অমুসলিম এন.জি.ও-দের ব্যাপারে মুসলমানদের করনীয়
যাবতীয় বিধর্মী আগ্রাসন থেকে স্বীয় দীন ও ঈমানের হিফাজত করার জন্য মুসলমানদের সর্বতোভাবে তৎপর হতে হবে। এ জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা কর্তব্যঃ
ক) দীনী তাবলীগ ও তা‘লীমের প্রতি বেশী বেশী গুরুত্বারোপ করা। প্রত্যেক মাদ্রাসার আসাতিযাগণ মাদ্রাসা এলাকায় এবং নিজের বাড়ীর এলাকায় নিঃস্বার্থ ভাবে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিবেন। যে সমস্ত এলাকায় এখনও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেসব এলাকায় বিশেষ করে উত্তর বঙ্গের এবং দক্ষিণ বঙ্গের অন্ততঃ প্রতিটি থানায় একটি করে খালিস দীনী কওমী মাদ্রাসা কায়িম করা অপরিহার্য। কারণ, প্রকৃতপক্ষে বর্তমান যমানায় বেসরকারী কওমী মাদ্রাসাগুলোই দীনের দূর্গ হিসেবে পরিগণিত; ক্যান্টনমেন্টের আশে পাশের লোকেরা যেমন নিরাপত্তা পায়, তেমনিভাবে মাদরাসার আশপাশের লোকের বহু রকম বদদীনী ফিৎনা থেকে নিরাপদ থাকে।
খ) আজ থেকে ৪০/৫০ বৎসর পূর্বে মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. খৃষ্টানদের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে মুসলিম জাতিকে সচেতন করার লক্ষ্যে বহু সংখ্যক ছোট ছোট পুস্তক রচনা করেছিলেন, কিন্তু জাতি তখন থেকে অদ্যাবধি মাওলানা ফরিদপুরীর দিলের ব্যথা বুঝতে সক্ষম হয়নি; তাই এখনও সময় আছে, তাঁর লেখা পুস্তক সমূহের ব্যাপক প্রচার ও বাস্তব কর্মসূচীর মাধ্যমে এখনও খৃষ্টানদের অপতৎপরতার মুকাবিলা করে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব। এ কথা সত্য যে, দেশবাসী এখনও সচেতন না হলে; এদেশ ও জাতির ভবিষ্যত সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। মাওলানা ফরিদপুরী রহ. প্রণীত সেই সকল বই সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে।
১। বৃটিশ শাসনের বিষ্ফল
২। পাদ্রীদের গোমর ফাঁক
৩। শক্র থেকে হুশিয়ার থাক
৪। আল্লাহর প্রেরিত ইনজীল কোথায়?
৫। ইংরেজী পড়িব না কেন? ইত্যাদি
গ) প্রত্যেক আলেম, ওয়ায়িয, লেখক, সাহিত্যিক, মুবাল্লিগ, মু‘আল্লিম প্রমুখ সকলে তাদের স্ব-স্ব লিখনী, ওয়াজ ও তাদের বক্তব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে খৃষ্টানদের সেবার মূল লক্ষ্য যে মধুর নামে বিষ পান করানো, তা তুলে ধরতে সচেষ্ট হবেন এবং এদেশের অধিকাংশ এন,জি,ও (সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান) গুলো যথা ব্র্যাক, কারিতাস, কেয়ার, গ্রামীণ ব্যাংক, নিজেরা করি, ইত্যাদি খৃষ্টানদের অর্থে তাদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে, তা সপ্রমাণে তুলে ধরতে প্রয়াসী হবেন। এদের হাসপাতালে রোগীদের ধোঁকা দেয়ার পলিসি সম্পর্কে বুঝাতে হবে যে, প্রথমে এরা ভুয়া নকল ঔষধ দিয়ে মুহাম্মদের নামে খেতে বলে।
ঐ ঔষধে কাজ না হলে, পরের দিন আসল ঔষধ দিয়ে “যীশুর” নামে খেতে বলে। তারপর রোগ ভালো হলে বলে দেখ, তোমাদের নবী ঠিক হয়ে থাকলে, একই ঔষধে তুমি সুস্থ হলে না কেন? কাজেই শুন, মুহাম্মদ (নাউযুবিল্লাহ) মুর্খ ছিলেন, শয়তানী শক্তি দ্বারা পরিচালিত ছিলেন। আরববাসীরা জাহিল ছিল, তাই মুহাম্মদ তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে তার দীন চালু করতে পেরেছিলেণ। অথচ তার ধর্ম বেকার। তাই সারা দুনিয়ার (আরব বিশ্বসহ?) মুসলমানরা গরীব।
অপর দিকে যীশু শিক্ষিত লোক ছিলেন। তার ধর্মই ঠিক। তিনি খৃষ্টানদের জন্য আর্শিবাদ করে গেছেন; তাই বিশ্বের সব খৃষ্টানরা ধনী ইত্যাদি। ইসলামের ধারক-বাহকদের দায়িত্ব যে, তারা মানুষকে সতর্ক করবেন যে, খৃষ্টান মিশনারী চক্রের রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, স্কুল -কলেজ, দুস্থ ও গরীবদের সেবা সবই একই লক্ষ্যে, অর্থাৎ সেবার মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উপকারী সেজে তাদেরকে খৃষ্টান ধর্মের দাওয়াত দেয়া ও খৃষ্টান বানানো। কথায় বলে, মানুষ উপকারের দাস। এভাবেই তারা সহজে নিরীহ মুসলমানদেরকে বশ করছে। যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে তারা বিনা যুদ্ধে সেবার নামে এদেশ দখল করতে পারে।
তারা কোন এলাকায় তাদের মিশন অনুযায়ী কাজ করার প্রোগ্রাম বানালে প্রথমেই তারা এলাকার প্রভাবশালী নেতা ও মাতাব্বার ধরনের লোকদেরকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলে। কিছু বখাটে যুবকদের চাকুরীর সুবিধা দিয়ে দলে ভিড়ায়। আর উচ্ছৃঙ্খল বেহায়া কিছু মেয়েদেরকে চাকুরী দিয়ে গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের চাকুরীর লোভ দেখিয়ে বাড়ীর বাহিরে নিয়ে আসে। হাজারো পুরুষ বেকার রয়েছে, কিন্তু তাদেরকে ওরা চাকুরী না দিয়ে পর্দানশীন গৃহবধুদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করে। তাদের পরিকল্পনা, তারা মুসলিম মেয়েদেরকে বাড়ির বাহিরে করেই ছাড়বে। যাতে করে যিনার সয়লাব বইতে পারে। তারা মেয়েদের শ্লোগান শিখায় স্বামীর কথা মানব না ভাঙ্গা ঘরে থাকব না গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়ব না ইত্যাদি।
আফসোসের বিষয় আজ মুসলমানদের দীনী ও আর্থিক দৈন্যের সুযোগ নিয়ে সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে তারা মুসলমানদের ছেলেদের দ্বারা নিজেদের সকল প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত করছে। নির্বোধ মুসলিম বাচ্চারা চারটা পয়সার জন্য এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা, মা বোন ও অবলা নারীর সতীত্ব-সম্ভ্রম সবই খ্রীষ্টানদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এভাবে তারা কলুর বলদের ভূমিকা পালন করে এদেশটাকে ধ্বংসের অতল গহবরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব এন.জি.ও দের খবরগীরি করার জন্য কেউ নেই যে, তারা সেবা করছে, না দেশটা ধ্বংস করছে। সাংবিধানিক ভাবে এরা যদিও ওয়াদাবদ্ধ যে, তারা শুধু সেবাই করবে, কোনরূপ খৃষ্টান ধর্মের প্রচার করবে না; বা রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
কিন্তু এই দস্তাবীজের ওয়াদা তাদের কাছে মূল্যহীন। সেবার আড়ালে তারা স্বার্থ প্রণোদিত সবকিছুই করে যাচ্ছে। এমন কি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তারা দেশদ্রোহীদের ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সরকার এদের সামনে নির্বিকার, বাকরুদ্ধ। কারণ এদের খুঁটি অত্যন্ত মজবুত। যখনই এদের বিরুদ্ধে কিছু করতে যাবে, বিদেশী প্রভুদের দ্বারা তাদেরকে ক্ষমতা থেকে আউট করে দেয়া হবে। এ নাজুক মুহুর্তে সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না। ইসলাম ও দেশ উভয়টাই হুমকির সম্মূখীন হয়ে আছে। বাস্তব এটাই যে, যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের গদী সামলাতে ব্যস্ত, তারা তাদের ক্ষমতার মোহে এদেরকে কিছু বলতে সাহস পায় না। সুতরাং এ মুহুর্তে উলামায়ে কিরামের সজাগ হতে হবে। জন সাধারণকে সচেতন করতে হবে। এদের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করে দিতে হবে।
ঘ) প্রত্যেক এলাকায় ধনীদের সাহায্যে উলামাগণের পরামর্শে মুসলিম মিশন গড়ে তুলে দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে, বস্ত্রহহীনদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে, যারা চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, যারা বে-কার বিনা সূদে সহজ কিস্তি তে তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। ইয়াতীম ও বিধবাদের যাকাতের অর্থে ভরণ-পোষণ করতে হবে। তাহলে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিজাতীয় সেবকের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ দেশের নিরীহ লোকেরা দীন-ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে; খৃষ্টানরা বৃহত্তর দিনাজপুরে বা পার্বত্য চট্টগ্রামে অদূর ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়িম করতে চায়। সেখানে তারা ডবল মূল্য দিয়ে প্রচুর জমি খরিদ করছে এবং যারা খৃষ্টান ধর্ম কবুল করছে, তাদের অনেককে সেখানে পূনর্বাসন করে। এভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তারা আরেকটি “ইসরাঈল” রাষ্ট্র কায়েম করে এ দেশে তাদের প্রভুত্ব পুরাপুরী প্রতিষ্ঠিত কতে চায়। তাই আজ মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের এ অশুভ তৎপরতা রোধ করতে হবে। এ মুহুর্তেই সকলের নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা অপরিহার্য।