন, কাপড়-চোপর নোংরা রাখা এবং ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনায় মন-মস্তিস্ক গান্ধা করে রাখা। 


(৫৬) হায়িয বা নিফাস অবস্থায় স্ত্রী সম্ভোগ করা।


(৫৭) যাকাত না দেয়া।


(৫৮) ইচ্ছা করে কোন নামায কাযা করা। 


(৫৯) রমযানের কোন রোযা ইচ্ছা করে ভেঙ্গে ফেলা বা না রাখা।


(৬০) জনগণের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও জীবিকা নির্বাহোপযোগী খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করা।


(৬১) ষাঁড় দ্বারা গাভীর এবং পাঠার দ্বারা ছাগীর পাল দিতে না দেওয়া।


(৬২) পাড়া-প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া।


(৬৩) সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করা। 


(৬৪) পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া।


(৬৫) জনগণ যাকে চায়না সে ব্যক্তির বাদশাহী বা নেতৃত্ব করা।


(৬৬) নিজের দোষ না দেখে পরের দোষ দেখা।


(৬৭) বদগুমানী বা কারো প্রতি খারাপ ধারনা রাখা।


(৬৮) ইলমে দীনকে তুচ্ছ মনে করে অর্জন না করা।


(৬৯) বিনা জরুরতে জনসম্মুখে সতর খোলা।


(৭০) মেহমানের খাতিরে আদর যত্ন ও অভ্যর্থনা না করা।


(৭১) ছেলেদের সঙ্গে কুকর্ম বা সমকাম করা। 


(৭২) আমানতের যোগ্য সৎকর্মীকে নিযুক্ত বা নির্বাচন না করে স্বজন প্রীতি করা।


(৭৩) নিজে ইচ্ছা করে বা দাবী করে জোরপূর্বক কোন পদ গ্রহণ করা।


(৭৪) ইসলামী রাষ্ট্রের বিদ্রোহী হওয়া।


(৭৫) নিজের পরিবার-পরিজনের খবর না নিয়ে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কষ্টে ফেলা। 


(৭৬) খতনা না করা।


(৭৭) অসৎ কাজ দেখে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বাধা না দেয়া।


(৭৮)অন্যায়ের সমর্থন করা।


(৭৯) আত্মহত্যা করা।


(৮০) ফরয গোসলে অনর্থক দেরী করা। 


(৮১) পেশাব-পায়খানা করে ঢিলা-কুলুখ বা পানি ব্যবহার না করা।


(৮২) নাভীর নীচের পশম, বগলের পশম, নখ বর্ধিত করে রাখা।


(৮৩) উস্তাদ ও পীরের সঙ্গে বেয়াদবী করা, এবং আলেম ও হাফেজদের অমর্যাদা করা। 


(৮৪) শুকরের গোশত খাওয়া।


(৮৫) হস্ত মৈথুন করা।


(৮৬)তামাশা দেখার জন্য ষাঁড়, কবুতর বা মোরগ ইত্যাদি লড়াইয়ের আয়োজন করা। 


(৮৭) কুরআন শরীফ পড়ে ভুলে যাওয়া। 


(৮৮) কোন জীবন্ত ও জানদার জীবকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ,মারা।


(৮৯) আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।


(৯০) আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া। 


(৯১) হালাল জানোয়ারকে গাইরুল্লাহর নামে যবেহ করা বা ভিন্ন উপায়ে মেরে খাওয়া। 


(৯২) অপচয় বা অপব্যয় করা।


(৯৩) বখিলী কানজূসী করা।


(৯৪) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আইন প্রবর্তন না করা।


(৯৫) ইসলামের নিয়মানুসারে আইন-কানুন জারী হওয়া সত্ত্বেও কোন আইন অমান্য করা বা রাষ্ট্রদ্রোহিতা করা।


(৯৬) ডাকাতি, লুটতরাজ, পকেটমারী করা। 


(৯৭) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সহিত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে কাউকে ডাকা, যেমন- হে জোলা, বান্দীর বাচ্চা ইত্যাদি।


(৯৮) বিনা অনুমতিতে কারো বাড়ীতে বা ঘরে বা খাস কামরায় প্রবেশ করা।


(৯৯) মানুষের কষ্ট হয় এমন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে খুশী হওয়া।


(১০০) সুরত-শেকেলের কারণে বা গরীব হওয়ার কারণে কোন মুসলমানকে টিটকারী করা।


(১০১) বিদআত কাজ করা বা জারি করা। 


(১০২) দুনিয়া হাসিলের জন্য ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া।


(১০৩) ইলম গোপন করা।


(১০৪) জাল হাদীস বর্ণনা করা।


(১০৫) গুনাহের কাজে মান্নত করা।


(১০৬) প্রজাদের অধিকার খর্ব করা, জনগণের হক আদায় না  করা।


(১০৭) অবৈধ ট্যাক্স উসূল করা।


(১০৮) বিনা ঠেকায় ঋণ করে ঋণী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা।


(১০৯) দুমুখো স্বভাব ইখতিয়ার করা।


(১১০) মহিলাদের খুশবু লাগিয়ে বাহিরে বের হওয়া। 


(১১১) বিজাতিদের অনুকরণ করা।


(১১২) গোঁফ বড় করে রাখা।


(১১৩) অন্যের চুল ব্যবহার করা। 


(১১৪) যথার্থ কারণ ছাড়া কাউকে অভিশাপ দেয়া। 


(১১৫) অহেতুক কুকুর প্রতিপালন করা।


(১১৬) মাতম ও শোক প্রকাশ করা।


(১১৭) একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা না করা।


(১১৮) সাহাবায়ে কেরামকে মন্দ বলা বা সমালোচনা করা।


(১১৯) হক্কানী উলামায়ে কেরামের সাথে বিদ্বেষভাব পোষণ করা।



Thursday, March 23, 2023

শী‘আ মতবাদ

 শী‘আ মতবাদ


শী‘আদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

ইয়ামানের সানআ শহরের জনৈক ইয়াহুদী আলেম ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। যে উসমান রা. এর খেলাফত কালে ইসলাম গ্রহণ করে। আসলে ইসলাম গ্রহণ দ্বারা তার উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা। সে মদীনায় কিছু দিন উক্ত উদ্দেশ্যে কাজ করে। এরপর বসরা ও সিরিয়ায় যায়। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে না পেরে অবশেষে মিসর গমন করে। এবং সেখানে তার কিছু সাহায্যকারী পেয়ে যায়। সে এবং তার সহযোগীরাই তৃতীয় খলীফা উসমানকে রা. হজ্জের মওসুমে মদীনা খালী অবস্থায় শহীদ করে এবং তাদের তলোয়ারের মুখেই উম্মতের ঐক্যের স্বার্থে আলী রা. কে বাধ্য হয়ে খেলাফতের মসনদে বসতে হয় এবং জঙ্গে সিফ্ফীনে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা এবং তার অনেক ভক্ত ষড়যন্ত্রমূলক আলী রা. এর দলভুক্ত ছিল। তাদেরকে “শী‘আনে আলী” সংক্ষেপে শী‘আ বলা হয়। এক সময় উক্ত আব্দুল্লাহ দলের মধ্যে বিভিন্ন ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচার করতে থাকে, এরপর সে তার মিশনে আরো মজবুতভাবে কাজ করতে থাকে।


শী‘আরা প্রথমতঃ তিনটি দলে বিভক্তঃ

১. তাফযীলিয়া শী‘আ

২. সাবাইয়্যা শী‘আ 

৩. চরমপন্থি শী‘আ।


তাফযীলিয়া শী‘আঃ 

এরা আলীকে রা. আবুবকর রা. ও উমর রা. এর উপর ফযীলত দিয়ে থাকেন। 


সবাইয়্যা শী‘আঃ 

এরা হযরত সালমান ফারসি রা., আবূ জর গিফারী রা., মেকদাদ ও আম্মার ইবনে ইয়াছির প্রমুখ অল্প সংখ্যক সাহাবী ব্যতীত অন্য সকল সাহাবী থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে, এমনকি তাঁদেরকে মুনাফিক এবং কাফের পর্যন্ত বলে। (কিতাবুর রওযা)


চরমপন্থি শী‘আঃ 

এদের ২৪ টি উপদল ছিল, তাদের মধ্যে একটির নাম ইমামিয়া বা ইসনা আশারা গ্রুপ, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় দল বা ভয়ংকর দল।


ইমামিয়াদের দলের মধ্যে প্রসিদ্ধ ৩টি গ্রুপ 

১. ইছনা আশারিয়া,

২.ইসমাঈলিয়া, 

৩. যায়দিয়া।


ইছনা আশারিয়া বা ইমামিয়াদের আক্বিদা হলো যেঃ- আল্লাহ তা‘আলা যেমন তার বান্দাদের হেদায়েতের জন্য নবী-রাসূলদের মনোনীত করেছেন ঠিক তেমনি নবীর ওয়াফাতের পর থেকে বান্দার পথ প্রদর্শনের জন্য ইমাম মনোনীত করা শুরু করেছেন, আর তাদের আক্বীদা অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত বার জন ইমাম আসবে।


ইমাম সম্বন্ধে শী‘আদের আক্বীদা-বিশ্বাসঃ


১. ইমামগণ নবীর ন্যায় আল্লাহর পথ থেকে মনোনীত হন। (উসুলে কাফী ২/২৫-২৬)


২. শী‘আদের বক্তব্য হল কুরআন মাজীদে ইমামত ও ইমামগণের বর্ণনা ছিল যা পরবর্তিতে মুছে ফেলা হয়েছে। (উসুলে কাফীঃ-২/২৭৭)


৩. ইমামগণ পয়গম্বরগণের মতই আল্লাহর প্রমাণ। (উসুলে কাফীঃ-১/২৫০)


৪. ইমামগন পয়গাম্বরগণের মতই নিষ্পাপ। (উসুলে কাফীঃ-১/২৮৭)


৫. ইমামগণের মর্তবা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সমান এবং অন্য সকল পয়গম্বরের ঊর্ধ্বে। (উসুলে কাফীঃ-৩/১০)


৬. ইমামগণ যা ইচ্ছা অথবা হারাম ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখেন। (উসূলে কাফী ২/৩২৬)


৭. ইমাম ব্যতীত দুনিয়া কায়েম থাকতে পারে না। (প্রাগুক্ত পৃ ২৫৩)

 

৮. ইমামগণের অতীত ও ভবিষ্যৎ জ্ঞান অর্জিত থাকে। (উসূলে কাফী ১/৩৬৬)


৯. ইমামগণের জন্য কুরআন হাদীস ছাড়াও জ্ঞানের অন্যান্য অত্যাশ্চর্য সূত্র রয়েছে। (উসূলে কাফী ১/৩৪৫-৪৬)


১০. ইমামগণের এমন জ্ঞানে আছে যা ফেরেশতা ও নবীগণেরও নেই। (উসূলে কাফী ১/৩৭০)


১১. প্রত্যেক জুম‘আর রাত্রিতে ইমামগণের মেরাজ হয়। তারা আরশ পর্যন্ত পৌঁছেন। (উসূলে কাফী ১/৩৭২)


১২. ইমামগণের প্রতি, প্রতি বছরের শবে কদরে আল্লাহর পথ থেকে এক কিতাব নাযিল হয় যা ফেরেশতা ও রূহ নিয়ে আসেন। (উসূলে কাফী ১/৩৬৬)


১৩. ইমামগণ তদের মৃত্যুর সময়ও জানেন এবং তাদের মৃত্যু তাদের ইচ্ছাধীন থাকে। (উসূলে কাফী ১/৩৮৭)


১৪. ইমামগণের সামনেও মানুষের দিবা রাত্রির আমল পেশ করা হয়। (উসূলে কাফী ৩১৯)


১৫. ইমামগণ কিয়ামতের দিন সমসাময়িক লোকদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন। (উসূলে কাফী ১/২৮০)


১৬. ইমামগণের আনুগত্য করা ফরয । (উসূলে কাফী ১/২৬৩)


১৭. ইমামগণের ইমামত নবুওয়াত ও রিসালাত স্বীকার করা এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা নাজাতের জন্য শর্ত। (উসূলে কাফী ১/২৫৫)


১৮.ইমামত, ইমামগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও তা প্রচারের আদেশ সকল পয়গম্বর ও আসমানী গ্রন্থের মাধ্যমে এসেছে। (উসূলে কাফী ২/৩১৯)


১৯. ইমামগণ দুনিয়া ও আখিরাতের মালিক এবং তার যাকে ইচ্ছা দান করেন ও যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। (উসূলে কাফী ২/১৬৯)


২০. ইমামগণ মানুষকে জান্নাতে ও দোযখে প্রেরণকারী। (উসূলে কাফী ১/২৮০)


২১. যে ইমামগণকে না মানে সে কাফের।


২২. জান্নাতে যাওয়া না যাওয়া ইমামগণের মান্যকরা না করার উপর নির্ভরশীল।


সাহাবা বিদ্বেষ সংক্রান্ত আকীদাঃ


১. তারা তিন খলীফা তথা আবূ বকর, উমর ও উসমান রাযি. কে কাফের ও জাহান্নামী মনে করে। (উসূলে কাফী ২/২৮৯)


২. শিয়াদের কথিত ব্যাখ্যা অনুসারে যারা আলী রাযি. এর ইমামত মানে না তাদেরকে তারা জাহান্নামী মনে করে। এভাবে তারা সব সাহাবিকে এবং সমস্ত মুসলমানকে কাফের সাব্যস্ত করেছে। (উসূলে কাফী ২/৩৯৪)


৩. তাদের ধারণা হলো প্রতিশ্রুত মাহদি আত্মপ্রকাশ করার পর হযরত আয়িশা রাযি. কে জীবিত করে যিনার শাস্তি দিবেন। (ইরানী ইনকিলাব)


৪. তাদের ধারণা হলো সাহাবায়ে কেরাম প্রায় সকলেই বিশেষত খলীফাত্রয় কাফের, ধর্মত্যাগী, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ঘাতক, জাহান্নামী অভিশপ্ত । (উসূলে কাফী ২/৩৯৮)


৫. তাদের ধারণা হলো অন্তর্হিত ইমাম যখন আত্মপ্রকাশ করবেন তখন আবূ বকর ও উমর রাযি.কে কবর থেকে বের করে হাজারবার শুলিতে চড়াবেন। (হকুকুল ইয়াকিন)


৬. তাদের ধারণা হলো হযরত আয়িশা ও হাফসা রাযি. মুনাফিক ছিলেন। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিষ দিয়ে খতম করেছেন। (হায়াতুল কূবূল পৃ. ৮৭০)


কুরআন বিকৃতির আকীদাঃ

১. তাদের ধারণা হলো পাক পঞ্চতন তথা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী,ফাতেমা,হাসান,হুসাইন রাযি. এবং তাদের সকল ইমামদের নাম কুরআনে ছিলো। এগুলো কুরআন থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। (উসূলে কাফী ২/২৮৩)


২. কুরআনের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ যেখানে হযরত আলীর খেলাফতের বয়ান আছে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। (ইরানী ইনকিলাব)

 

৩. তাদের মনগড়া দাবি হলো কুরআন বিকৃতি সম্বন্ধে নাকি হযরত আলী রাযি.ও বলে গেছেন। (অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।)


৪. তাদের ধারণা হলো আসল কুরআন ১২তম ইমামের নিকট রয়েছে যিনি মেঘের মধ্যে আছেন। কিয়ামতের পূর্বে আসল কুরআন নিয়ে তিনি অবতরণ করবেন। (উসূলে কাফী ১/৩৩২)


উপর্যুক্ত ইমাম, কুরআন ও সাহাবাদের সম্পর্কে শীয়াদের ভ্রান্ত আকীদার মধ্য থেকে প্রত্যেকটি আকীদা এমন যে , কেউ যদি এর মধ্য থেকে একটি আকীদাও দিলে স্থান দেয় তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া তাদের আরো এমন অনেক ফাসেদ আকীদা রয়েছে যা ঈমানের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই সকল মুসলিমদের উচিত এ ধরণের বাতিল আকীদা থেকে বেঁচে থাকা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।

Wednesday, March 22, 2023

জিন সম্বন্ধে আক্বীদা

 জিন সম্বন্ধে আক্বীদা


আরেক প্রকার জীবকে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করে আমাদের চক্ষুর অগোচর করে রেখেছেন। তাদেরকে জিন বলে। তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ সবরকম হয়। তারা নারী-পুরুষও বটে এবং তাদের সন্তানাদিও হয়। তাদের খানা-পিনার প্রয়োজনও হয়। জিন মানুষের ওপর আছর করতে পারে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও বড় দুষ্ট হচ্ছে ‘ইবলিশ শয়তান’। হাশরের ময়দানে জিনদেরও হিসাব-নিকাশ হবে। এ কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ আছে। সুতরাং তা বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।

Tuesday, March 21, 2023

পুরো নামাযের ৬ মাসায়িল

 পুরো নামাযের ৬ মাসায়িল


১. নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তরে নামাযের খেয়াল রাখা, আর সহজ পদ্ধতি হল সব কিছু খেয়াল করে পড়া। মুখস্থের জোরে না পড়া। (মন অন্য কোন দিকে চলে গেলে, স্মরণ হওয়া মাত্রই ফিরিয়ে আনা)


২. মাঝের তাকবীরগুলো পূর্ববর্তী রুকন থেকে আরম্ভ করে অপর রুকনে পৌঁছে শেষ করা। (কিন্তু তাকবীর এক আলিফ থেকে লম্বা করা যাবে না।) এর জন্য কোন মুহাক্বিক আলিম থেকে নামাযের বাস্তব প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরী।


৩. এক রুকন থেকে অন্য রুকনে যেতে বিলম্ব না করা। 


৪. পঠিত সূরা/ দু‘আ সমূহের প্রতি অন্তরে খেয়াল করা।


৫. হাই আসলে যথাসম্ভব মুখ বন্ধ রাখতে চেষ্টা করা।


৬. হাঁচি আসলে তা যথাসম্ভব দমিয়ে রাখা।


এ পর্যন্ত ‘পুরুষদের নামাযের ১০০ মাসায়িল’ পূর্ণ হল।

Saturday, March 18, 2023

নবী-রাসূল আ. এর ওপর ঈমান

 ৪. নবী-রাসূল আ. এর ওপর ঈমান


নবী-রাসূল আ.- এর ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে বাছাই করে বহুসংখ্যক পয়গাম্বর অর্থাৎ নবী-রাসূল আ. মনোনীত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যাতে করে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে দুনিয়াতে কামিয়াব হতে পারে এবং পরকালে দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করে বেহেশত হাসিল করতে পারে।


পয়গাম্বরগণ সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ। তাঁরা কোন প্রকার পাপ করেন না। নবীগণ মানুষ। তাঁরা খোদা নন। খোদার পুত্র নন। খোদার রূপান্তর (অবতার) নন। বরং তাঁরা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি। নবীগণ আল্লাহর বাণী হুবহু পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সঠিক সংখ্যা কুরআন শরীফ বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন নি। কাজেই নিশ্চিতভাবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। এ কথা যদি ও প্রসিদ্ধ যে, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন কিন্তু কোন সহীহ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত নয়। শুধু এতটুকু বলা যায় যে, বহুসংখ্যক পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন।


আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তাঁদের দ্বারা অনেক অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঐ সব ঘটনাকে মু‘জিযা বলে। নবীগণের মু‘জিযাসমূহ বিশ্বাস করাও ঈমানের অঙ্গ। 


পয়গাম্বরগণের আ. মধ্যে সর্বপ্রথম দুনিয়াতে আগমন করেছেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ অথচ সর্বপ্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পরে অন্য কেউ দুনিয়াতে নবী বা রাসূল হিসেবে আগমন করেননি এবং করবেনও না। হযরত ঈসা আ. কিয়ামতের পূর্বে যদিও আগমন করবেন, কিন্তু তিনি তো পূর্বেই নবী ছিলেন। নতুন নবী হিসেবে তিনি আগমন করবেন না। আমদের নবী খাতামুন নাবিয়্যীন বা শেষনবী। তাঁর পরে নতুনভাবে আর কোন নবী আসবেন না; তারপর আসল বা ছায়া কোনরূপ নবীই নাই। বরং তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের নবীর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে যত জিন বা ইনসান ছিল, আছে বা সৃষ্টি হবে, সকলের জন্যেই তিনি নবী। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র তাঁরই হুকুম এবং তরীকা সকলের মুক্তি ও নাজাতের জন্যে অদ্বিতীয় পথ হিসেবে বহাল থাকবে। অন্য কোন ধর্ম, তরীকা বা ইজম এর অনুসরণ কাউকে আল্লাহর দরবারে কামিয়াব করতে পারবে না। আমাদের নবীর পরে অন্য কেউ নবী হয়েছেন বা নবী হবেন বলে বিশ্বাস করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনিভাবে কেউ নতুন নবী হওয়ার দাবি করলে বা তার অনুসরণ করলে, সেও কাফির বলে গণ্য হবে। 


হযরত ঈসা আ. এখনও আসমানে জীবিত আছেন। তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন, ইহা সত্য। কুরআন হাদীসে প্রমাণিত। তাই ইহা বিশ্বাস করতে হবে, অন্যথায় ঈমান থাকবে না, তিনি কিয়ামতের পূর্বে আসমান থেকে জমিনে অবতরণ করবেন। আমাদের নবীর অনুসারী হয়ে। হযরত ঈসা আ.- এর ব্যাপারে পুত্রবাদ ও কর্তৃত্বদের বিশ্বাস কুফরী। 


দুনিয়াতে যত পয়গাম্বর এসেছেন, সকলেই আমাদের মাননীয় ও ভক্তির পাত্র। তাঁরা সকলেই আল্লাহর হুকুম প্রচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে পরস্পরে কোন বিরোধ ছিল না। সকলেই পরস্পর ভাই ভাই ছিলেন। হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্য হিকমতের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হুকুম জারি করেছেন। আর এই সামান্য বিভিন্নতাও শুধু আমলের ব্যাপারে, ঈমান আকীদার ব্যাপারে নয়। আকীদাসমূহ আদি হতে অন্ত পর্যন্ত চিরকাল এক। আক্বীদার মধ্যে কোন প্রকার রদবদল বা পরিবর্তন হয়নি, আর হবেও না কখনো। পয়গাম্বরগণ সকলেই কামিল ছিলেন। কেও নাকিস বা অসম্পূর্ণ ছিলেন না। অবশ্য তাঁদের মধ্যে কারো মর্যাদা ছিল বেশি, কারো মর্যাদা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সকল নবী নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন। এজন্য নবীগণকে ‘হায়াতুন্নবী’ বলা হয়।


উল্লেখ্য যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্তবা সর্বাপেক্ষা বেশি। তাই বলে নবীগণের মধ্যে তুলনা করে একজনকে বড় এবং একজনকে হেয় বা ছোট করে দেখানো বা বর্ণনা করা নিষেধ। 


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর সমস্ত কথা মেনে নেয়া জরুরী। তাঁর একটি কথাও অবিশ্বাস করলে বা সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলে কিংবা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলে বা দোষ বের করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।


ঈমানের জন্যে আমাদের নবীর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করাও জরুরী। যে মি‘রাজ বিশ্বাস করে না, সে বেদ্বীন। তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে। 


সাহাবীর পরিচিতিঃ

যেসব মুসলমান আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বচক্ষে দেখেছেন, এবং ঈমানের হালতে ইনতিকাল করেছেন, তাঁদেরকে ‘সাহাবী’ বলা হয়। সাহাবীগণের অনেক ফযীলতের কথা কুরআন ও হাদীসে এসেছে। সমস্ত সাহাবী রা. গণের সাথে মুহাব্বত রাখা ও তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। 


তাঁদের কাউকে মন্দ বলা আমদের জন্যে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সাহাবীগণ যদিও মাসুম বা নিষ্পাপ নন, কিন্তু তাঁরা মাগফূর বা ক্ষমাপ্রাপ্ত। সুতরাং, পরবর্তী লোকদের জন্য তাঁদের সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই। তাঁরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে। 


তাঁরা সকলেই আদিল অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী এবং সত্যের মাপকাঠি। তাঁদের দোষ চর্চা করা হারাম এবং ঈমান বিধ্বংসী কাজ। ‘আকীদাতুত তাহাবী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘সাহাবীগণের প্রতি মুহাব্বত-ভক্তি রাখা দ্বীনদারী ও ঈমানদারী এবং দ্বীনের ও ঈমানের পূর্ণতা। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা বা তাদের বিরূপ সমালোচনা করা কুফরী, মুনাফেকী এবং শরী‘আতের সীমার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।


সমস্ত সাহাবীগণের মাঝে চারজন সর্বপ্রধান। তাঁদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা., তিনিই প্রথম খলীফা বরহক এবং তিনি সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রা., তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণী রা. এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা.। সকল সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার চির সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়েছেন। বিশেষ করে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। এই দশজনকে আশারায়ে মুবাশশারা (সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন) বলা হয়। তাঁরা হলেন -১. হযরত আবু বকর রা., ২. হযরত ওমর ফারুক রা., ৩। হযরত উসমান রা. ৪. হযরত আলী রা., ৫. হযরত তালহা রা., ৬. হযরত যুবায়ের রা. ৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা., ৮. হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াককাস রা., ৯. হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রা., ১০. হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা.


নবী আ. এর বিবি ও আওলাদ সম্বন্ধে আক্বীদাঃ

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবি ও আহল-আওলাদগণের রা. বিশেষভাবে তাযীম করা উম্মতের ওপর ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আওলাদগণের মধ্যে হযরত ফাতিমা রা. এবং বিবিগণের মধ্যে হযরত খাদীজা ও আয়িশা রা. এর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। 


ওলী-বুযুর্গদের সম্বন্ধে আক্বীদাঃ

ওলী-বুযুর্গদের কারামত সত্য। কিন্তু ওলী-বুযুর্গগণ যত বড়ই হোন না কেন, তাঁরা নবী রাসূল আ. তো দূরের কথা, একজন সাধারণ সাহাবীর সমতুল্যও হতে পারেন না। অবশ্য হক্কানী পীর-মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরাম যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিশ এবং দ্বীনের ধারক বাহক সুতরাং, তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখা, তাঁদের সঙ্গ লাভ করা এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ না রাখা সকল মুসলমানের জন্য জরুরী। দ্বীনের খাদিম হিসেবে তাঁদেরকে হেয় করা, কিংবা গালি দেয়া কুফরী কাজ। মানুষ যতই খোদার পেয়ারা হোক, হুঁশ-জ্ঞান থাকতে শরী‘আতের হুকুম-আহকামের পাবন্দী অবশ্যই তাকে করতে হবে। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত কখনো মাফ হবে না। তেমনিভাবে মদ খাওয়া, গান-বাদ্য করা, পরস্ত্রী দর্শন বা স্পর্শ করা কখনো তার জন্যে জায়িয হবে না। হারাম বস্তুসমূহ হারামই থাকবে এবং হারাম কাজ করে বা ফরয বন্দেগী ছেড়ে দিয়ে কেউ কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারে না 

ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান

 ২. ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান


ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো এ কথা বিশ্বাস করা যে, মহান আল্লাহ এক ধরণের মাখলুককে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করে তাদেরকে আমাদের চক্ষুর অন্তরালে রেখেছেন। তাদেরকে ফেরেশতা বলে। তাঁরা পুরুষ বা মহিলা কোনটিই নন। বরং তাঁরা ভিন্ন ধরনের মাখলুক। অনেক ধরণের কাজ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সোপর্দ করে রেখেছেন। যেমন: নবীগণের আ. নিকট অহী আনয়ন করা, মেঘ পরিচালনা করা, রুহু কবয করা, নেকী-বদী লিখে রাখা ইত্যাদি। তাঁরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। তাঁরা বিন্দুমাত্র আল্লাহর নাফরমানী করেন না। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় ও ফরমাবরদার বান্দা। তাঁদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা যথা: হযরত জিবরাঈল আ. হযরত মীকাঈল আ., হযরত ইসরাফীল আ. ও হযরত আযরাঈল আ. অতিপ্রসিদ্ধ । 


জিন সম্বন্ধে আক্বীদা:

আরেক প্রকার জীবকে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করে আমাদের চক্ষুর অগোচর করে রেখেছেন। তাদেরকে জিন বলে। তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ সবরকম হয়। তারা নারী-পুরুষও বটে এবং তাদের সন্তানাদিও হয়। তাদের খানা-পিনার প্রয়োজনও হয়। জিন মানুষের ওপর আছর করতে পারে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও বড় দুষ্ট হচ্ছে ‘ইবলিশ শয়তান’। হাশরের ময়দানে জিনদেরও হিসাব-নিকাশ হবে। এ কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ আছে। সুতরাং তা বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।



Thursday, March 16, 2023

বেচা-কেনা ও লেন-দেন সংক্রান্ত কিছু হাদীস

 বেচা-কেনা ও লেন-দেন


বেচা-কেনা ও লেন-দেন সংক্রান্ত কিছু হাদীস

হারাম সম্পদ দিয়ে গঠিত শরীর দোযখে যাবে

হযরত জাবের রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’ব ইবনে উজরা রাযি. কে বলেছেন, হে কা‘ব ইবনে উজরা! যে দেহের গোশত হারাম মালে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। হারাম মালে গঠিত দেহের জন্য দোযখই সমীচীন।

যে সুদ খায় এবং যে সুদ দেয় উভয়েই গুনাহগার

হযরত জাবের রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন যে সুদ খায় তার প্রতি, যে সুদ দেয় তার প্রতি, যে সুদের দলীল লেখে তার প্রতি, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের প্রতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাও বলেছেন, গুনাহগার সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারে সকলেই সমান।

একই বস্তু পরিমাপে কম-বেশি করা যাবে না

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, একদা হযরত বেলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বরনী (এক প্রকার খুরমা) নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এই প্রকার খুরমা কোত্থেকে পেলে? তিনি বললেন, আমার কাছে নিম্নমানের খুরমা ছিলো। আমি দুই সা’ (প্রায় আট সের) নিম্নমানের খুরমা এক সা’ (প্রায় চার সের) ভালো খুরমার বিনিময়ে বিক্রি করেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খাওয়ানোর জন্য। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। আহা! এ তো সুদী লেনদেন হয়ে গেল। এমনটি করো না। বরং তুমি এই মন্দ খুরমা পরিমাণে বেশি দিয়ে কম পরিমাণে উত্তম খুরমা লাভ করতে চাইলে মুদ্রার বিনিময়ে মন্দ খুরমা ভিন্নভাবে বিক্রি করবে অর্থাৎ সম্পূর্ণ পৃথক দু‘টি বেচা-কেনা করবে। এরপর সেই মুদ্রা দিয়ে উত্তম খুরমা কিনবে।

ঋণগ্রহীতার কোন সুযোগ-সুবিধা ঋণদাতা নিতে পারবে না

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি কোন ব্যক্তিকে ধার দেয়, এরপর ধারগ্রহীতা ধারদাতাকে কোন হাদিয়া বা উপহার দেয়, তবে তা গ্রহণ করবে না। অথবা যদি গ্রহীতা ধারদাতাকে যানবাহনের উপর বসাতে চায়, তবে তার উপর বসবে না। অবশ্য যদি ধার নেয়ার পূর্ব থেকে তাদের মধ্যে এরূপ আচরণ প্রচলিত থাকে, তবে তা স্বতন্ত্র কথা।

ফল গাছে থাকতে বিক্রি নিষেধ

হযরত ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযাবানার সূরতে ক্রয়-বিক্রয় থেকে নিষেধ করেছেন। মুযাবানা খেজুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, বাগানের গাছে খেজুর রয়েছে। অনুমান করা যে, বৃক্ষ থেকে ছিন্ন করে শুকালে এতে কী পরিমাণ খুরমা হবে? ঐ পরিমাণ খুরমা প্রদান করে তার বিনিময়ে বৃক্ষের খেজুর বৃক্ষে রেখে ক্রয় করা। মুযাবানা আঙ্গুরের মধ্যে এভাবে করা হয় যে, গাছে আঙ্গুর রয়েছে। অনুমান করা যে, শুকালে কী পরিমাণ কিশমিশ হতে পারে? সে মতে মেপে ঐ পরিমাণ কিশমিশের বিনিময়ে গাছের আঙ্গুর ক্রয় করা। আর শস্যের মধ্যে এভাবে হয় যে, ক্ষেতে শস্য আছে। অনুমান করা যে, এতে খাদ্য কী পরিমাণ আছে? মেপে সে পরিমাণে ঐ জাতীয় খাদ্য প্রদান করে ক্ষেতের শস্য ক্রয় করা। এসব হতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।

গাছের ফল খাওয়ার উপযোগী না হলে বিক্রি করা নিষেধ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের ফল উপযোগী হওয়ার আগে তা ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।

সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন খেজুর বিক্রি করতে যতক্ষণ না তাতে লাল বা হলুদ রং আসে এবং গম-যব ইত্যাদি শিষ জাতীয় বস্তু যতক্ষণ পূর্ণ পেকে সাদা রংধারী না হয়ে যায় অর্থাৎ কোন প্রকার দুর্যোগে বিনষ্ট হওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর বিক্রি করবে।

গাছের ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি নিষেধ

হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন ফল লাল হওয়ার আগে বিক্রি করতে। তিনি বলেছেন, ফল পাকার আগে বিক্রি করার পর আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট কোন দুর্যোগে যদি ফল বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে মুসলমান বিক্রেতা কিসের বিনিময়ে ক্রেতা থেকে টাকা আদায় করবে?

গাছের ফল অগ্রিম বিক্রি করা নিষেধ

হযরত জাবের রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েক বছরের জন্য অগ্রিম ফল বিক্রি করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং তিনি পরামর্শ দিয়েছেন আহরণের আগে যা বিনষ্ট হয় তার মূল্য কর্তন করতে।

অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ

হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন বাই‘য়ে হাসাত (কাঁকর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়) করা থেকে এবং বাই‘য়ে গারার (অনিশ্চিত বস্তুর ক্রয়-বিক্রয়) থেকে (যেমন পানির মধ্যে মাছ বিক্রি করা)।

যে বস্তু দখলে নেই তা বিক্রি করা নিষেধ

হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে নিষেধ করেছেন ঐ বস্তু বিক্রি করতে যা আমার দখলে বা মালিকানায় নেই।

ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি গোপন রেখে বিক্রি নিষেধ

হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা’ রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন ত্রুটিপূর্ণ বস্তুর ত্রুটি না জানিয়ে বিক্রি করবে, সে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার অসন্তুষ্টিতে নিমজ্জিত থাকবে এবং ফেরেশতাগণ তার প্রতি লা’নত এবং অভিশাপ দিবেন।

তিনটি উপায়ে উপার্জন ঘৃণিত

হযরত রাফে’ ইবনে খাদীজ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কুকুর বিক্রির মূল্য ঘৃণিত বস্তু, ব্যভিচারের বিনিময়ও অতি জঘন্য, রক্ত ব্যবসাও জঘন্য।

মদের বিষয়ে দশজনের প্রতি লা’নত

হযরত আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ সংশ্লিষ্ট দশজনের প্রতি লা’নত করেছেন। ১. যে মদ তৈরি করে, ২. যে মদ তৈরির ফরমায়েশ দেয়, ৩. যে মদ পান করে, ৪. যে মদ বহন করে, ৫. যার প্রতি মদ বহন করা হয়, ৬. যে মদ পান করায়, ৭. যে মদ বিক্রি করে, ৮. যে সেটার মূল্য ভোগ করে, ৯. যে মদ কেনে, ১০. যার জন্য মদ কেনা হয়।

ব্যবসার মধ্যে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি থাকলে মুক্তি লাভ হয়

হযরত হুযাইফা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের এক ব্যক্তির কাছে মালাকুল মউত রূহ কবজ করার জন্য উপস্থিত হলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি কোনো বিশেষ নেক আমল করেছ? সে বললো, আমার মনে নেই। বলা হলো, চিন্তা কর। সে বললো, এমন কোন কাজই মনে আসে না একটি কাজ ব্যতীত যে, দুনিয়ার জীবনে আমি আমার লোকদেরকে ক্রেতার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে নির্দেশ দিতাম। আমার ক্রেতা ধনী হলেও তাকে সময় দিতাম। আর যদি সে গরীব হত, তাকে আমার প্রাপ্য মাফ করে দিতাম। এই আমলের বদৌলতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে বেহেশত দান করেছেন।

কসম করে মাল বিক্রি করলে বরকত কমে যায়

হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অধিক কসম খাওয়ায় মালের কাটতি বাড়ে। তবে বরকত দূর হয়ে যায়।

আমানতদার ও সৎ ব্যবসায়ীগণ নবী ও সিদ্দীকগণের দলভুক্ত

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সত্যবাদী, আমানতদার, বিশ্বাসী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবেন।

Sunday, March 12, 2023

ইউসুফ আ. এর সাথে যুলাইখার বিবাহ

 ইউসুফ আ. এর সাথে যুলাইখার বিবাহ


কোনো কোনো তাফসীরবিদ লিখেছেন, এ সময়ই যুলাইখার স্বামী আযীযে মিসর কিতফীর মৃত্যু বরণ করেন এবং বাদশাহর উদ্যোগে ইউসুফ আ. এর সাথে যুলাইখার বিবাহ সম্পাদন করা হয়। 


তখন ইউসুফ আ. যুলাইখাকে বললেন, তুমি যা চেয়েছিলে, এটা কি তার চাইতে উত্তম নয়? যুলাইখা স্বীয় দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করলেন। 


আল্লাহ তা‘আলা সসম্মানে তাঁদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলেন এবং খুব সুখ-শান্তিতে তাঁদের দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত হয়। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, তাঁদের ঔরশে দুজন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। তাদের নাম ছিল ইফরায়ীম ও মানশা। 


কোনো কোনো রিওয়ায়েতে আছে, বিবাহের পর আল্লাহর তা‘আলা ইউসুফ আ. এর অন্তরে যুলাইখার প্রতি এত গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেন যে, যুলাইখার অন্তরে ততটুকু ইউসুফ আ.-এর প্রতি ছিল না। এমনকি একবার ইউসুফ আ. যুলাইখাকে অভিযোগের সুরে বললেন, এর কারণ কি যে, আগের ন্যায় আমাকে ভালোবাসো না? উত্তরে যুলাইখা বললেন, আপনার উসিলায় আমি আল্লাহ তা‘আলার ভালোবাসা অর্জন করেছি। এ ভালোবাসার সামনে অন্য সব সম্পর্ক ও ভাবনা ম্লান হয়ে গেছে। (তাফসীরে মাযহারী)  


তবে উল্লেখ্য যে, তাঁদের এ বিবাহের এসব ঘটনার স্বপক্ষে মজবুত কোনো হাদীস নেই। সুতরাং এর উপর ততটা ইয়াকীন করা যায় না

Saturday, March 11, 2023

ফেরাউন ও তার কওমের উপর আপতিত আযাব

 ফেরাউন ও তার কওমের উপর আপতিত আযাব


আল্লাহ তা‘আলা হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামকে নয়টি মুজিযা দান করেছিলেন। এগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ফেরাউনের সম্প্রদায়কে সতর্ক করে সত্য পথে আনা। এ সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, 


وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسٰى تِسْعَ اٰيَاتٍ...


অর্থঃ আমি মুসা ‘আলাইহিস সালামকে নয়টি প্রকাশ্য মুজিযা প্রদান করেছিলাম। (সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত: ১০১)


اية

 শব্দটি মুজিযার অর্থেও ব্যবহৃত হয়, আসমানি কিতাবের আয়াত বা আহকামে ইলাহীর অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এখানে উভয় অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে। বহু তাফসীরবিদ এই স্থলে اية -এর অর্থ মুজিযা নিয়েছেন।


‘নয়’ সংখ্যা উল্লেখ করা হলেও মুসা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুজিযার সংখ্যা আরো বেশি ছিল, কিন্তু এখানে নয়টি মুজিযার বিশেষ গুরুত্বের কারণে নয় সংখ্যাটি উল্লেখ করা হয়েছে।


হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উক্ত নয়টি মুজিযা এভাবে গণনা করেছেন, ১. মুসা ‘আলাইহিস সালামের লাঠি, যা যমিনে ফেললেই অজগর সাপ হয়ে যেত। ২. মুসা ‘আলাইহিস সালামের শুভ্র হাত, যা বগলের নিচ থেকে বের করতেই উজ্জ্বল হয়ে চমকাতে থাকতো। ৩. মুসা ‘আলাইহিস সালামের মুখে তোতলামি ছিল, যা অলৌকিকভাবে দূর করে দেওয়া হয়েছিল। ৪. বনী ইসরাইলকে নদী পার করানোর জন্য নদী বিভক্ত করে বারোটি রাস্তা করে দেওয়া হয়েছিল। ৫. ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের উপর পঙ্গপালের আযাব এসেছিল। ৬. তাদের প্রতি তুফানের আযাব প্রেরণ করা হয়েছিল। ৭. তাদের শরীরে উঁকুনের আযাব প্রেরণ করা হয়েছিল। ৮. ব্যাঙের আযাব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৯. তাদের উপর রক্তের আযাব প্রেরণ করা হয়েছিল।


এই নয়টি মুজিযার মধ্যে প্রথম দুটি অর্থাৎ লাঠি সাপ হওয়া এবং হাত জ্যোতির্ময় হওয়া ফেরাউনের দরবারে প্রকাশিত হয়। লাঠি সাপ হয়ে যাওয়ার মুজিযার মাধ্যমেই হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম যাদুকরদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। আর ৫নং থেকে ৯নং পর্যন্ত বর্ণিত পাঁচটি মুজিযা ফেরাউন ও তার কওমের উপর আযাব-গজব নাযিল সংক্রান্ত।


ফেরাউনের কওমের উপর দুর্ভিক্ষের আযাব


অবশ্য এই পাঁচটি আযাব ছাড়াও ফেরাউন ও তার কওমের উপর আরো আযাব অবতীর্ণ হয়েছে বলে বর্ণিত আছে। যেমন, ফেরাউন ও তার কওমের উপর দুর্ভিক্ষের আযাব নাযিল হওয়ার বিষয়েও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

 

وَلَقَدْ اَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِيْنَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ


অর্থঃ আমি পাকড়াও করেছিলাম ফেরাউনের অনুসারীদের দুর্ভিক্ষ ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে, যেন তারা হিদায়াত গ্রহণ করে। (সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ১৩০)


যখন ফেরাউনের সম্প্রদায়ের হঠকারিতা ও দুরাচরণের ফলে দুর্ভিক্ষের আগমন হয়েছিল, তখন তাদের ক্ষেতের ফসল ও বাগ-বাগিচার উৎপাদন চরমভাবে হ্রাস পায়। যার দরুন তারা অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তারা ঈমান আনার অঙ্গীকার করে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তিলাভের দু‘আ করায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মুসা ‘আলাইহিস সালামের দু‘আয় দুর্ভিক্ষ রহিত হয়ে গেলে, পুনরায় তারা অহংকার প্রদর্শন করে এবং ঈমান আনতে অস্বীকার করে। উপরন্তু তারা বলতে শুরু করে, এই দুর্ভিক্ষ মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গী-সাথীদের কুলক্ষণের দরুনই আপতিত হয়েছিল। আর এখন যে দুর্ভিক্ষ রহিত হয়ে গিয়েছে, তা হলো আমাদের সৎকর্মের স্বাভাবিক ফল। এমনটিই তো আমাদের প্রাপ্য।


তেমনিভাবে তারা যেকোনো ভালো কিছু পেলে তা নিজেদের কৃতিত্ব মনে করতে থাকে এবং মন্দ ও দুর্দশার সম্মুখীন হলে সেটা মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদের কারণে হয়েছে বলে চালিয়ে দিতে থাকে। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়টি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, 


فَاِذَا جَآءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوْا لَنَا هٰذِه وَاِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوْا بِمُوْسٰى وَمَنْ مَّعَهٗ اَلَا اِنَّمَا طَآئِرُهُمْ عِنْدَ اللّٰهِ وَلَكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ


অর্থঃ যখন ভালো দিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে, “আমাদের জন্যই তো এটা।” আর যদি কোন অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয়, তবে তার জন্য মুসা ‘আলাইহিস সালাম এবং তার সঙ্গীদের অলক্ষুণে মনে করে। শুনে রাখো, তাদের অলক্ষুণের কথা আল্লাহ তা‘আলারই জানা আছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ১৩১)


বহু প্রচেষ্টার পরও ফেরাউনসম্প্রদায় হিদায়াতের পথে না আসায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর একের পর এক নানান আযাব-গজব নাযিল করেন। এ সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, 


فَاَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوْفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ اٰيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ


অর্থঃ তখন আমি তাদের উপর পাঠালাম তুফান, পঙ্গপাল, উঁকুন, ব্যাঙ ও রক্ত বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। (সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৩)


এই আয়াতে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের উপর আপতিত পাঁচ রকমের আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব আযাব اٰيتٍ مُفَصَّلَاتٍ (বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক) বলার তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, এগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি আযাবই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অবস্থান করে। অতঃপর রহিত হয়ে যায়। এরপর কিছুসময় বিরতি দিয়ে পুনরায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় কিংবা তৎপরবর্তী আযাবগুলো পৃথক পৃথকভাবে আসে।


ইবনে মুনযির, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করেছেন, এগুলোর প্রতিটি আযাব ফেরাউনগোষ্ঠীর উপর সাতদিন করে স্থায়ী হয়। শনিবার শুরু হয়ে দ্বিতীয় শনিবারে রহিত হয়ে যেত এবং পরবর্তী আযাব আসা পর্যন্ত তিন সপ্তাহর অবকাশ দেওয়া হত।


ইমাম বাগাবী রহ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, প্রথমবার যখন ফেরাউনের কওমের উপর দুর্ভিক্ষের আযাব আপতিত হয় এবং হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের দু‘আয় তা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু তারা নিজেদের নাফরমানী থেকে বিরত হয় না। তখন হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম প্রার্থনা করেন, হে আমার পালনকর্তা, এরা এতই অহংকারী যে, দুর্ভিক্ষের আযাবে কোনরূপ প্রভাবিত হয়নি। তারা নিজেদের কৃত ঈমান আনার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে। সুতরাং তাদের উপর এমন কোন আযাব চাপিয়ে দিন, যা হবে তাদের জন্য বেদনাদায়ক ও আমাদের জাতির জন্য উপদেশ গ্রহণের উপায় এবং যা পরবর্তীদের জন্য হবে সংশোধনমূলক শিক্ষা। তখন আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে তাদের উপর তুফানের আযাব নাযিল করেন।


প্রখ্যাত মুফাসসিরগণের মতে, এখানে তুফান অর্থ পানির তুফান। অর্থাৎ জলোচ্ছ্বাস। তাতে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের সমস্ত ঘর-বাড়ি ও জমি-জমা জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায়। না থাকে কোথাও তাদের শোয়া-বসার জায়গা, না থাকে জমি চাষাবাদের কোন ব্যবস্থা।


আশ্চর্যের বিষয় ছিল, ফেরাউন গোত্রের সন্দেহ ছিল বনী ইসরাইলের ঘর-বাড়ি ও জমি-জমা জলোচ্ছাসে ডুবে গেছে অথচ বনী ইসরাইলের ঘর-বাড়ি ও জমি-জমা সবই ছিল শুকনো, স্বাভাবিক। সেগুলোর কোথাও জলোচ্ছ্বাসের কোন পানি ছিল না। কিন্তু ফেরাউন সম্প্রদায়ের জমি ছিল অথৈ পানির নিচে।


এই জলোচ্ছ্বাসে ভীত হয়ে ফেরাউনসম্প্রদায় মুসা ‘আলাইহিস সালামের নিকট আবেদন জানালো, আপনার পালনকর্তার দরবারে দু‘আ করুন, যাতে এই আযাব দূর হয়ে যায়। তা হলে আমরা ঈমান আনবো এবং বনী ইসরাইলকে মুক্ত করে দিবো। তখন হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম দু‘আ করলেন। তার দু‘আর ফলে জলোচ্ছ্বাসের তুফান রহিত হয়ে গিয়ে তাদের শস্য-ফসলক্ষেত্র আগের চেয়েও অধিক সুজলা-সুফলা হয়ে উঠলো।


তখন সেই নাফরমানরা বলতে শুরু করলো, আদতে এই তুফান কোন আযাব ছিল না। বরং আমাদের ফায়দার জন্যই তা এসেছিল। যার ফলে আমাদের শস্যভূমির উৎপাদন-ক্ষমতা বেড়ে গেছে। মুসা ‘আলাইহিস সালামের এতে কোন ভূমিকা নেই। সুতরাং আমরা ঈমান আনবো না। এসব কথা বলে তারা ঈমান আনার ব্যাপারে কৃত প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলো।


এমতাবস্থায় তারা মাসাধিকাল সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। মেহেরবান আল্লাহ তাদের চিন্তা-ভাবনার জন্য অবকাশ দান করেন। কিন্তু তাদের চৈতন্যের উদয় হলো না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর পঙ্গপালের আযাব নাযিল করলেন। এই পঙ্গপাল তাদের সমস্ত শস্য-ফসল ও বাগানের ফল-ফলাদি খেয়ে নিঃশেষ করে ফেললো। কোন কোন রেওয়ায়াতে এসেছে, কাঠের দরজা-জানালা, ছাদ প্রভৃতিসহ ঘরের ব্যবহার্য্য আসবাবপত্র পঙ্গপাল খেয়ে শেষ করে ফেলেছিল।




আযাব যেভাবে ফেরাউনের কওমকে ধ্বংস করলো


ক্রমাগত এতবার পরীক্ষা ও অবকাশ দানের পরেও যখন ফেরাউনের সম্প্রদায়ের মধ্যে বোধোদয়ের সৃষ্টি হয়নি, তখন তাদের উপর আবর্তিত হয় চূড়ান্ত ও সর্বশেষ আযাব এবং তাতে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। তা এভাবে আসে যে, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে মুসা ‘আলাইহিস সালামও তার সম্প্রদায় ফেরাউন ও তার জাতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেদেশ ছেড়ে রওয়ানা হন। তখন ফেরাউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের ঘর-বাড়ি, জমি-জমা ও আসবাবপত্র সবকিছু রেখে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও বনী ইসরাইলের অনুসরণের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।


এ সম্বন্ধে তাফসিরে রুহুল মাআনীতে বর্ণিত আছে, হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে রাতের সূচনাভাগে বনী ইসরাইলকে নিয়ে মিসর থেকে লোহিত সাগরের দিকে অর্থাৎ মিসরের পূর্বস্থ এলাকা শামদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান।


বনী ইসরাইলের সংখ্যা তখন ছয় লাখ তিন হাজার এবং অন্য রেওয়ায়েত অনুযায়ী ছয় লাখ সত্তর হাজার ছিল। এগুলো ইসরাইলী রেওয়ায়েত বিধায় অতিরঞ্জিত হতে পারে। তবে কুরআনে কারিম ও হাদীস থেকে এতটুকু তথ্য প্রমাণিত যে, তাদের বারটি গোত্র ছিল এবং প্রত্যেক গোত্রের জনসংখ্যা ছিল বিপুল।


বস্তুত হযরত ইউসুফ ‘আলাইহিস সালামের আমলে বনী ইসরাইল যখন মিসরে আগমন করে, তখন তারা বারো ভাই ছিল। সেই বারো ভাইয়ের বারো গোত্রের এতো বিপুলসংখ্যক লোক মিসর থেকে বের হলো, তাদের সংখ্যা ছয় লাখেরও অধিক বর্ণনা করা হয়।


ফেরাউন তাদের মিসর ত্যাগের সংবাদ সম্বন্ধে অবগত হয়ে নিজ সৈন্যবাহিনীকে একত্র করলো এবং মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার সম্প্রদায়কে পাকড়াও করার জন্য ধাওয়া করলো। ফেরাউনের সাথে সত্তর হাজার কৃষ্ণবর্ণের ঘোড়া ছিল এবং অগ্রবর্তী বাহিনীতে সাত লাখ সওয়ার ছিল।


পিছন দিকে ফেরাউন ও তার সেনাবহর এবং সামনে লোহিতসাগর দেখে বনী ইসরাইল ঘাবড়ে গেল। তাই তারা মুসা ‘আলাইহিস সালামকে বললো,


 اِنَّا لَمُدْرَكُونَ “


“আমরা ধরা পড়ে গেলাম”। (সূরা শুআরা, আয়াত: ৬১)


তখন মুসা ‘আলাইহিস সালাম তাদের সান্তনা দিয়ে বললেন,


 اِنَّ مَعِىَ رَبِّىْ سَيَهْدِيْنِ ○ “


“আমার সাথে আমার পালনকর্তা আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন”। (সূরা শুআরা, আয়াত: ৬২)


এরপর মুসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে সমুদ্রে লাঠি দিয়ে আঘাত করলেন। ফলে সঙ্গে সঙ্গে তাতে বারোটি রাস্তা নির্মিত হয়ে গেল এবং সাগরের পানি প্রাচীরের মতো দণ্ডায়মান হয়ে থাকলো। তখন বনী ইসরাইলের বারোটি গোত্র এসব সড়ক দিয়ে সমুদ্র পার হয়ে গেল। কুরআনুল কারীমে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, 


فَاَوْحَیْنَاۤ اِلٰی مُوْسٰۤی اَنِ اضْرِبْ بِّعَصَاکَ الْبَحْرَؕ فَانْفَلَقَ فَکَانَ كُلُّ فِرْقٍ کَالطَّوْدِ الْعَظِیْمِ ○ وَ اَزْلَفْنَا ثَمَّ الْاٰخَرِیْنَ ○ وَ اَنْجَیْنَا مُوْسٰی وَ مَنْ مَّعَهٗۤ اَجْمَعِیْنَ○


অর্থঃ অতঃপর আমি মুসা ‘আলাইহিস সালামকে আদেশ করলাম, আপনি নিজের লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করুন। ফলে সঙ্গে সঙ্গে তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ্য হয়ে গেল। আর সেখানে অপর দলকে (ফেরাউনের বাহিনী) পৌঁছে দিলাম। আর আমি হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। (সূরা শুআরা, আয়াত: ৬৩-৬৫)


ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনী সমুদ্রের কাছে পৌঁছে এই বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। সমুদ্রের বুকে এই রাস্তা কীভাবে তৈরি হলো? কিন্তু এর পরেও ফেরাউন তার সৈনিকদের সগর্বে বললো, এগুলো আমার প্রতাপের লীলা। এর কারণে সমুদ্রের স্রোত বন্ধ হয়ে রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এ কথা বলে সে সামনে অগ্রসর হয়ে নিজের ঘোড়া সমুদ্রের পথে চালিয়ে দিলো এবং গোটা সৈন্যবাহিনীকে তার পেছনে পেছনে আসার জন্য আদেশ দিলো।


যখন ফেরাউন তার সৈন্যবাহিনীসহ সমুদ্রপথের মাঝখানে এসে গেল এবং একটি লোকও তীরে বাকি রইলো না। অপরদিকে বনী ইসরাইল সমুদ্রের অপর তীরে পৌঁছে গেল। তখন আল্লাহ তা‘আলা সমুদ্রকে রাস্তা বিলীন করে আগের মতো প্রবাহিত হওয়ার হুকুম দিলেন। সমুদ্রের সকল অংশ পরস্পর মিলে গেল। ফলে ফেরাউন ও তার দলবল লোহিতসাগরের মধ্যে পড়ে অথৈ পানি ও স্রোতের গ্রাসে পরিণত হলো। এ সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, 


فَاَغْرَقْنَاهُمْ فِى الْيَمِّ بِاَنَّهُمْ كَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا عَنْهَا غَافِلِيْنَ○ وَاَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُسْتَضْعَفُوْنَ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِىْ بَارَكْنَا فِيْهَا


অর্থঃ তখন আমি তাদের সাগরের মধ্যে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছিল আমার নিদর্শনসমূহ এবং এ সম্পর্কে তারা উদাসীন ছিল। আর আমি উত্তরাধিকারী করে দিলাম সেই কওমকে, যাদের দুর্বল মনে করা হতো সেই যমিনের পূর্ব ও পশ্চিমের অংশসমূহের, যাতে আমি বরকত স্থাপন করেছিলাম। (সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ১৩৬-১৩৭)


অতঃপর ফেরাউন যখন সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে আরম্ভ করলো, তখন সে বলে উঠলো, আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর উপর, যার উপর বনী ইসরাইল ঈমান এনেছে। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, 


حَتّٰۤی اِذَاۤ اَدْرَکَهُ الْغَرَقُ ۙ قَالَ اٰمَنْتُ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا الَّذِیْۤ اٰمَنَتْ بِهٖ بَنُوْۤا اِسْرَآءِیْلَ وَ اَنَا مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ○


অর্থঃ এমনকি যখন সে (ফেরাউন) নিমজ্জিত থেকে লাগলো, তখন বললো, আমি ঈমান আনলাম, কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া, যার প্রতি ঈমান এনেছে বনী ইসরাইল। আমি তারই অনুগতদের দলে। (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৯০)


তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরাউনের ঈমান আনার ঘোষণার উত্তরে বলেন, 


آٰلْـٰٔنَ وَقَدْ عَصَیْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِیْنَ


অর্থঃ এতক্ষণে ঈমান এনেছ? অথচ এ যাবত নাফরমানী করে চলেছো এবং ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত থেকেছ! (কিন্তু এখন যে ঈমান আনার এবং ইসলাম গ্রহণের সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে।) (সূরা ইউনুস, আয়াত: ৯১)


এতে প্রমাণিত হয়, ঠিক মৃত্যুকালে যখন প্রাণ হলোকুমে চলে আসে, সেসময় ঈমান আনা শরী‘আত অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টির আরো বিস্তারিত বিশ্লেষণ সেই হাদীসের দিয়েও প্রতীয়মান হয়, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর ঊর্ধ্বশ্বাস আরম্ভ হয়ে যায়। (তিরমিযী্