সর্বপ্রথম মূর্তিপূজারি জাতি
উল্লিখিত আয়াতসমূহে হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামের উম্মতের অবস্থা ও নূহ ‘আলাইহিস সালামের সাথে তাদের সংলাপের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
নবী-আগমনের ধারাবাহিকতায় হযরত আদম ‘আলাইহিস সালাম যদিও সর্বপ্রথম নবী, কিন্তু তার আমলে ঈমানের সাথে কুফর ও গোমরাহীর মোকাবেলার পর্যায় ছিল না। এ ব্যাপারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর বর্ণনায় এক হাদীসে এসেছে
كَانَ بَيْنَ اٰدَمَ وَنُوْحٍ عَشَرَةُ قُرُوْنٍ كُلُّهُمْ عَلَى الْإِسْلَامِ.
অর্থঃ আদম ‘আলাইহিস সালাম ও নূহ ‘আলাইহিস সালামের মাঝখানে এমন দশ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে, যাদের সকলেই তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল।
বস্তুত পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম নূহ ‘আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ই মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। তাই তার যামানা থেকেই ঈমান ও কুফরের সাথে মোকাবেলার পর্যায় আসে। নিম্নোক্ত আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে,
کَانَ النَّاسُ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً ۟ فَبَعَثَ اللهُ النَّبِیّٖنَ مُبَشِّرِیْنَ وَمُنْذِرِیْنَ ۪ وَ اَنْزَلَ مَعَهُمُ الْکِتٰبَ بِالْحَقِّ لِیَحْكُمَ بَیْنَ النَّاسِ فِیْمَا اخْتَلَفُوْا فِیْهِ
অর্থঃ সকল মানুষ একই জাতিসত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা পয়গামবর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব। যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৩)
বলা হয়, হযরত আদম ‘আলাইহিস সালামের শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত ছিল। কুফর বা কাফেরদের তখন অস্তিত্ব ছিল না। কুফর ও শিরকের সাথে ঈমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামের আমল থেকেই শুরু হয়।
আর রিসালাত ও শরী‘আতের দিক দিয়ে হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামই জগতের প্রথম রাসূল। এ ব্যাপারে মুসলিম শরীফের শাফা‘আত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত লম্বা এক হাদীসে হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামকে সর্বপ্রথম রাসূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
يَا نُوْحُ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إلَى الْأَرْضِ
অর্থঃ হে নূহ, আপনি ভূপৃষ্ঠের সর্বপ্রথম রাসূল।
এ ছাড়া মহাপ্লাবনে সারা পৃথিবী ডুবে যাওয়ার পর যারা প্রাণে বেঁচে ছিল, তারা ছিল হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালাম ও তার নৌকায় অবস্থিত সঙ্গী-সাথী। তাদের দিয়েই পৃথিবী নতুনভাবে আবাদ হয়েছে। এ কারণেই হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামকে “ছোট আদম” বলা হয়। আর তাই তো পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতসমূহে পয়গামবরগণের কাহিনী বর্ণনার সূচনা তার দিয়েই করা হয়েছে।
এই কাহিনীতে সাড়ে নয়শ বছরের সুলম্বা হায়াতে হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামের নবীসুলভ চেষ্টা-প্রচেষ্টা, উম্মতের বিরুদ্ধাচরণ এবং পরিণতিতে গুটিকতক ঈমানদার ছাড়া অবশিষ্ট সবার প্লাবনে ডুবে যাওয়ার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। এর বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপঃ
হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালাম হযরত আদম ‘আলাইহিস সালামের অষ্টমপুরুষ। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, তিনি হযরত আদম ‘আলাইহিস সালামের পুত্র হযরত শীস ‘আলাইহিস সালামের বংশধর ছিলেন। হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামের আসল নাম “শাকির”। কোন কোন রেওয়ায়াতে “সাকান” এবং কোন কোন বর্ণনায় “আবদুল গাফফার” নাম বর্ণিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় যে, হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালামের যুগটি হযরত ইদরীস ‘আলাইহিস সালামের আগে ছিল না, বরং পরে ছিলো। তবে অধিকাংশ সাহাবীর মতে, হযরত নূহ ‘আলাইহিস সালাম ইদরীস ‘আলাইহিস সালামের আগে ছিলেন। (আল বাহরুল মুহীত)
মুসতাদরাকে হাকিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নূহ ‘আলাইহিস সালাম চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়্যাতপ্রাপ্ত হন এবং প্লাবনের পর ষাট বছর জীবিত ছিলেন।
নূহ ‘আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় ইরাকে বসবাসরত ছিল এবং তারা বাহ্যত সভ্য জাতি হলেও তারাই পৃথিবীতে মূর্তিপূজার সূচনা ও প্রচলন ঘটিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment