দীনের দাওয়াত নিয়ে ফেরাউনের দরবারে মুসা ‘আলাইহিস সালাম
নবুওয়্যাত প্রাপ্তির পর মুসা ‘আলাইহিস সালাম ও তার বড় ভাই হযরত হারুন ‘আলাইহিস সালাম, আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে মিসর সম্রাট ফেরাউনকে ঈমান ও দীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হন।
এই মর্মে আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তাদের দাওয়াতের মূলনীতি শিখিয়ে দিলেন,
اذْهَبَا ۤاِلٰى فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰى○ فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهٗ يَتَذَكَّرُ اَوْ يَخْشٰى ○
অর্থঃ আপনারা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যান। সে খুব অহংকারী হয়ে গিয়েছে। অতঃপর আপনারা তাকে নম্র কথা বলুন। হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে। (সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৪৪)
এখানে বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষ যতই অবাধ্য এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস ও গলদ চিন্তাধারার অধিকারী হোক না কেন, তার সাথেও সংস্কার ও পথপ্রদর্শনের কর্তব্য পালনকারীদের হিতাকাঙ্ক্ষীর ভঙ্গিতে নম্রভাবে বিনয়ের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে। এরই ফলে সে কিছু চিন্তাভাবনা করতে পারে এবং তার অন্তরে আল্লাহ তা‘আলার ভয় সৃষ্টি হতে পারে।
তখন হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম হারুন ‘আলাইহিস সালামকে নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ মোতাবেক ফেরাউনের কাছে গেলেন এবং তাকে ঈমানের দাওয়াত দিলেন আর বনী ইসরাইল সম্প্রদায়কে হিদায়াত করে দীনের পথে আনার উদ্দেশ্যে তাদের অন্যায় দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে তার সাথে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানালেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
وَقَالَ مُوْسٰى يَا فِرْعَوْنُ اِنِّىْ رَسُوْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ ○ حَقِيْقٌ عَلٰى ۤاَنْ لَا اَقُوْلَ عَلَى اللّٰهِ اِلَّا الْحَقَّ قَدْ جِئْتُكُمْ بِبَيِّنَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ فَاَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىۤ اِسْرَائِٓيْلَ ○
অর্থঃ হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম বললেন, হে ফেরাউন, আমি বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রাসূল। আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে যে সত্য এসেছে, তার ব্যতিক্রম কিছু না বলার ব্যাপারে আমি সুদৃঢ়। আমি আপনার নিকট প্রতিপালকের স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সুতরাং আপনি বনী ইসরাইলদের আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। (সূরা আ‘রাফ, আয়াত: ১০৪-১০৫)
ফেরাউন হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের দাওয়াতের জবাবে বললো,
قَالَ فَمَن رَّبُّكُمَا يَا مُوْسٰى
অর্থঃ সে বললো, তা হলে কে তোমাদের রব হে মুসা?
এর উত্তরে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম বললেন,
قَالَ رَبُّنَا الَّذِىْ اَعْطَىٰ كُلَّ شَىْءٍ خَلْقَهٗ ثُمَّ هَدٰى
অর্থঃ তিনি বললেন, আমাদের রব সেই মহান সত্তা, যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার উপযুক্ত গঠন দান করেছেন। অতঃপর তাকে পথপ্রদর্শন করেছেন। (সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৪৯-৫০)
এই আয়াত দিয়ে বুঝা যায়, মুসা ‘আলাইহিস সালাম ফেরাউনকে সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘আলার ঐ মহান গুণের কথা বলেছেন, যা সমগ্র সৃষ্টজগতে পরিব্যাপ্ত এবং কেউ এই গুণের কাজটি নিজে অথবা অন্য কোনো মানব করেছে বলে দাবি করতে পারে না।
ফলে ফেরাউন এই কথার কোন জবাব দিতে পারলো না। সে লা-জবাব হয়ে আবোল-তাবোল প্রশ্ন তুলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেল এবং শেষে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামকে এমন একটি প্রশ্ন করলো, যার সত্যিকার জবাব সাধারণ মানুষ শুনতে পেলে, মুসা ‘আলাইহিস সালামের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে এবং তাদের শ্রদ্ধা ভক্তিও তাঁর প্রতি নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশ্নটি হলো,
قَالَ فَمَا بَالُ الْقُرُوْنِ الْاُوْلٰى
অর্থঃ সে (ফেরাউন) বললো, তা হলে পূর্ববর্তী কালের লোকদের অবস্থা কি? (সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৫১)
অর্থাৎ অতীত যুগে যেসব ব্যক্তি ও জাতি প্রতিমাপূজা করতো, তোমার মতে তারা কিরূপ? তাদের শেষ পরিণাম কী হয়েছে?
ফেরাউনের উদ্দেশ্য ছিল, এর উত্তরে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালাম অবশ্যই বলবেন, তারা সবাই গোমরাহ ও জাহান্নামী। তখন ফেরাউন একথা বলার সুযোগ পাবে, তুমি তো গোটা বিশ্বকেই বেওকুফ, গোমরাহ ও জাহান্নামী মনে করো। এ কথা শুনে জনসাধারণের, মুসা ‘আলাইহিস সালামের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি নষ্ট হয়ে যাবে এবং কুধারণা পোষণ করবে। ফলে ফেরাউনের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু মুসা ‘আলাইহিস সালাম বিচক্ষনতার সাথে এই প্রশ্নের এমন সুন্দর জবাব দিলেন, যার ফলে ফেরাউনের পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেল। নিচের এই আয়াতে হযরত মুসা ‘আলাইহিস সালামের সেই জবাবের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে,
قَالَ عِلْمُهَا عِنْدَ رَبِّىْ فِىْ كِتَابٍ لَا يَضِلُّ رَبِّىْ وَلَا يَنْسٰى
অর্থঃ মুসা ‘আলাইহিস সালাম বললেন, তাদের খবর আমার পালনকর্তার কাছে আমলনামায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং বিস্মৃত হন না। (সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ৫২)
No comments:
Post a Comment