ইঞ্জিল বা বাইবেলের সাথে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ঘাতকতা
ক) হযরত ঈসা আ. খৃষ্টানদেরকে ইঞ্জিল কিতাবের ধারক বাহক বানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। তারা তাদের হক্কানী উলামাগণের তোয়াক্কা না করে সেই ওযীরে আজম সেন্টপলের অনুসারী হয়ে প্রকৃত খৃষ্টান ধর্মকে দাফন করে ছেড়েছে। সেন্টপল ইঞ্জিলের মধ্যে এমন সব মনগড়া আকীদার সংযোজন করেছিল, যা ইঞ্জিল শরীফে ছিল না এবং হযরত ঈসা আ. কখনও বলেননি। উদাহরণ স্বরূপ: তারা এ ধারণা বদ্ধমূল করে নিয়েছিল যে, ঈসা আ. খোদার পুত্র ছিলেন, তাঁর মাতা মরিয়ম আ. খোদার স্ত্রী ছিলেন। আবার তাদের আরেক দলের ধারণা- “খোদা তিনি জন”। আল্লাহ তিন খোদার একজন মাত্র। তাদের অপর এক অংশের মত- হযরত ঈসা আ. স্বয়ং আল্লাহ; আল্লাহ তা‘আলাই হযরত ঈসার আকৃতিতে দুনিয়ার আগমন করেছিলেন।” যেমনটি ধারনা হিন্দুদের (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ কুরআন স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, ঈসা আ. এই শিরক বা ত্রিত্ববাদের কথা কখনও বলেননি।
وَإِذْ قَالَ اللَّـهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَـٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّـهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚإِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ ﴿١١٦﴾
(সূরা মায়িদা,১১৬-১১৭)
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের আরকটি জঘন্য আক্বীদা হল- “ঈসা আ. সারা বিশ্বের মানুষদের পাপ মোচনের জন্য শূলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন যারা ঈসা আ.- কে মানবে এবং তার ক্রসমৃত্যুকে বিশ্বাস করবে, তাদের সব পাপ মোচন হয়ে যাবে।” খৃষ্টানদের এ আক্বীদাও চরম মিথ্যা। তাদের এ গর্হিত দাবীর সমর্থন মূল ইঞ্জিলের কোথাও নেই। কুরআনে কারীমও তাদের এ আক্বীদাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন – وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ ﴿١٥٧﴾ (সূরা নিসা, আয়াত-১৫৭)
এ ছাড়া অসংখ্য আয়াত ও সহীহ হাদীসে বর্ণনা এসেছে, যে, হযরত ঈসা আ. জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আসমানে উত্থিত হয়েছেন এবং তিনি আসমানেই আছেন। অতঃপর কিয়ামতের পূর্বে তিনি আসমান থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি শেষনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনে ইসলামের অনুসরণ করবেন; খৃষ্টানদের ক্রশচিহ্ন ধ্বংস করবেন, শুকর কতল করবেন এবং তাঁর সম্পর্কে খৃষ্টানরা “খোদার পুত্র” ইত্যাদি বলে যে সকল অবাস্তব আক্বীদা প্রচার করছে, সে সব বাতিল ঘোষণা করবেন।
وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَـٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ ﴿٦١﴾
(সূরা যুখরূফ, আয়াত-৬১),(বুখারী শরীফ. হাদীস নং: ৩৪৪৮)
খ) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّـهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَـٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ ﴿٦﴾
ইঞ্জিল শরীফে আছে, হযরত ঈসা আ. বলেন- “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বের কিতাব তাওরাতকে আমি আসমানী সত্য কিতাব বলে থাকি এবং আমি আমার পরবর্তী নবীর ব্যাপারে সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে আহমদ।” (সূরা সফ, আয়াত -৬)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল- ঈসা আ. স্বয়ং তাঁর পরবর্তী শেষ নবী আহমদ মুস্তফা সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়ে গেছেন; তাঁকে মান্য করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন এবং তাঁকে চেনার জন্য তাঁর গুণাবলীর বিশদ ব্যাখ্যা করে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশ খৃষ্টান তাদের নবী ও তাদের কিতাবে প্রদত্ত এ নির্দেশ অমান্য করেছে। তারা শেষ নবীর ওপর ঈমান আনেনি। বরং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার তারা ক্রুসেড যুদ্ধ করেছে। হাজার হাজার মুসলমানকে তারা শহীদ করেছে। মুসলমানদের রক্তের মধ্যে তাদের ঘোড়ার পেট পর্যন্ত ডুবে গেছে। অথচ সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী সহ বিভিন্ন মুসলিম সেনাপতি যখন খৃষ্টানদেরকে পরাজিত করেছিলেন, তখন তার প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে খৃষ্টানদেরকে মাফ করে দিয়েছিলেন।
গ) ইঞ্জিলের উপরোক্ত বর্ণনায়, এ ছাড়াও ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে ঈসা আ. এর ঘোষণা বিবৃত হয়েছিল যে, ঈসা আ. বলেছেন “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়। আমি তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। একথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, তাদের নবী বলেছেন যে, আমি বনী ইসরাঈলের নিকট প্রেরিত হয়েছি, সারা বিশ্বের নিকট নয়। তাই প্রশ্ন হল খৃষ্টানরা স্কুল-কলেজ খুলে, মিশনারী হাসপাতাল খুলে, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করে, এরূপে আরো বিভিন্ন রকম সেবা (?) মূলক কাজ করে, চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সকল লোকদের খৃষ্টান ধর্মের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে কেন? কী হেতু এর? তারা কি মনে করেছে, সারা দুনিয়ার লোক বনী ইসরাঈল; যাদের নিকট ঈসা আ. প্রেরিত হয়েছিল? অন্যথায় যারা বনী ইসরাঈল নয়, তাদেরকে কেন খৃষ্টান ধর্মের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে? তারা কি মনে করছে-তাদের কিতাবে বর্ণিত শেষ নবী-“আহমদ” এখনও আবির্ভূত হননি? যদি তাদের এ বিশ্বাস থাকে যে, তাদের কিতাবে যে আখিরী নবীর ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে, তিনি আবির্ভূত হয়েছেন, তাহলে তাদের উচিৎ অন্যদের ত্রিত্ববাদের দাওয়াত না দিয়ে নিজেরা সেই “আহমাদ” এর দীনে ইসলাম কবুল করা। আমার উপরোল্লিখিত এ সকল মোটা মোটা প্রশ্নের উত্তর খৃষ্টান জগত দিবেন কি? নাকি তাদের পাদ্রীগণ মুখে মহর লাগিয়ে বাকহীন সাজবেন? যদি তা-ই হয়, তবে তাদেরকে বলছি, আপনারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য সে সকল কলা-কৌশল অবলম্বন করেছেন, তা অবিলম্বে পরিহার করুন। অন্যথায় আপনাদের ধর্ম মান্য করার দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে। এবং প্রমাণিত হবে যে আপনারা আসলে আপনাদের ধর্মগ্রন্থই বিশ্বাস করেন না।
বরং সারা বিশ্বে নেতৃত্বের মতলবে শুধু মুখে বাইবেল বা ইঞ্জিল মান্য করার দাবী করেন মাত্র।
No comments:
Post a Comment