Wednesday, April 19, 2023

ইঞ্জিল বা বাইবেলের সাথে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ঘাতকতা

 ইঞ্জিল বা বাইবেলের সাথে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ঘাতকতা


ক) হযরত ঈসা আ. খৃষ্টানদেরকে ইঞ্জিল কিতাবের ধারক বাহক বানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। তারা তাদের হক্কানী উলামাগণের তোয়াক্কা না করে সেই ওযীরে আজম সেন্টপলের অনুসারী হয়ে প্রকৃত খৃষ্টান ধর্মকে দাফন করে ছেড়েছে। সেন্টপল ইঞ্জিলের মধ্যে এমন সব মনগড়া আকীদার সংযোজন করেছিল, যা ইঞ্জিল শরীফে ছিল না এবং হযরত ঈসা আ. কখনও বলেননি। উদাহরণ স্বরূপ: তারা এ ধারণা বদ্ধমূল করে নিয়েছিল যে, ঈসা আ. খোদার পুত্র ছিলেন, তাঁর মাতা মরিয়ম আ. খোদার স্ত্রী ছিলেন। আবার তাদের আরেক দলের ধারণা- “খোদা তিনি জন”। আল্লাহ তিন খোদার একজন মাত্র। তাদের অপর এক অংশের মত- হযরত ঈসা আ. স্বয়ং আল্লাহ; আল্লাহ তা‘আলাই হযরত ঈসার আকৃতিতে দুনিয়ার আগমন করেছিলেন।” যেমনটি ধারনা হিন্দুদের (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ কুরআন স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, ঈসা আ. এই শিরক বা ত্রিত্ববাদের কথা কখনও বলেননি।


وَإِذْ قَالَ اللَّـهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَـٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّـهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚإِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ ﴿١١٦﴾

(সূরা মায়িদা,১১৬-১১৭)   


খৃষ্টান সম্প্রদায়ের আরকটি জঘন্য আক্বীদা হল- “ঈসা আ. সারা বিশ্বের মানুষদের পাপ মোচনের জন্য শূলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন যারা ঈসা আ.- কে মানবে এবং তার ক্রসমৃত্যুকে বিশ্বাস করবে, তাদের সব পাপ মোচন হয়ে যাবে।” খৃষ্টানদের এ আক্বীদাও চরম মিথ্যা। তাদের এ গর্হিত দাবীর সমর্থন মূল ইঞ্জিলের কোথাও নেই। কুরআনে কারীমও তাদের এ আক্বীদাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন – وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ ﴿١٥٧﴾ (সূরা নিসা, আয়াত-১৫৭)


এ ছাড়া অসংখ্য আয়াত ও সহীহ হাদীসে বর্ণনা এসেছে, যে, হযরত ঈসা আ. জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আসমানে উত্থিত হয়েছেন এবং তিনি আসমানেই আছেন। অতঃপর কিয়ামতের পূর্বে তিনি আসমান থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি শেষনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনে ইসলামের অনুসরণ করবেন; খৃষ্টানদের ক্রশচিহ্ন ধ্বংস করবেন, শুকর কতল করবেন এবং তাঁর সম্পর্কে খৃষ্টানরা “খোদার পুত্র” ইত্যাদি বলে যে সকল অবাস্তব আক্বীদা প্রচার করছে, সে সব বাতিল ঘোষণা করবেন।


وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَـٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ ﴿٦١﴾

(সূরা যুখরূফ, আয়াত-৬১),(বুখারী শরীফ. হাদীস নং: ৩৪৪৮)


   খ) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّـهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَـٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ ﴿٦﴾


ইঞ্জিল শরীফে আছে, হযরত ঈসা আ. বলেন- “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বের কিতাব তাওরাতকে আমি আসমানী সত্য কিতাব বলে থাকি এবং আমি আমার পরবর্তী নবীর ব্যাপারে সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে আহমদ।” (সূরা সফ, আয়াত -৬)


এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল- ঈসা আ. স্বয়ং তাঁর পরবর্তী শেষ নবী আহমদ মুস্তফা সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়ে গেছেন; তাঁকে মান্য করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন এবং তাঁকে চেনার জন্য তাঁর গুণাবলীর বিশদ ব্যাখ্যা করে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশ খৃষ্টান তাদের নবী ও তাদের কিতাবে প্রদত্ত এ নির্দেশ অমান্য করেছে। তারা শেষ নবীর ওপর ঈমান আনেনি। বরং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার তারা ক্রুসেড যুদ্ধ করেছে। হাজার হাজার মুসলমানকে তারা শহীদ করেছে। মুসলমানদের রক্তের মধ্যে তাদের ঘোড়ার পেট পর্যন্ত ডুবে গেছে। অথচ সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী সহ বিভিন্ন মুসলিম সেনাপতি যখন খৃষ্টানদেরকে পরাজিত করেছিলেন, তখন তার প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে খৃষ্টানদেরকে মাফ করে দিয়েছিলেন।


গ) ইঞ্জিলের উপরোক্ত বর্ণনায়, এ ছাড়াও ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে ঈসা আ. এর ঘোষণা বিবৃত হয়েছিল যে, ঈসা আ. বলেছেন “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়। আমি তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। একথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, তাদের নবী বলেছেন যে, আমি বনী ইসরাঈলের নিকট প্রেরিত হয়েছি, সারা বিশ্বের নিকট নয়। তাই প্রশ্ন হল খৃষ্টানরা স্কুল-কলেজ খুলে, মিশনারী হাসপাতাল খুলে, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করে, এরূপে আরো বিভিন্ন রকম সেবা (?) মূলক কাজ করে, চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সকল লোকদের খৃষ্টান ধর্মের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে কেন? কী হেতু এর? তারা কি মনে করেছে, সারা দুনিয়ার লোক বনী ইসরাঈল; যাদের নিকট ঈসা আ. প্রেরিত হয়েছিল? অন্যথায় যারা বনী ইসরাঈল নয়, তাদেরকে কেন খৃষ্টান ধর্মের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে? তারা কি মনে করছে-তাদের কিতাবে বর্ণিত শেষ নবী-“আহমদ” এখনও আবির্ভূত হননি? যদি তাদের এ বিশ্বাস থাকে যে, তাদের কিতাবে যে আখিরী নবীর ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে, তিনি আবির্ভূত হয়েছেন, তাহলে তাদের উচিৎ অন্যদের ত্রিত্ববাদের দাওয়াত না দিয়ে নিজেরা সেই “আহমাদ” এর দীনে ইসলাম কবুল করা। আমার উপরোল্লিখিত এ সকল মোটা মোটা প্রশ্নের উত্তর খৃষ্টান জগত দিবেন কি? নাকি তাদের পাদ্রীগণ মুখে মহর লাগিয়ে বাকহীন সাজবেন? যদি তা-ই হয়, তবে তাদেরকে বলছি, আপনারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য সে সকল কলা-কৌশল অবলম্বন করেছেন, তা অবিলম্বে পরিহার করুন। অন্যথায় আপনাদের ধর্ম মান্য করার দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে। এবং প্রমাণিত হবে যে আপনারা আসলে আপনাদের ধর্মগ্রন্থই বিশ্বাস করেন না।


বরং সারা বিশ্বে নেতৃত্বের মতলবে শুধু মুখে বাইবেল বা ইঞ্জিল মান্য করার দাবী করেন মাত্র।

Sunday, April 16, 2023

হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত

 হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত


মদীনার নিয়ন্ত্রণ দখল করে তারা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বাস ভবন অবরোধ করে। মদীনার অধিকাংশ মুসলমানই তখন হজ্জে গিয়েছিলেন। তাই মদীনা এক প্রকার জনশূন্যই ছিল। সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিল। আমাদের ব্যাপারে যারা হস্তক্ষেপ না করবে শুধু তারাই জানের নিরাপত্তা পাবে। তাদের মোকাবিলায় তখন উপস্থিত মদীনাবাসীদের শক্তি ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। তাই তারা নিশ্চুপ থাকলেন।


সন্ত্রাসীরা খলীফার বাসভবন অবরোধ করে খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দেয়। হযরত উসমান রাযি. ভবনের ছাদে আরোহণ করে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে তাদের দাবী ও কার্যাবলীর অযৌক্তিকতা বুঝাতে চেষ্টা করেন। তবুও তারা খলীফার পদত্যাগের দাবীতেই অটল থাকে। কিন্তু হযরত উসমান রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার প্রতি আরোপিত সুস্পষ্ট ও কড়া নির্দেশের কারণে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেন।


Saturday, April 15, 2023

বেফাক পরীক্ষা রেজাল্ট ২০২৩ দেখুন

 বেফাক পরীক্ষা রেজাল্ট ২০২৩ দেখুন


আল্লাহর রহমতে বেফাক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে

 

যারা দেখবেন তারা এই লিংকে যান

Wifaqedo. come 

অথবা বেফাকুল মাদারিসিল কওমীয়া বাংলাদেশ তে যান


Tuesday, April 11, 2023

আহলে হাদীস নাম ইংরেজ সরকারের অবদান

 আহলে হাদীস নাম ইংরেজ সরকারের অবদান


শুরুর দিকে এ দলটি নিজেদেরকে মুহাম্মাদী, সালাফী, লা-মাযহাবী, ওয়াহাবী, আছারী ইত্যাদি বলে পরিচয় দিত। কিন্তু এসব পরিচয়ে তারা তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। তাই বাটালবী সাহেব ইংরেজ সরকার বরাবর দরখাস্ত করলেন “আমার সম্পাদিত এশায়াতুস সুন্নাহ পত্রিকায় ১৮৮৬ইং সনে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওয়াহাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমকহারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার করা সমীচীন হবে না যাদেরকে আহলে হাদীস বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমকহালালী, আনুগত্য ও কল্যাণই কামনা করে যা বারবার প্রমাণিতও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি-পত্রেও এর স্বীকৃতি আছে। অতএব এ দলের প্রতি ওয়াহাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং গভর্নমেন্ট বরাবর অত্যন্ত আদব ও সবিনয় নিবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এই ওয়াহাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর তা প্রয়োগের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হোক। -আপনার অনুগত আবূ সাঈদ মুহাম্মাদ হুসাইন, সম্পাদক এশায়াতুস সুন্নাহ”।


অনুগত বান্দার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন প্রাদেশিক গভর্নর দফতর থেকে “তার দরখাস্ত মঞ্জুর করা হল এবং তাদের জন্য আহলে হাদীস নাম সরকারীভাবে বরাদ্দ করা গেল”-মর্মে চিঠি পাঠানো হয়। সরকারের তরফ থেকে পাঠানো সেসব চিঠির তালিকা লক্ষ্য করুন- পাঞ্জাব গভর্নর সেক্রেটারি মি. ডব্লিউ এম এন- চিঠি নং ১৭৫৮, সি পি গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৪০৭, ইউ পি গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৩৮৬, বোম্বাই গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৭৩২, মাদ্রাজ গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ১২৭, বাঙ্গাল গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ১৫৫ (সূত্র: এশায়াতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩২-৩৯, সংখ্যা ২, খণ্ড ১১)।


আহলে হাদীস খেতাব বরাদ্দ পেয়ে বাটালবী সাহেব দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে হাদীস মানার নামে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করেন। এ কাজে তিনি নিজের সবটুকু শ্রম-সাধনা ইংরেজের সন্তুষ্টি অর্জনে বিলিয়ে দেন। তারপর কুদরতের কারিশমা দেখুন, পঁচিশ বছর পর সেই এশায়াতুস সুন্নাহ পত্রিকায় সেই মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালবী লিখলেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যেতে চায় তার জন্য সহজ পথ হল, তাকলীদ (মাযহাবের ইমামের অনুসরণ) ছেড়ে দেয়া।’ (সূত্র: এশায়াতুস সুন্নাহ, খণ্ড ১১, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা ৫৩)। এ যেন নিজের হাঁড়ি নিজেই হাটে ভাঙ্গার নামান্তর।


বাটালবী সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ইংরেজের সেবা করে গেছেন। ইতিহাস এর সাক্ষ্য বহন করে। তিনি মরে গেছেন কিন্তু তার বই-পুস্তক আর ভ্রান্ত মতবাদ আজও রয়ে গেছে। সেগুলোর মাধ্যমে এখনো হাজার হাজার মুসলমান গোমরাহ হচ্ছে।



Sunday, April 9, 2023

ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের কাহিনী

 ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের কাহিনী


ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের লোমহর্ষক কাহিনীঃ


মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর ইসলাম এবং মুসলমানদের শক্তি ও শান্তি শৃঙ্খলার উৎস ছিল নিযামে খিলাফাত বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক খিলাফত ব্যবস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর সর্বপ্রথম খলীফা মনোনীত হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.।


তাঁর পর খলীফা নিযুক্ত হন হযরত উমর রাযি. এই দুই খলীফার কালজয়ী আদর্শ শাসনে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সফলতা যখন পরিস্ফুটিত ও সু-প্রমাণিত হয়ে প্রকাশ পায় তখনই ইয়াহুদী খৃষ্টান চক্র তাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট বানায় ‘নিযামে খিলাফাত’ কে। নতুন করে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির মূল শক্তি খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দুরভিসন্ধিতে ইসলামের তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত উসমান যিন্নুরাইন রাযি. এর খিলাফতকালের প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরী ২৫ সনে ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলমান দলভুক্ত হয় আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামে এক কুখ্যাত ইয়াহুদী মুনাফিক।


এসময় হযরত উসমান রাযি. এর নেতৃত্বে পারস্য, মিশর, সিরিয়া ও ইরাক ইত্যাদি অঞ্চল বিজিত হওয়ার পর লক্ষ লক্ষ লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার হিড়িক চলছিল। এর মধ্য আব্দুল্লাহ বিন সাবা ছাড়াও তার মত আরো অনেক সংখ্যক মুনাফিক ইসলামের মূলে আঘাত হানার মানসে বাহ্যতঃ ইসলাম গ্রহণ করে।


Thursday, April 6, 2023

আখিরী নবী ﷺ এর কতিপয় গুণাবলী

 আখিরী নবী ﷺ এর কতিপয় গুণাবলী


আয়াতটির আলোকে আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কতিপয় গুণাবলী আলোচ্য আয়াতটিতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  যে সকল গুণাবলীর অবতারণা করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ:


ক) আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সোয়া লক্ষ আম্বিয়ায়ে কিরামের আ. মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মাত্র তিন শত তের জনকে রাসূলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। নবী ও রাসূলের মধ্যে মর্যাদা ও বিধানগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। রাসূলগণের মর্তবা সাধারণ নবীগণের ঊর্ধ্বে। সংজ্ঞা হিসেবে নবী বলতে বুঝায় যিনি আল্লাহর পয়গাম বান্দাদের নিকট পৌছিয়ে থাকেন। তাঁর উপর স্বতন্ত্র কিতাব নাযিল হওয়া বা তাঁকে নতুন শরী‘আত প্রদান করা শর্ত নয়। অপর দিকে রাসূল বলা হয়, এরূপ দীন প্রচারক নবীকে; যাঁকে নতুন কিতাব ও নতুন শরী‘আত প্রদান করা হয়েছে । অথবা কোন কাফির সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। সেই স্বতন্ত্র আসমানী কিতাব ও নতুন শরী‘আত প্রাপ্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তা‘আলা  তাঁকে “সাইয়্যিদুল মুরসালীন বা রাসূলগণের সরদার” মনোনীত করেছেন।



Wednesday, April 5, 2023

ফিকহ শাস্ত্রে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর অবদান

 ফিকহ শাস্ত্রে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর অবদান


ইসলামী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় যেমনঃ তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, মাগাযী ইত্যাদির শুরু ও সুচনা যদিও ইসলামের প্রারম্ভ থেকে হয়েছিল তবুও যত দিন পর্যন্ত সেগুলো একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করেনি, তত দিন পর্যন্ত তার সঙ্গে কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম যুক্ত হয়নি। সে হিসেবে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ফিকহশাস্ত্রের সঙ্গেও কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম যুক্ত হয়নি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ইমাম আবূ হানীফা নু’মান ইবনে সাবেত রহ.-এর সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা সাধনায় ফিকহশাস্ত্র পূর্ণতা লাভ করে এবং একটি সতন্ত্র বিদ্যায় রূপ নেয়। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিকহ আবিষ্কারক হিসেবে ভূষিত হন। ড. ফিলিপ হিট্টির ভাষায়ঃ


الاما م ابو حنيفة الذى وضع الاساس لاول مدارس شرع الاربع فى الاسلام.


অর্থঃ “আবূ হানীফা রহ. সেই ব্যক্তি, যিনি ইসলামে সর্বপ্রথম ফিকহ শরী‘আর ভিত্তি স্থাপন করেন।”


অর্থাৎ আবূ হানীফা রহ. সহীহ হাদীসের আলোকে ইস্তিমবাত, ও গবেষণার মাধ্যমে ফিকহে ইসলামীকে এমন পূর্ণতা ও সামগ্রিকতা দান করেন যে, তিনি ফিকহে ইসলামীর মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হন। তিনি যেমন ঘটিত বিষয়ে ফাতাওয়া ভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন, তেমনি সম্ভাব্য ও ঘটিতব্য মাসআলার ফাতাওয়া ভাণ্ডারও গড়ে তুলেছিলেন। ফলে তার ফাতাওয়া ভাণ্ডার বিশাল আকার ধারণ করেছিল। আবূল ফজল কিরমানী তার ইরশাদুল মারাম গ্রন্থে বলেন,-“আবূ হানীফা রহ.-এর মাসআলার সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো” আল্লামা আইনী রহ. তার ইনায়া গ্রন্থে বলেন, “আবূ হানীফা রহ.-এর মাসআলা বারো লাখ সত্তর হাজারের কিছু বেশি।” এর দ্বারা অনুমান করা যায় কী বিশাল ফিকহী ভাণ্ডারই না তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আর এ কারণেই পরবর্তী সকল ফিকহ ও মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহকে পুঁজি করে।


উদাহরণতঃ শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম হলেন ইমাম শাফেয়ী রহ.। তিনি ফিকহ শিখেছেন ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর নিকট থেকে। আর ইমাম মুহাম্মাদ রহ. ছিলেন ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর প্রথম সারির শিষ্য। মালেকী মাযহাবের প্রবর্তক হলেন, ইমাম মালেক রহ.। তিনিও আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহ থেকে বেশ উপকৃত হয়েছেন। কাযী আবূল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ধারাবাহিক সনদে আব্দুল আযীয আদ দারা ওয়ারদী হতে বর্ণনা করেন, ‘ইমাম মালেক রহ. ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর কিতাবসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করতেন এবং তা থেকে উপকৃত হতেন।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে আবূ হানীফা রহ. মদীনা সফরকালে ইমাম মালেক রহ. তাঁর সাথে মসজিদে নববীতে মিলিত হতেন তারপর তারা উভয়ে ইশার নামাযের পর থেকে ফজরের নামায পর্যন্ত ইলমী আলোচনায় মশগুল থাকতেন। (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনে আবিল আওয়াম-১০৩)


হাম্বলী মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. ফিকহ ও হাদীস হাসিল করেছেন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. থেকে। যাদের ফিকহের ভিত্তি ছিল ফিকহে আবূ হানীফা রহ.। হাফেয আবূল ফাতাহ সাইয়িদুন নাস ‘উয়ূনুল আসার’ গ্রন্থে লিখেন, “হযরত আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, আমার পিতা (আহমাদ ইবনে হাম্বল) ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহ. থেকে তিন তাক পরিমাণ ইলমে শরী‘আহ লিপিবদ্ধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি সেগুলো অধ্যয়ন করতেন? আব্দুল্লাহ বললেন, মাঝে মাঝে অধ্যয়ন করতেন।” (আরো দেখুন বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ ১০/৩৪৭)


এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, আবূ হানীফা রহ.-এর পর হতে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মুহাদ্দিস ও ফকীহের আগমন ঘটেছে তারা সকলেই কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং কোন না কোন ইমামের ফিকহের আলোকে জীবন যাপন করেছেন। সুতরাং পরবর্তী সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহের কাছে ঋণী। এমন কি এ কথা বলাও অতিরঞ্জন হবে না যে, ইমাম সাহেব পরবর্তী গোটা মুসলিম যাহান তাঁর ও তাঁর ফিকহের কাছে চিরঋণী। ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর বিখ্যাত উক্তিটি লক্ষ করুন, মাযহাবের একজন মান্যবর হওয়া সত্ত্বেও তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন- الناس عيال ابي حنفة في الفقه


“ফিকহ বিষয়ে সকল মানুষ আবূ হানীফা রহ.-এর কাছে দায়বদ্ধ। (তারীখে বাগদাদ ১৩/৩৪৬; সিয়ারু আ’লামিন নবালা ৬/৪০৩, তাহযীবুত তাহযীব ১০/৪৫০)


তিনি আরও বলেছেন,


 ما طالب احد الفقه الا كان عيالا على ابي حنفة  


“যে কেউ ফিকহ অন্বেষণ করবে তাকে আবূ হনীফার কাছে দায়বদ্ধতা স্বীকার করতেই হবে। (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনে আবিল আউয়াম ৭)


ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর ফিকহ আহোরণ ও সংকলন পদ্ধতিঃ


ইমাম আবূ হানীফা রহ. কীভাবে ফিকহ আহরণ করতেন তা স্বয়ং তার যবানীতেই শুনুন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সহীহ সনদে ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর  যে 


নীতিগুলো উল্লেখিত হয়েছে তার সারকথা এই-


১। মাসআলার সমাধান যখন কিতাবুল্লাহতে পাই তখন সেখান থেকেই সমাধান গ্রহণ করি।


২। সেখানে না পেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ ও সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করি, যা নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। সহীহ হাদীস আমাদের শিরোধার্য, একে পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর শরনাপন্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না। 


৩। এখানে যদি না পাই তাহলে সাহাবায়ে কেরামের সিদ্ধান্তগুলোর শরণাপন্ন হই।


৪। কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রাসূল্লিল্লাহ ও ইজমায়ে সাহাবার সামনে কিয়াস চলতে পারে না। তবে যে বিষয়ে সাহাবীদের একাধিক মত রয়েছে সেখানে ইজতিহাদের মাধ্যমে যে মত কুরআন-সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী বলে বোধ করি তা গ্রহণ করি।


৫। মাসআলার সমাধান এখানেও পাওয়া না গেলে ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছে থাকি। তবে এ ক্ষেত্রেও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হই না। (আল ইনতিকা ফী ফাযাইলিল আইম্মাতিছ ছালাছাতিল ফুকাহা, ইবনে আব্দিল বার ১২/২১৬-২৬৪, ফাযাইলু আবী হানীফা আবূল কাসিম ইবনু আবিল আউয়াম ২১-২৩, মাখতুত: আবী হানীফা ওয়া আসহাবিহী, আবূ আব্দুল্লাহ আস সাইমারী (মৃত্যু ৪৩৬ হি.) পৃষ্ঠা : ১০-১৩, তারিখে বাগদাদ ১৩/৩৬৮, মানাকিবুল ইমাম আবূ হানীফা, মুয়াফফাক আল মক্কী ১/৭৪-১০)


ফিকহে মুতাওয়ারাস এর সংকলন এবং ফিকহে জাদীদে আহরণের যে নীতিমালা ইমাম সাহেবের নিজের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে তা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের সকল ইমামের সর্বসম্মত নীতি। কোন ফিকহ তখনই ইসলামী ফিকহ হতে পারে যখন তা উপরোক্ত নীতিমালার ভিত্তিতে সংকলিত ও আহরিত হয়। ফিকহ সংকলন ও আহরণের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণে ইমাম সাহেব রহ. কতটুকু সফল হয়েছেন তা তার সমসাময়িক স্বীকৃত ইমামগণের বক্তব্য থেকে জানা যেতে পারে, যারা তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি সকল ইসলামী শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন, ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ. (মৃত্যু-১৬১ হি.) বলেন, “আবূ হানীফা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইলম অন্বেষণ করেছেন। তিনি ছিলেন (দ্বীনের প্রহরী) দ্বীনের সীমানা রক্ষাকারী  যেন আল্লাহর হারামকৃত কোন বিষয়কে হালাল মনে করা না হয়। কিংবা হালালের মতো তাতে লিপ্ত না হয়। যে হাদীসগুলো তার কাছে সহীহ সাব্যস্ত হতো অর্থাৎ যা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিগণের সনদে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি তা গ্রহণ করতেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর কর্ম থেকে যেটি সর্বশেষ সেটি গ্রহণ করতেন আর কুফার আলেমগণকে যে সকল হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত দেখেছেন সে সকল হাদীসও তিনি গ্রহণ করতেন। (কেননা এটাই ছিল সাহাবা যুগ থেকে চলমান আমল ও ধারা) (আল ইনতিকা, ইবনে আব্দিল বার পৃষ্ঠা: ২৬২) ফিকহে হানাফীর ভিত্তিই যখন হাদীস ও সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত তখন হাদীস ও সুন্নাহর সঙ্গে এর সম্পর্ক কতখানি মজবুত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্যই ইমাম ইবনুল মুবারক রহ. বলেছেন, ‘আবূ হনীফার ফিকহকে শুধু রায় বলো না। কেননা তা হলো হাদীসের তাফসীর।’ (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনু আবিল আওয়াম-২৩)


সংকলন পদ্ধতি:

১২০ হিজরীতে হাম্মাদ রহ. এর ইন্তেকালের পর ইমাম আবূ হানীফা রহ. তার আসনে সমাসীন হলেন। এদিকে ইসলামী সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। ইবাদাত ও মু’আমালাত সম্পর্কিত বিষয়াদিতে এত মাসআলা দেখা দিল যে, এর সমাধানে আইনের একটি সুবিন্যস্ত সংকলন ছাড়া কিছুতেই কাজ চলছিল না। তাই ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিকহ সংকলনের ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু এই মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দিতে একদল দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ আলেমের প্রয়োজন ছিল। সে মতে তিনি তার অগণিত ছাত্রদের মধ্য হতে বাছাই করে চল্লিশ জন দক্ষ ও কর্মঠ ছাত্র নিয়ে ফিকহ বোর্ড গঠন করেন।


ইমাম ত্বহাবী রহ. আসাদ ইবনে ফুরাত হতে অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেন, “আবূ হানীফা রহ. এর যে সকল ছাত্র ফিকহ সংকলনের কাজ আঞ্জাম দেন তাদের সংখ্যা (৪০) চল্লিশ জন।” এরা হলেন-


১. কাযী আবূ ইউসুফ

২. ইমাম মুহাম্মাদ

৩. ইমাম যুফার

৪. ওয়াকী ইবনুল জাররাহ

৫. ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া

৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক

৭. দাউদ ইবনে নুসাইর

৮. হাফস ইবনে গিয়াস

৯. ইউসুফ ইবনে খালিদ

১০. আফিয়া ইবনে ইয়াযিদ

১১. হিব্বান ইবনে আলী

১২. মুনদিল ইবনে আলী

১৩. আলী ইবনে মুসহীর

১৪. কাসীম ইবনে মা’আন

১৫. আসাদ ইবনে আমর

১৬. ফযল ইবনে মুসা

১৭. আলী ইবনে যারইয়ান

১৮. হিশাম ইবনে ইউসুফ

১৯. ইয়াহইয়া ইবনে সাইদ আল কাত্তান

২০. শুআইব ইবনে ইসহাক

২১. হাফস ইবনে আব্দুর রহমান

২২. হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ

২৩. খালিদ ইবনে সুলাইমান

২৪. আঃ হামিদ ইবনে আব্দুর রহমান

২৫. আবূ কাসেম যাহহাক ইবনে মাখলাদ

২৬. মাক্কী ইবনে ইবরাহীম

২৭. হাম্মাদ ইবনে দালীল

২৮. আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস

২৯. ফুজাইল ইবনে ইয়ায

৩০. হাইসাম ইবনে বাশীর

৩১. নূহ ইবনে দাররাহ

৩২. যুহাইর ইবনে মুআবিয়া

৩৩. শরীক ইবনে আব্দুল্লাহ

৩৪. নসর ইবনে আব্দুল কারীম

৩৫. মালিক ইবনে মা’ফুল

৩৬. জাবীর ইবনে খাযিম

৩৭. জারীর ইবনে আব্দুল হামীদ

৩৮. হাসান ইবনে যিয়াদ

৩৯. হাম্মাদ ইবনে আবী হানীফা

৪০. আবূ ইসমাতা নূহ ইবনে মারয়াম


সংকলন পদ্ধতি ছিল এরূপ, বোর্ডের সামনে কোন একটি মাসআলা পেশ করা হতো। সবাই এ ব্যাপারে এক মত না হলে অত্যন্ত স্বাধীনভাবে বিতর্ক শুরু হয়ে যেতো। এই বিতর্ক কখনও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আবার কখনও কয়েকদিন পর্যন্ত চলত। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ধ্যান ও ধৈর্য্য সহকারে সকলের বক্তব্য শুনতেন। সবশেষে তিনি এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ ফায়সালা পেশ করেন যে, সকলেই তা মানতে বাধ্য হতো। আবার কখনও এরূপ হতো যে, ইমাম সাহেবের ফায়সালার পরও কেউ কেউ নিজ নিজ মতের উপর অটল থাকতেন। তখন ইমাম সাহেবের ফায়সালার পাশাপাশি ওই সব মতগুলোকেও লিপিবদ্ধ করে নেওয়া হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত অধিকাংশ সদস্য কোন ব্যাপারে একমত না হতো ততক্ষন পর্যন্ত কোন মাসআলার ফায়সালা না করার বিধান ছিল। হাফেজ আবূল মাহাসেন রহ.- বলেন, এ সংকলনের বিন্যাস ছিল নিম্নরূপঃ


প্রথমে পবিত্রতার অধ্যায়, অতঃপর নামায ও রোযার অধ্যায়, তারপর ছিল ইবাদতের অন্যান্য অধ্যায়। অতঃপর মু’আমালাত ও লেনদেন এবং সর্বশেষে ছিল উত্তরাধিকারের অধ্যায়। পরবর্তীতে ইমাম মালেক রহ. ইমাম আবূ হানীফা রহ. সংকলিত ফিকহের এই বিন্যাস অনুযায়ী বিখ্যাত কিতাব মুয়াত্তা সংকলন করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. এর বর্ণনা অনুযায়ী এটা এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। তিনি লিখেন, “যে বৈশিষ্ট্যে ইমাম আবূ হানীফা রহ. একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী তা হল, তিনিই সর্ব প্রথম শরী‘আতের ইলমকে সংকলিত করেছেন এবং বিষয় ভিত্তিক বিন্যাসে অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ বিন্যস্ত করেছেন। এরপর ইমাম মালেক রহ. মুয়াত্তা গ্রন্থে তাঁর অনুসরণ করেছেন এবং সুফিয়ান সাওরীও তার গ্রন্থে ঐ নীতি অনুসরণ করেছেন। এ ব্যাপারে কেউ আবূ হনীফা রহ.-এর অগ্রবর্তী হতে পারেন নি।’


উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ সতর্কতা ও পূর্ণতার সঙ্গে ফিকহ সংকলনের কাজটি আঞ্জাম পেয়েছিল। যা হোক ইমাম সাহেবের জীবদ্দশাতেই এ সংকলন প্রকাশিত হয়ে সকলের নিকট সমাদৃত হয়। এমনকি সে সময় তার সমকক্ষের দাবীদার ব্যক্তিবর্গও তাঁর এ সংকলন থেকে উপকৃত হন।


যায়েদা বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরী রহ.-এর শিয়রে একটি কিতাব দেখতে পেলাম যে কিতাবটি তিনি পাঠ করছিলেন। অনুমতি নিয়ে আমি কিতাবটি দেখতে লাগলাম। দেখি সেটা আবূ হানীফা রহ.-এর ‘কিতাবুর রেহেন’ (বন্ধক সংক্রান্ত মাসআলার সংকলন) আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আবূ হনীফার কিতাব পাঠ করছেন? তিনি বললেন, আফসোস যদি তাঁর সবগুলো রচনাই আমার কাছে থাকতো।” (হযরত আবূ হানীফা রহ., শিবলী নোমানী পৃ: ১৫৩ বাংলা অনুদিত)


এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ফিকহ সংলন ও গ্রন্থনায় ইমাম সাহেবের কী প্রভাব-বিস্তারক অবদান রয়েছে। তাঁর এই অনবদ্য ও অতুলনীয় অবদানের কথা আজকের কতিপয় আহলে হাদীস বন্ধু অস্বীকার করলেও ইমাম বুখারী রহ.-এর দাদা উস্তাদ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে দাউদ কুরাইবী যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বলেছেন, মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হলো, নিজেদের নামাযে ইমাম আবূ হানীফার জন্য দু’আ করা। কেননা তিনি উম্মাহর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও ফিকহ সুরক্ষিত করে গিয়েছেন। 

Tuesday, April 4, 2023

ইমাম আবূ হানীফা রহ.এর শ্রেষ্ঠত্ব

 ইমাম আবূ হানীফা রহ.এর শ্রেষ্ঠত্ব


অনুসৃত চার মাযাহাবের মান্যবর চার ইমামের প্রত্যেকেই কুরআন-হাদীস সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন এ কথা সর্বজনস্বীকৃত। তবে তুলনামূলক বিচারে ইমাম আবূ হনীফা রহ. ছিলেন তাদের সর্বশ্রেষ্ঠজন। ফিকহশাস্ত্র সংকলন ও এর প্রচার-প্রসারে তাঁর বিস্ময়কর অবদান সম্পর্কে ছিটেফোঁটা অবগতি থাকলেও ইনসাফপ্রিয় প্রতিটি মানুষ এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। ফিকহশাস্ত্রে তাঁর অবদানের কথা আলোচনার পূর্বে আমরা ফিকহশাস্ত্র ও এর ক্রমবিকাশ নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।


বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যামানায় শরী‘আতের বিধানাবলীর মান নির্ণীত ছিল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সামনে উযু করতেন। মুখে বলতেন না যে, এটা ফরজ, এটা ওয়াজিব আর এটা মুস্তাহাব। সাহাবায়ে কেরাম তাঁকে দেখে ঠিক সেভাবে উযু করতেন। নামাযের অবস্থাও ছিল তাই। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম ফরজ, ওয়াজিব ইত্যাদির বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিতেন না বা নেয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না। তাঁরা যেভাবে রাসূল ﷺ -কে নামায আদায় করতে দেখতেন হুবহু সেভাবেই নিজেরা নামায আদায় করতেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি কোন জাতিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের চেয়ে উত্তম দেখিনি। কিন্তু তাঁরা নবীজীর গোটা জীবনে ‘তেরো’র অধিক মাসআলা জিজ্ঞেস করেননি। এর সবগুলোই আবার কুরআনে কারীমে বিদ্যমান। যে সমস্যাগুলো না জানলেই নয় সেগুলোই কেবল জিজ্ঞেস করতেন। (সুনানে দারেমী-মুকাদ্দিমা ১২৭) 


অনেক সময় এমন হতো যে, কেউ কোন কাজ করেছে, তিনি সেটাকে ভালো বলেছেন অথবা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এভাবে আদেশ নিষেধ সাধারণ সমাবেশে প্রকাশ পেত। আর সাহাবায়ে কেরাম সে পরিস্থিতিতে প্রদত্ত নবীজীর বক্তব্য স্মরণ রাখতেন। নবীজীর ইন্তেকালের পর ইসলামের বিজয় নিশান দূর-দুরান্তে ছড়িয়ে পড়ল। ফলে সামাজিক জীবনের পরিধিও বর্ধিত হতে লাগল। সমস্যা এত বেশি ঘটতে লাগল যে, ইজতিহাদ ও মাসআলা আহরণের প্রয়োজন দেখা দিল। এতে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিধি-নিষেধের বিস্তৃত ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ দিতে হলো।


উদাহরণতঃ কেউ নামাযে ভুলক্রমে কোন আমল ছেড়ে দিল। এখন বিতর্ক এই দেখা দিল যে, তার নামায হলো কি হলো না,  তো এর সমাধান কল্পে নামাযের কার্যাবলির সবগুলোকেই ফরজ বলে দেয়া সম্ভব ছিল না। কাজেই সাহাবায়ে কেরামকে নামাযের কার্যাবলির মান নির্ণয় করে নিতে হয়েছে যে, এই এই কাজ ফরজ, ওয়াজিব আর এগুলো সুন্নাত বা মুস্তাহাব। বলাবাহুল্য আমলগুলোর মান নির্ণয়ের এ ইজতিহাদ ও গবেষণায় যে মূলনীতি অনুসরণ করা হতো, সে ব্যাপারে সকল সাহাবীর একমত হওয়া সম্ভব ছিল না। এজন্য মাসআলাসমূহে মতভেদ দেখা দিয়েছে এবং অধিকাংশ মাসআলায় সাহাবাদের মতভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া এরূপ অনেক ঘটনারও উদ্ভব ঘটেছে, যেগুলোর মূল ছিল নবীযুগে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনা। এরূপ ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরামকে মূল ঘটনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার শাখা-প্রশাখা চিহ্নিত করে অতঃপর চলমান ঘটনাকে অনুরূপ ঘটনার সাথে সমন্বিত করে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। এই যে বিশ্বস্ত ও বিশেষজ্ঞ গবেষক কর্তৃক যথাযোগ্য পন্থায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে কুরআন-হাদীসের ব্যবহারিক দিকটিকে উদ্ঘাটন ও আহরণ করা পরিভাষায় একে বলা হয় ইজতিহাদ। আর উদঘাটিত ও আহরিত মাসআলাকে বলা হয় ফিকহ। ফিকহ কুরআন-হাদীস বর্হিভুত কোনো বস্তু নয়; বরং কুরআন-হাদীসেরই ব্যবহারিক দিক।

Sunday, April 2, 2023

ব্যাংক ডিপোজিটের শরয়ী বিধান

 ব্যাংক ডিপোজিটের শরয়ী বিধান


ব্যাংকিং পরিভাষায় ব্যাংক ডিপোজিট চার প্রকারঃ


১. কারেন্ট একাউন্ট (Current Account)  বা চলতি হিসাব।


২. সেভিংস একাউন্ট (Savings Account )  বা সঞ্চয়ী হিসাব।


৩. ফিক্সড একাউন্ট (Fixed Deposit)  বা নির্ধারিত মেয়াদি সঞ্চয়।


৪.লকার (Locker)  তথা ব্যাংক থেকে লোহার বক্স ভাড়া নিয়ে তাতে টাকা পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী রেখে তা ব্যাংকের নিকট আমানত রাখা। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৩-১৫)


ব্যাংক ডিপোজিটগুলোর শরয়ী অবস্থানঃ


প্রথম তিন প্রকার করজের হুকুমে দুটি শর্তের কারণেঃ


এক. এই তিন প্রকারের (কারেন্ট, সেভিংস ও ফিক্সড) ডিপোজিটারগণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের অর্থের যামিন বা জিম্মাদার বানায়। 


দুই. ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাদের গচ্ছিত অর্থের যথেচ্ছা ব্যবহারের সার্বিক ক্ষমতা প্রদান করে থাকে।


চতুর্থ প্রকার তথা লকার (Locker) এটা বর্তমান প্রচলন ও শরয়ী দৃষ্টিকোণ উভয় বিবেচনায় আমানত হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। (ফিকহী মাকালাত ৩/১৮)


সাধারণ ব্যাংগুলোতে অর্থ রাখার শরয়ী হুকুমঃ


১. জান ও মালের নিরাপত্তার খাতিরে কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয আছে। যেহেতু কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক কোন মুনাফা প্রদান করা হয় না। বরং তাদের থেকে উল্টা সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জ কাটা হয়। অতএব, কারেন্ট একাউন্টে টাকা রাখলে সুদি লেন-দেনে অংশগ্রহণ গণ্য হবে না। সুতরাং তা জায়িয আছে।


২.ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই। কারণ এই উভয় প্রকার একাউন্ট হোল্ডারদেরকে ব্যাংক কর্তৃক মুনাফা প্রদান করা হয় এবং এই উভয় একাউন্টে গচ্ছিত টাকা উম্মতের ঐক্যমতে করজের হুকুমে। আর করজের বিনিময়ে লাভ হাসিল করা শরীয়তে সূদ। অতএব ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডারদেরকে মূল টাকার অতিরিক্ত যে টাকাই প্রদান করবে তা স্পষ্ট সূদ হবে। আর সূদ বৈধ হওয়ার কোন সুরত নেই।


সুতরাং যে ব্যক্তি উল্লেখিত একাউন্টে টাকা রাখবে সে ব্যাংকের সাথে হারাম লেন-দেনে শরীক হয়ে যাবে। এ কারণে কোন মুসলমানের জন্য এই দুই প্রকার (সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিট) একাউন্টে টাকা রাখা জায়িয নেই । কেউ রেখে থাকলে সুযোগ থাকলে সে একাউন্ট পরিবর্তন করে চলতি হিসাব খুলে সেখানে টাকা রাখবে। আর যদি কোন কারণে চলতি হিসাব খুলতে অপারগ হয় এবং জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য সেভিংস একাউন্ট খুলতে বা জারী রাখতে বাধ্য হয়, তাহলে সে ইস্থিগফার করতে থাকবে এবং ঐ একাউন্টে যে সূদ আসবে তা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া মিসকিনদেরকে বা মসজিদ মাদরাসার বাথরুম নির্মাণের জন্য (কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে) দিয়ে দিবে।


ইসলামী ব্যাংকগুলোর হুকুমঃ


ইসলামী ব্যাংক একটি মহত উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের আমরা ধন্যবাদ জানাই। যদি এটিকে তারা পূর্ণ ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করেন। যার জন্য জরুরী হলো;


(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই মর্মে অনুমতি না নিয়ে থাকলে অনুমতি নিবে যে, ব্যাংক সরাসরি নিজে বাণিজ্যিক মাল আমদানি ও রপ্তানি করবে। 


(খ) প্রত্যেক শাখার কারবার প্রত্যক্ষ করার জন্য একজন বিজ্ঞ আলেমে দ্বীন থাকবে এবং সর্বময় কর্তৃত্ব ম্যানেজারের নয়, মজলিসে শূরার হাতে থাকবে। (ইসলাম আওড় জাদীদ মায়ীশাত পৃ. ১২৬)


১. ইসলামী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট সাধারণ ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্টের মত জায়িয আছে।


২. ইসলামী ব্যাংকগুলো সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিটারদের সাথে টাকা বিনিয়োগের বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাত দেখিয়ে যে চুক্তি করে থাকে তাকে শরিয়তের পরিভাষায় আকদে মুযারাবাহ বলে। আর ডিপোজিটারদের পরস্পরের মাঝে হয় আকদে মুশারাকাহ বা অংশীদারিত্বের চুক্তি। যারা সকলে মিলে তাদের অর্থ ও শ্রম ব্যাংকের নিকট সোপর্দ করেছে লাভ-লোকসানের মধ্যে শরীক হওয়ার ভিত্তিতে। ব্যাংক তাদেরকে নির্দিষ্ট পার্সেন্টিস হিসেবে লাভ দিবে। আর ক্ষতি হলে মুনাফা দ্বারা তা পূরণ করা সম্ভব না হলে ডিপোজিটারকেও তার অংশ অনুপাতে লোকসানের বোঝা নিতে হবে। বাস্তবে এমনটি হলে তা জায়িয হবে। কিন্তু সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ইসলামী ব্যাংকগুলো সূদী ব্যাংকগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে সূদী লেন-দেনের সাথেই বেশী জড়িত। তারা মুখে মুখে হালাল মুনাফা প্রদানের কথা বললেও সহীহ তরীকায় ইনভেস্ট করে না তথা বেচা-কেনার মধ্যে শরীয়ত যে-সব শর্ত আরোপ করেছে তা সঠিকভাবে রক্ষা করে না। খাতা কলমে ঠিক দেখালেও বাস্তবে করে খামখেয়ালী এবং জনবল না থাকার দোহাই দিয়ে থাকে যা অগ্রহণযোগ্য। 


তাই প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোতেও সেভিংস এবং ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খোলা জায়িয হবে না। যতক্ষণ না তারা তাদের কার্যক্রম বাস্তব ক্ষেত্রেও শরয়ী পন্থায় নিয়ে আসে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতায় তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ শরীয়ত ভিত্তিক প্রমাণ করতে না পারে। (আল মাবসূত লিস্ সারাখসী ২২/১৩৩)


অমুসলিম দেশের ব্যাংকের হুকুমঃ

অমুসলিম দেশের অমুসলিম মালিকদের ব্যাংক কর্তৃক প্রদেয় সূদ গ্রহণের ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের সমর্থন রয়েছে। যেহেতু তারা এই টাকা মুসলমানদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে এবং এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদেরকে দুর্বল করার বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে। কাজেই সূদের টাকা ব্যাংকে না ছেড়ে উঠিয়ে নিবে। তার পর সাওয়াবের নিয়ত না করে মিসকিনদেরকে দিয়ে দিবে। (ফিকহী মাকালাত ৩/২২)


সূদী টাকার হুকুমঃ

যারা শরয়ী বিধান না জানার কারণে শরীয়ত বিরোধী পন্থায় লেন-দেন করার কারণে কিছু সূদী টাকা তার মালিকানায় চলে এসেছে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শরী‘আতের বিধি-বিধানের পাবন্দি ছিলনা। কিন্তু এখন সে তাওবা করে সূদ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে, তারা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া ঐ টাকা ফকীর-মিসকিন অথবা কোন কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে দিবে। (ফিকহী মাকালাত ৩/২২)

Friday, March 31, 2023

সম্মিলিত মুনাজাতের শরয়ী বিধান

 সম্মিলিত মুনাজাতের শরয়ী বিধান


ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের শরয়ী বিধানঃ


আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন: ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। নিশ্চয় যারা অহংকার বশত: আমার ইবাদত (অর্থাৎ আমার কাছে দু‘আ করা) থেকে বিমুখ হয় বা মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা অবশ্যই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিনঃ৬০, তাফসীরে ইবনে কাছীর:৭/১৫৩)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: ‘নিশ্চয় দু‘আ ইবাদত।’  (মুসনাদে আহমাদ হা. নং ১৮৪১৬)


রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: ‘দু‘আ হলো ইবাদতের মূল।’ (সুনানে তিরমিযী হা.নং ৩৩৭১) 


নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করে না আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নারাজ হন ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ:হা. নং ৩৮২৭ , তিরমিযী হা.নং ৩৩৭৩)

 

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো থেকে বুঝা গেল যে, সকলের জন্য দু‘আ করা অপরিহার্য । চাই উহা ফরয নামাযের পরে হোক বা অন্য সময় হোক । যারা দু‘আ করবে না তারা আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধের পাত্র হবে।


নামাযের পর বা ফরয নামাযের পর কোন প্রকার বাড়াবাড়ি ব্যতিরেকে আমাদের দেশে যে মুনাজাত চালু আছে তা মুস্তাহাব আমল, বিদ‘আত নয় । কারণ, বিদআত বলা হয় ঐ আমলকে, শরী‘আতে যার কোন ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না । অথচ উক্ত মুনাজাত বহু নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়েত দ্বারা সু-প্রমাণিত।


সম্মিলিত মুনাজাত দুইভাবে হতে পারে । এক. সমবেত লোকদের মধ্যে একজন দু‘আ করবে এবং অন্যরা আমীন বলবে। দুই. একস্থানে সমবেত হয়ে সবাই নিজস্বভাবে দু‘আ করবে । এই উভয় সূরত জায়িয । এ ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর আমল ও নির্দেশ বিদ্যমান । তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করে তারা ভুলের মধ্যে আছে । যারা ইমাম-মুক্তাদির সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলে তাদের দাবিও ভিত্তিহীন। আবার যারা মুনাজাতকে জরুরি মনে করে বাড়াবাড়ি করে অর্থাৎ কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করে গালি দেয় তারাও ভুলের মধ্যে আছে ।


হাদীসে সম্মিলিত মুনাজাতের গুরুত্বের বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ফিকহের কিতাবসমূহেও ইমাম-মুক্তাদির সম্মিলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। অসংখ্য হাদীস বিশারদগণের রায়ও সম্মিলিত মুনাজাতের স্বপথে স্পষ্ট বিদ্যমান। এমতাবস্থায় প্রচলিত সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলা হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত এর শরয়ী বিধান-মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.)


নিম্নে মুনাজাত স্বপক্ষে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ


১. হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন: ‘যদি কোন দল একত্রিত হয়ে তাদের একজন দু‘আ করে থাকে আর অপররা ‘আমীন, আমীন’ বলে থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের দু‘আ অবশ্যই কবুল করেন।’ (মুস্তাদরাক হাকেম: ৫৪৭৮)


২. হযরত সালমান রা. বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ইরশাদ করেছেন: ‘যদি কোন জামা‘আত কোন বিষয় প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার দরবারে হাত তুলে আল্লাহ তা‘আলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় যে, তিনি তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে দিয়ে দিবেন ।’ (সুনানে আবূ দাউদ: হা. নং ১৪৮৮)


৩. ইতিহাসে হযরত আলা আল-হাযরামী রা. এর ঘটনা সুপ্রসিদ্ধ। বাহরাইনের মুরতাদদের বিরুদ্ধে ১১ হিজরীতে যে লড়াই হয়েছিল তাতে তিনি সিপাহসালার ছিলেন। এই ঘটনার মধ্যে আছে যে, মুসলিম বাহিনী একস্থানে যাত্রা বিরতি করলে কাফেলার সকল উট রসদপত্রসহ পলায়ন করলো । ঘটনার শেষে আছে যে যখন ফজরের আযান হলো। তখন হযরত আলা আল-হাযরামী রা.নামাযের ইমামতি করলেন । নামাযের পর দুজানু হয়ে বসে অত্যন্ত বিনয় ও কাতরতার সঙ্গে দু‘আয় মশগুল হয়ে গেলেন । কাফেলার সকলেই তার সাথে সম্মিলিতভাবে দু‘আ করতে লাগলেন । এ অবস্থায় সূর্য উদিত হলো তবুও তারা দু‘আয় মশগুল রইলেন । এক পর্যায়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সন্নিকটে একটি বড় জলাশয় সৃষ্টি করে দিলেন । সবাই সেখানে গিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ করলেন এবং গোসল করলেন । বেলা কিছু চড়ার পর একে একে সকল উট সমস্ত রসদপত্রসহ ফিরে আসতে লাগলো । আরবী মূল পাঠ নিম্নরূপ: (আল-বিদায়া ওয়ান নেহায়াঃ৬/৩২৪)


 فلما قضي الصلوة جثي علي ركبتيه وجثا الناس و نصب في الدعاء و رفع يديه وفعل الناس مثله 

فلما قضي صلوته جثي  لركبتيه وجثا الناس فنصب في الدعاء ونصبوا معه  -مكتبة دار الكتب العلمية


(তারীখে তাবারী ২য় খণ্ড ২৮৭ পৃষ্ঠায়) 

                           

৪. আসওয়াদ আমেরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ফজরের নামায আদায় করলাম, যখন তিনি সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন তখন উভয় হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন । (ইলাউস সুনান হা.নং ৯৩৭ )


৫. হযরত আবূ উমামা বাহেলী রা. বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, কোন দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? ইরশাদ হলো, শেষ রাত্রে (তাহাজ্জুদের পর ) এবং ফরয নামাযের পর । (সুনানে তিরমিযী হা.নং ৩৪৯৯)


৬. ইয়া‘লা বিন শাদ্দাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে কি কোন অপরিচিত ব্যক্তি আছে, অর্থাৎ আহলে কিতাব? আমরা বললাম, না ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি দরজা বন্ধ করার আদেশ দিলেন এবং বললেন, ‘তোমরা সকলেই হাত উত্তোলন করো এবং বলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু!’ আমরা সকলেই এক সাথে হাত উত্তোলন করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে এই কালেমা দিয়ে প্রেরণ করেছেন এবং এর উপর জান্নাতের ওয়াদা করেছেন আর আপনি ওয়াদা খেলাফ করেন না। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো ,তোমাদের মাফ করে দেয়া হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদঃ হা.নং১৭১২৬)


উল্লেখিত হাদীসসমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, একজন দু‘আ করবে আর অন্যরা সবাই আমীন বলবে, এভাবে সকলের দু‘আ বা সম্মিলিত মুনাজাতের কবুল হওয়া অবশ্যম্ভাবী।


হযরত আলা আল-হাযরামী রা. তার জামা‘আতের সকলকে নিয়ে ফজরের নামাযের পর যে  সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন, সাহাবাগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যদি এমনটি করতে না দেখতেন তাহলে তারা কখনো এমনটি করতেন না।


ফরয নামাযের পর দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশীঃ


রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযের পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন। আর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু‘আ সর্বদা কবুল হতো । তাই হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নামাযের পর হাত উঠিয়ে দু‘আ করবেন আর সাহাবাগণ তার বিরুদ্ধাচরণ করনার্থে হাত না উঠিয়ে বসে থাকবেন এটা কল্পনাই করা যায় না ।


বিধায় উল্লেখিত হাদীসসমূহ দ্বারা ফরয নামাযের পরে ইমাম মুক্তাদি সকলের জন্য সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল । অতএব, সম্মিলিত মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়াই হাদীসসমূহের মর্ম ও সমষ্টিগত সারকথা।


যারা ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতকে বিদ‘আত বলে থাকেন তারা বলেন, হাদীসের মাঝে ফরয নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাতের কথা পাওয়া যায় না, কিছু হাদীসে শুধু দু‘আর কথা পাওয়া যায়, কিন্তু তাতে হাত তোলার কথা নেই। আবার কোন জায়গায় হাত তোলার কথা আছে, কিন্তু একাকিভাবে সম্মিলিতভাবে নয় । আবার কোনটিতে সম্মিলিত হওয়ার কথা আছে, কিন্তু ফরয নামাযের পরে  হওয়ার কথা উল্লেখ নেই। অতএব, এ সকল হাদীস দ্বারা ফরয নামাযের পরে সম্মিলিত মুনাজাত প্রমাণিত হয় না ।


তাদের কথা ঠিক নয়। কারণ, আমরা ইতিপূর্বে আলা আল-হাযরামী রা. এর সকল সাথীকে নিয়ে ফজরের ফরয নামাযের পরে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার কথা উল্লেখ করেছি। 


তাদের অভিযোগের ভিত্তিই সহীহ নয়। কারণ শরী‘আতে এমন কোন বিধান নেই যে, প্রত্যেক ইবাদতের সকল অংশ কোন একটি আয়াত বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে। এটা তেমনি যেমন নামাযের বিস্তারিত নিয়ম, আযানের সুন্নাত তরীকা, উযূর সুন্নাত তরিকা ইত্যাদি একত্রে কোন হাদীসে বর্ণিত নেই। বিভিন্ন হাদীসের সমষ্টিতে তা ছাবিত হয়, তারপরেও তা সকল উলামায়ে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য ।


যারা ফরয নামাযের পরে সর্বাবস্থায় ইজতেমায়ী মুনাজাতের বিরোধী এবং সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই উঠে পড়েন, তাদের এ কর্ম-কাণ্ড দ্বারা নামাযের পর যে মাসনূন ও জিকির দু‘আ ইত্যাদি রয়েছে তা তরক করা হয় এবং ফরয ও সুন্নাতের মাঝখানে কিছু সময়ের ব্যবধান করার যে হুকুম হাদীস শরীফে এসেছে তাও লঙ্ঘন করা হয় ।


তাদের জন্য নিম্নের হাদীসটি বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য, আবু মিরছা রা. বর্ণনা করেন, একবার আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে নামায পড়ছিলাম। হযরত আবু বকর ও উমর রা. ঐ নামাযে উপস্থিত ছিলেন। তারা  প্রথম কাতারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এর সাথে দাঁড়াতেন। আমাদের সাথে এক ব্যক্তি ছিল, যে উক্ত নামাযে তাকবীরে উলা থেকেই উপস্থিত ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নামায শেষ করে সালাম ফিরালেন এমনভাবে যে, উভয়দিকে আমরা তার গণ্ডদয় দেখতে পেলাম । অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ঘুরে বসলেন। তখন ঐ তাকবীরে উলায় উপস্থিত ব্যক্তি সুন্নাত নামায পড়ার জন্য দাঁড়িয়ে পড়লো। তৎক্ষণাৎ হযরত উমর রা. লাফিয়ে উঠলেন এবং ঐ ব্যক্তির কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, বসে পরো, পূর্ববর্তী কিতাবধারীদের ধর্মীয় পতন হয়েছে যখন তারা (ফরয ও সুন্নাত ) নামাযের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করতো না। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  হযরত উমর রা. এর কাজ দেখে দৃষ্টি উঠালেন এবং বললেন, ‘হে খাত্তাবের পুত্র! আল্লাহ তোমাকে সঠিক পন্থী বানিয়েছেন।’ (সুনানে আবূ দাঊদ হা.নং ১০০৭)


এ সকল বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, নামাযের পর ইমাম মুক্তাদি সকলের জন্য ওয়াজিব মনে না করে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা মুস্তাহাব ।


উল্লেখ্য, কোন আমল  মুস্তাহাব প্রমাণের জন্য নবীজীর আমল বিদ্যমান থাকা জরুরী নয় বরং মৌখিক হাদীস দ্বারাও মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। যেমন নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  থেকে আযান দেয়া ইশরাক, চাশতের নামায পড়া তাহিয়্যাতুল উযূ ও তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া প্রমাণিত নাই। তারপরেও মৌখিক হাদীস বিদ্যমান থাকায় উলামায়ে কেরাম  এ আমলগুলোকে মুস্তাহাব বলেছেন । (ফয়যুল বারী  ২/৩৫১)


আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সঠিক বিধান বুঝার এবং সুন্নাত মুতাবিক সহীহ আমল করার তাওফীক দান করুন । আমীন ।

Wednesday, March 29, 2023

নামাযের ওয়াক্ত

 নামাযের ওয়াক্ত


আল্লাহ তা‘আলা নামাযকে সময়ের সাথে খাস করে দিয়েছেন। প্রত্যেক নামাযের নির্ধারিত সময় রয়েছে। প্রত্যেক নামাযকে তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা ফরয। গ্রহণযোগ্য কোনো ওযর ছাড়া এক নামায অন্য নামাযের সময়ে আদায় করলে কবীরা গুনাহ হবে। সবাই যেন নামাযের সঠিক সময় জেনে সময় মতো নামায আদায় করতে পারে সেজন্যই আমাদের এই প্রয়াস।


হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মে‘রাজ থেকে এসে নামাযের প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং, নামাজের ওয়াক্ত এসব কিছু সাহাবাদের রা. যুহরের সময় জানালেন। ফজরের সময় যেহেতু সকলকে একত্র করা কঠিন ছিল, তাই এসব কিছু যুহর থেকে শুরু করলেন। এজন্য হাদীসের কিতাবেও নামাযের ওয়াক্তের বর্ণনা যুহর থেকে শুরু করা হয়েছে।


যুহরের ওয়াক্ত: দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন যুহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। এবং প্রতিটা জিনিসের আসল ছায়া ব্যতীত তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত যুহরের ওয়াক্ত থাকে। জুম‘আ আর যুহরের নামাযের ওয়াক্ত এক ও অভিন্ন। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৩)


বি.দ্র.: ঠিক দুপুরে প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যে পরিমাণ থাকে তাকে ঐ জিনিসের আসল ছায়া বলা হয়। কোনো ইমামের মতে আসল ছায়া ছাড়া প্রত্যেক জিনিসের ছায়া যখন একগুণ হয়ে যায় তখনই যুহরের সময় হয়ে যায়। আমাদের হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া এমন না। তাই একান্ত অপারগতা ছাড়া এই মতের উপর আমল করা যাবে না।


যুহর ও জুম‘আর নামাযের উত্তম সময়ঃ 

শীত কালে যত তাড়াতাড়ি যুহরের নামায পড়া যায় তত ভাল। গরমের দিন এক মিছিলের শেষ চতুর্থাংশে পড়া ভাল। তবে জুম‘আর নামায সব মৌসুমে আউয়াল ওয়াক্তে পড়া উত্তম। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৯)


জুম‘আর নামাযের উত্তম সময়ঃ 

যখন যুহরের সময় হবে তখন সাথে সাথে আযান হবে এবং তখনই মসজিদে রওনা করা জরুরী হয়ে যাবে। তিনটি জিনিস এক সাথে হবে: ১. ওয়াক্ত হওয়া ২. আযান হওয়া ৩. মসজিদে রওনা হওয়া। তারপর ১৫/২০ মিনিট  বা সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা বয়ান হবে। বয়ান চলাকালীন যাদের উযূ প্রয়োজন তারা উযূ করে নিবে। বয়ান শেষে জুম‘আর দ্বিতীয় আযান হবে। আযান শেষ হলে খুতবা তারপর ফরয নামায হবে। সাধারণত শীতকালে দিন ছোট হওয়ার কারণে একটু আগে ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। সর্বোচ্চ দুপুর সোয়া একটা থেকে দেড়টার মধ্যে পুরো নামায শেষ হয়ে যাবে। যেহেতু জুম‘আর আগে বয়ানের জন্য দীর্ঘ সময় পাওয়া যায় না তাই নামায শেষে পুনরায় দীনী বয়ান বা মাসআলা মাসায়েলের আলোচনা হতে পারে।


জুম‘আর নামাযঃ

জুম‘আর নামায মোট বার রাকা‘আত। কাবলাল জুম‘আ চার রাকা‘আত, ফরয দুই রাকা‘আত, বা‘দাল জুম‘আ চার রাকআত, ওয়াক্তিয়া সুন্নাত দুই রাকা‘আত। কোনো কোনো বড় গ্রামে এখনও আখেরী যুহর বা এহতিয়াতি যুহর পড়ে, এগুলি জায়েয নেই। বাংলাদেশের বড় গ্রামগুলো শহরের হুকুমে। সেখানে আখেরী যুহর পড়লে গুনাহ হবে। হ্যাঁ, এখনো যদি কোনো অজপাড়া থাকে যেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস পাওয়া যায় না, রাস্তা ঘাট নেই, দোকান পাট নেই, কম সংখ্যক লোক ব্যবসা করে তাহলে তারা জুম‘আ ও ঈদ পড়বে না। সেখানে ভুলক্রমে জুম‘আ পড়ে ফেললে চার রাকা‘আত ইহতিয়াতি যুহর পড়ে নিবে।


আসরের নামাজের ওয়াক্তঃ

যুহরের নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আসরের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এর মাঝখানে কোনো বিরতী নেই। সূর্য অস্থ যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আসরের ওয়াক্ত থাকে। তবে সূর্য ডুবার ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত উত্তম সময়। । (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৫)


আসরের মাকরূহ ওয়াক্তঃ

সূর্য অস্থ যাওয়ার ১৫ মি. আগ থেকে মাকরূহ সময় শুরু হয়ে যায়। এই সময় নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাকরূহ হবে। ইচ্ছা করে এই সময়ে নামায পড়লে গুনাহ হবে। আর যদি এমন হয় যে, কেউ ঐ দিনের আসরের নামায আদায় করেনি ইতিমধ্যে সূর্য ডুবে যাচ্ছে তাহলে তাকে ঐ সময়ই আসর পড়তে হবে। কিন্তু এটা মাকরূহে তাহরীমা হবে। তবে ফরজের যিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে। । (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩৫)


আসরের উত্তম সময়ঃ 

আসর সবসময় দেরি করে পড়া ভালো। কেননা আসরের পরে কোনো নফল পড়া যায় না। সুতরাং আসরের সময় হওয়ার প্রায় আধাঘণ্টা বা পোনে এক ঘণ্টা পরে আসর পড়বে। যাতে আসরের আগে বেশি করে নফল পড়া যায়। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৯)


মাগরিবের ওয়াক্তঃ

বেলা সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের নামাযের ওয়াক্ত এবং ইফতারের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। (ইফতার দেরি করে করা মাকরূহ) মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে আযান ইকামাত দিয়ে নামায আদায় করা উত্তম। পশ্চিম আকাশ বেশ কিছু সময় লালিমা থাকে, এই লালিমা শেষ হওয়ার পর একটু সাদা ভাব হয়। সাদা ভাব শেষ হওয়ার পর আকাশ কালো হতে শুরু করে। আকাশ কালো হওয়ার আগ পর্যন্ত মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে। অর্থাৎ আকাশের অবস্থা যতক্ষণ লাল ও সাদা মিশ্রিত থাকে ততক্ষণ মাগরিবের ওয়াক্ত থাকে। মাগরিবের সময় প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। আমাদের দেশের অনেকে মনে করে মাগরিবের সময় ১৫-২০ মি. থাকে। যার কারণে এই সময়ের ভিতর মাগরিব পড়তে না পারলে আর পড়ে না। মনে করে কাযা যখন হয়ে গেল তখন পরে এক সময় পড়ে নিব। অথচ সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে নামায পড়লেও আদায় হয়ে যাবে। কোনো ইমামের মতে লাল শেষ হয়ে সাদা শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হয়ে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। আমাদের হানাফী মাযহাবে এ মতের উপর ফাতাওয়া নয়। তাই একান্ত ঠেকা ছাড়া ঐ সময়ে ইশা পড়বে না। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৫-২৬)


মাগরিবের উত্তম সময়ঃ 

মাগরিব নামায ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে পড়া উত্তম। কিন্তু রমযান মাসে একটু দেরি করে পড়তে বলা হয়েছে। যাতে আগে ইফতার করে নেয়া যায়। কারণ আগে ইফতার করতে পারলে নামায খুশু-খুযুর সাথে হবে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩১)


ইশার নামাযের ওয়াক্তঃ

মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইশার ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। ইশার ওয়াক্ত ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে। তথা সাহরীর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে। (আল বাহরুর রায়েক ১)


ইশার উত্তম সময়ঃ

রাতের এক তৃতীয়াংশের শেষের দিকে ইশা পড়া উত্তম। অর্থাৎ ইশার সময় হওয়ার সোয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে ইশা পড়া উত্তম। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩০)


ইশার মাকরূহ সময়ঃ 

বিশেষ কোনো ওযর ছাড়া মধ্য রাতের পরে ইশা পড়া মাকরূহ। রুগীর সেবা ওযরের মধ্যে গণ্য হতে পারে কিন্তু ওয়ায মাহফিল ওযরের মধ্যে গণ্য হবে না। তাই ওয়ায মাহফিলেও যথা সময়ে ইশার নামায আদায় করা জরুরী। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩১)


ফজরের ওয়াক্তঃ

সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকে। পূব আকাশের উত্তর-দক্ষিণে যখন সাদা একটা আলো ছড়ায় তখন ফজরের ওয়াক্ত হয়। সূর্যের কিনারা দেখা পর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকে। ফজরের সময়ের মধ্যেও মাগরিবের মতো আকাশ সাদা ও লাল হয়। ফজরে প্রথমে আকাশ সাদা হয় তারপর লাল হয় আর মাগরিবে প্রথমে লাল হয় এরপর সাদা হয়। ফজরের সময়ও প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৩)


ফজরের উত্তম সময়ঃ 

ফজরের সময় আলো উত্তর-দক্ষিণে ছড়িয়ে যাওয়ার পরে নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ফজর পড়তে বলেছেন। এ সময় ফজর পড়া উত্তম এবং বেশি সাওয়াব লাভের কারণ। কিন্তু রমযান মাসে আউয়াল ওয়াক্তে ফজর পড়ার মধ্যে বেশি সাওয়াব। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪২৮-২৯)


ইশরাকঃ 

সূর্য উঠা শুরু হওয়া থেকে নিয়ে ১৫-২০মি. পর এই নামাযের সময় শুরু হয় এবং দ্বিপ্রহর পর্যন্ত এর সময় থাকে। সময় হওয়ার পর পর ইশরাক পড়া ভাল। এই নামায নফল। দুই চার রাকা‘আত যা পারা যায় পড়া। এই নামায যে পড়ে, সারা দিনের সমস্ত প্রয়োজনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। (আততারগীব ওয়াত তারহীব হা.নং ১০০৯)


চাশতঃ 

ইশরাক এবং চাশতের নামাযের সময় এক। তবে বেলা এগারটার দিকে চাশতের নামায পড়া ভাল। চাশতের নামায সর্বোচ্চ বার রাকা‘আত। এই নামাযও নফল। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২৪)


যাওয়ালঃ 

যখন যুহরের ওয়াক্ত শুরু হয় তখন সাথে সাথে যাওয়ালের ওয়াক্ত শুরু হয়। যাওয়ালের নামায ২-৪ রাকা‘আত। এই নামাযকে দিনের বেলার তাহাজ্জুদ বলা হয়। এর নেকীও তাহাজ্জুদ নামাযের মতো এবং হাদীসে এসেছে, এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আসমানে সব দরজা খুলে দেন। (আততারগীব ওয়াত তারহীব হা.নং ৮৫৭,৮৫৯,৮৬২)


আউয়াবীনঃ 

মাগরিবের ফরযের পর এই নামায। মাগরিবের দুই রাকা‘আত সুন্নাত ছাড়া ছয় রাকা‘আত পড়তে পারলে উত্তম। তবে মাগরিবের দুই রাকা‘আত সুন্নাতসহ পড়লেও হবে। (গুনইয়াতুল মুতামালি পৃ.৪৩০)


তাহাজ্জুদঃ 

এই নামায রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়তে হয়। উত্তম হলো শেষ রাতে পড়া। নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পূর্ণ সুস্থ ছিলেন তখন আট রাকা‘আত পড়তেন। যখন একটু বয়স বাড়লো তখন ছয় রাকা‘আত পড়তেন। যখন আরো বয়স বাড়লো, শরীর ভারী হয়ে গেল তখন চার রাকা‘আত পড়তেন। এই নামায ৪-৮ রাকা‘আত পড়তে হয়। এই নামায পড়ার জন্য ইশার নামায পড়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে ভালো হয়। তবে বিশেষ কারণে কেউ যদি এই নামায উত্তম সময়ে পড়তে না পারে তাহলে সে যদি ইশার সুন্নাতের পর বিতিরের আগে দুই চার রাকা‘আত তাহাজ্জুদের নিয়তে পড়ে নেয় তাহলে আশা করা যায় এতেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাহাজ্জুদের নেকী দান করবেন। (গুনইয়াতুল মুতামালি পৃ. ৪৩২)


নামাযের মাকরূহ ওয়াক্ত: তিনটি সময় আছে যখন যেকোনো ধরণের নামায, জানাযার নামায ও সিজদায়ে তিলাওয়াত নিষেধ: 


১. সূর্য উঠার সময়।


২. সূর্য যখন মাথার ঠিক উপরে থাকে তখন। (ক্যালেন্ডারে দ্বিপ্রহর বলে এই সময়কে বুঝানো হয়)


৩. সূর্য অস্থ যাওয়ার সময়। তবে ঐদিনের আসর না পড়ে থাকলে এই মাকরূহ ওয়াক্তে পড়া যাবে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩২-৩৩)


তিনটি সময় এমন আছে যখন নফল নামায পড়া মাকরূহ। তবে ঐ সময়ে কেউ উমরী কাযা পড়তে চাইলে পড়তে পারবে।


১. ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নাত ছাড়া অন্য কোনো সুন্নাত বা নফল পড়া যায় না। এমনিভাবে ফজরের ফরয নামায পড়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত কোনো নফল নামায পড়া যায় না।


২. সূর্য্য যখন উঠতে শুরু করে তখন থেকে ১৫ মি. পর্যন্ত নফল নামায পড়া যায় না।


৩. আসরের নামায পড়ার পর থেকে সূর্য অস্থ যাওয়া পর্যন্ত কোনো নফল পড়া যায় না। (আল বাহরুর রায়েক ১/৪৩৭)