Sunday, June 11, 2023
Tuesday, April 25, 2023
অমুসলিম এন.জি.ও-দের ব্যাপারে মুসলমানদের করনীয়
অমুসলিম এন.জি.ও-দের ব্যাপারে মুসলমানদের করনীয়
যাবতীয় বিধর্মী আগ্রাসন থেকে স্বীয় দীন ও ঈমানের হিফাজত করার জন্য মুসলমানদের সর্বতোভাবে তৎপর হতে হবে। এ জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা কর্তব্যঃ
ক) দীনী তাবলীগ ও তা‘লীমের প্রতি বেশী বেশী গুরুত্বারোপ করা। প্রত্যেক মাদ্রাসার আসাতিযাগণ মাদ্রাসা এলাকায় এবং নিজের বাড়ীর এলাকায় নিঃস্বার্থ ভাবে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিবেন। যে সমস্ত এলাকায় এখনও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেসব এলাকায় বিশেষ করে উত্তর বঙ্গের এবং দক্ষিণ বঙ্গের অন্ততঃ প্রতিটি থানায় একটি করে খালিস দীনী কওমী মাদ্রাসা কায়িম করা অপরিহার্য। কারণ, প্রকৃতপক্ষে বর্তমান যমানায় বেসরকারী কওমী মাদ্রাসাগুলোই দীনের দূর্গ হিসেবে পরিগণিত; ক্যান্টনমেন্টের আশে পাশের লোকেরা যেমন নিরাপত্তা পায়, তেমনিভাবে মাদরাসার আশপাশের লোকের বহু রকম বদদীনী ফিৎনা থেকে নিরাপদ থাকে।
খ) আজ থেকে ৪০/৫০ বৎসর পূর্বে মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী রহ. খৃষ্টানদের অশুভ তৎপরতা সম্পর্কে মুসলিম জাতিকে সচেতন করার লক্ষ্যে বহু সংখ্যক ছোট ছোট পুস্তক রচনা করেছিলেন, কিন্তু জাতি তখন থেকে অদ্যাবধি মাওলানা ফরিদপুরীর দিলের ব্যথা বুঝতে সক্ষম হয়নি; তাই এখনও সময় আছে, তাঁর লেখা পুস্তক সমূহের ব্যাপক প্রচার ও বাস্তব কর্মসূচীর মাধ্যমে এখনও খৃষ্টানদের অপতৎপরতার মুকাবিলা করে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব। এ কথা সত্য যে, দেশবাসী এখনও সচেতন না হলে; এদেশ ও জাতির ভবিষ্যত সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। মাওলানা ফরিদপুরী রহ. প্রণীত সেই সকল বই সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে।
১। বৃটিশ শাসনের বিষ্ফল
২। পাদ্রীদের গোমর ফাঁক
৩। শক্র থেকে হুশিয়ার থাক
৪। আল্লাহর প্রেরিত ইনজীল কোথায়?
৫। ইংরেজী পড়িব না কেন? ইত্যাদি
গ) প্রত্যেক আলেম, ওয়ায়িয, লেখক, সাহিত্যিক, মুবাল্লিগ, মু‘আল্লিম প্রমুখ সকলে তাদের স্ব-স্ব লিখনী, ওয়াজ ও তাদের বক্তব্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে খৃষ্টানদের সেবার মূল লক্ষ্য যে মধুর নামে বিষ পান করানো, তা তুলে ধরতে সচেষ্ট হবেন এবং এদেশের অধিকাংশ এন,জি,ও (সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান) গুলো যথা ব্র্যাক, কারিতাস, কেয়ার, গ্রামীণ ব্যাংক, নিজেরা করি, ইত্যাদি খৃষ্টানদের অর্থে তাদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে, তা সপ্রমাণে তুলে ধরতে প্রয়াসী হবেন। এদের হাসপাতালে রোগীদের ধোঁকা দেয়ার পলিসি সম্পর্কে বুঝাতে হবে যে, প্রথমে এরা ভুয়া নকল ঔষধ দিয়ে মুহাম্মদের নামে খেতে বলে।
ঐ ঔষধে কাজ না হলে, পরের দিন আসল ঔষধ দিয়ে “যীশুর” নামে খেতে বলে। তারপর রোগ ভালো হলে বলে দেখ, তোমাদের নবী ঠিক হয়ে থাকলে, একই ঔষধে তুমি সুস্থ হলে না কেন? কাজেই শুন, মুহাম্মদ (নাউযুবিল্লাহ) মুর্খ ছিলেন, শয়তানী শক্তি দ্বারা পরিচালিত ছিলেন। আরববাসীরা জাহিল ছিল, তাই মুহাম্মদ তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে তার দীন চালু করতে পেরেছিলেণ। অথচ তার ধর্ম বেকার। তাই সারা দুনিয়ার (আরব বিশ্বসহ?) মুসলমানরা গরীব।
অপর দিকে যীশু শিক্ষিত লোক ছিলেন। তার ধর্মই ঠিক। তিনি খৃষ্টানদের জন্য আর্শিবাদ করে গেছেন; তাই বিশ্বের সব খৃষ্টানরা ধনী ইত্যাদি। ইসলামের ধারক-বাহকদের দায়িত্ব যে, তারা মানুষকে সতর্ক করবেন যে, খৃষ্টান মিশনারী চক্রের রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রীজ, স্কুল -কলেজ, দুস্থ ও গরীবদের সেবা সবই একই লক্ষ্যে, অর্থাৎ সেবার মাধ্যমে পরিচিত হয়ে উপকারী সেজে তাদেরকে খৃষ্টান ধর্মের দাওয়াত দেয়া ও খৃষ্টান বানানো। কথায় বলে, মানুষ উপকারের দাস। এভাবেই তারা সহজে নিরীহ মুসলমানদেরকে বশ করছে। যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে তারা বিনা যুদ্ধে সেবার নামে এদেশ দখল করতে পারে।
তারা কোন এলাকায় তাদের মিশন অনুযায়ী কাজ করার প্রোগ্রাম বানালে প্রথমেই তারা এলাকার প্রভাবশালী নেতা ও মাতাব্বার ধরনের লোকদেরকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলে। কিছু বখাটে যুবকদের চাকুরীর সুবিধা দিয়ে দলে ভিড়ায়। আর উচ্ছৃঙ্খল বেহায়া কিছু মেয়েদেরকে চাকুরী দিয়ে গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের চাকুরীর লোভ দেখিয়ে বাড়ীর বাহিরে নিয়ে আসে। হাজারো পুরুষ বেকার রয়েছে, কিন্তু তাদেরকে ওরা চাকুরী না দিয়ে পর্দানশীন গৃহবধুদের নিয়ে টানা হেঁচড়া করে। তাদের পরিকল্পনা, তারা মুসলিম মেয়েদেরকে বাড়ির বাহিরে করেই ছাড়বে। যাতে করে যিনার সয়লাব বইতে পারে। তারা মেয়েদের শ্লোগান শিখায় স্বামীর কথা মানব না ভাঙ্গা ঘরে থাকব না গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়ব না ইত্যাদি।
আফসোসের বিষয় আজ মুসলমানদের দীনী ও আর্থিক দৈন্যের সুযোগ নিয়ে সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে তারা মুসলমানদের ছেলেদের দ্বারা নিজেদের সকল প্রোগ্রাম বাস্তবায়িত করছে। নির্বোধ মুসলিম বাচ্চারা চারটা পয়সার জন্য এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা, মা বোন ও অবলা নারীর সতীত্ব-সম্ভ্রম সবই খ্রীষ্টানদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এভাবে তারা কলুর বলদের ভূমিকা পালন করে এদেশটাকে ধ্বংসের অতল গহবরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব এন.জি.ও দের খবরগীরি করার জন্য কেউ নেই যে, তারা সেবা করছে, না দেশটা ধ্বংস করছে। সাংবিধানিক ভাবে এরা যদিও ওয়াদাবদ্ধ যে, তারা শুধু সেবাই করবে, কোনরূপ খৃষ্টান ধর্মের প্রচার করবে না; বা রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
কিন্তু এই দস্তাবীজের ওয়াদা তাদের কাছে মূল্যহীন। সেবার আড়ালে তারা স্বার্থ প্রণোদিত সবকিছুই করে যাচ্ছে। এমন কি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তারা দেশদ্রোহীদের ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সরকার এদের সামনে নির্বিকার, বাকরুদ্ধ। কারণ এদের খুঁটি অত্যন্ত মজবুত। যখনই এদের বিরুদ্ধে কিছু করতে যাবে, বিদেশী প্রভুদের দ্বারা তাদেরকে ক্ষমতা থেকে আউট করে দেয়া হবে। এ নাজুক মুহুর্তে সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না। ইসলাম ও দেশ উভয়টাই হুমকির সম্মূখীন হয়ে আছে। বাস্তব এটাই যে, যারা ক্ষমতায় আসে তারা নিজেদের গদী সামলাতে ব্যস্ত, তারা তাদের ক্ষমতার মোহে এদেরকে কিছু বলতে সাহস পায় না। সুতরাং এ মুহুর্তে উলামায়ে কিরামের সজাগ হতে হবে। জন সাধারণকে সচেতন করতে হবে। এদের মুখোশ জাতির সামনে উম্মোচন করে দিতে হবে।
ঘ) প্রত্যেক এলাকায় ধনীদের সাহায্যে উলামাগণের পরামর্শে মুসলিম মিশন গড়ে তুলে দুস্থ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে হবে, বস্ত্রহহীনদের বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে, যারা চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, যারা বে-কার বিনা সূদে সহজ কিস্তি তে তাদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে। ইয়াতীম ও বিধবাদের যাকাতের অর্থে ভরণ-পোষণ করতে হবে। তাহলে এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিজাতীয় সেবকের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ দেশের নিরীহ লোকেরা দীন-ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে; খৃষ্টানরা বৃহত্তর দিনাজপুরে বা পার্বত্য চট্টগ্রামে অদূর ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র কায়িম করতে চায়। সেখানে তারা ডবল মূল্য দিয়ে প্রচুর জমি খরিদ করছে এবং যারা খৃষ্টান ধর্ম কবুল করছে, তাদের অনেককে সেখানে পূনর্বাসন করে। এভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তারা আরেকটি “ইসরাঈল” রাষ্ট্র কায়েম করে এ দেশে তাদের প্রভুত্ব পুরাপুরী প্রতিষ্ঠিত কতে চায়। তাই আজ মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের এ অশুভ তৎপরতা রোধ করতে হবে। এ মুহুর্তেই সকলের নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা অপরিহার্য।
Friday, April 21, 2023
মক্কা বিজয়
মক্কা বিজয়
ত্বমেতাঞ্জনরাঞ্জে দ্বির্দশাবন্ধুনা সুপ্রবসোপজগ্ম। ষষ্টিং সহস্রা নবতিং নবশ্রুতো নি কুচক্রেণ রথ্যা দুস্পাদাবৃণক। ৯ [ঋগ্বেদ ১ম খণ্ড ৫৩ সুক্ত ৯ম মন্ত্র]
সহায় রহিত সুশ্রবা নামক রাজার সাথে যুদ্ধ করার জন্য যে বিংশ নরপতি ও ষাট হাজার নিরানব্বই অনুচর এসেছিল, হে প্রসিদ্ধ ইন্দ্র, তুমি শত্রুদের অলক্ষ্য রথচক্র দ্বারা তাদের পরাজিত করেছিল।(রমেশ চন্দ্র দত্ত অনুদিত) উক্ত মন্ত্রটি অথর্ববেদে ২০শ খণ্ড, ৩য় অনুবাক ৪র্থ সুক্তের ৯ম মন্ত্রে ও উল্লেখিত আছে।
ভারতবিখ্যাত বেদের ভাষ্যকার খেমকরণ দাস ত্রিবেদী মহাশয় উক্ত মন্ত্রের অর্থ করেছেন, হে ইন্দ্র (হে ঐশ্বর্যবান সেনাপতি) তুমি বহু বীর্তিবান, শত্রু হত্যাকারী, অস্ত্র চালনাকারী, রাজাকে তোমার পরিত্রান ও প্রতিপালন সাধন দ্বারা রক্ষা করেছ। তুমি এই পূজনীয় ও চরিত্রে আদর্শবান রাজার জন্য সাহায্যকারী ঋষি, অতিথিগনকে আশ্রয় দানকারী ও চলমান মানবজীবনের সহিত ধনবানের ন্যায় আচরণ অর্থাৎ মহৎ ও মর্যাদাকর আচরণ করতে থাকো।। ১০
[সুশ্রবসম-বহুকীর্তিবান; তুর্বযানম শত্রু হত্যাকারী অস্ত্র চালনাকারী; কুতসম্-সাহায্যকারী ঋষি; অতিথিগ্বর্ম-অতিথিগণকে আশ্রয় দানকারী চলমান মানুষ]
এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কীর্তিবান, শত্রু হত্যাকারী, পূজনীয় ও চরিত্রে আদর্শবান রাজার পথে সাহায্যকারী ঋষি, অতিথিগণকে আশ্রয় দানকারী এবং চলমান মানুষগণ থাকবেন।
প্রশ্ন হল, তাঁরা কারা? আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, যখন মক্কায় বিধর্মীগণের অমানুষিক অত্যাচার-উৎপীড়নে হযরত মুহাম্মদ ও তাঁর শিষ্যগণের জীবন ধারণ করা সংকটময় হয়, তখন নিরূপায় হয়ে তার শিষ্যগণ প্রথমতঃ দেশত্যাগ করে আবিসিনিয়ার (বর্তমান নাম ইথিওপিয়া) গমন করেন। মক্কায় বিরুদ্ধাচরণকারী শত্রুগণের এক প্রতিনিধি দল আবিসিনিয়ার ‘খৃষ্টান বাদশাহ’র নিকট গিয়ে মুসলিম শিষ্যগণকে ফেরৎ চায়, কিন্তু বাদশাহ হযরত মুহাম্মদকে সত্য পয়গম্বর ও ঋষি বলে স্বীকার করেন এবং মুসলিমগণকে আশ্রয় দান করেন।
পুনরায় হযরত মুহাম্মদ ও তার শিষ্যগণ মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় আগমন করেন এবং মদীনাবাসীগণ তাদেরকে আশ্রয় দান করেন। ইতিহাসে উক্ত চলমান দেশত্যাগী ব্যক্তিগণ মুহাজির এবং আশ্রয় দানকারীগণ আনসার (সাহায্যকারী) নামে খ্যাত আছেন।
মন্ত্রে আবিসিনিয়ার বাদশাহ পুণ্যবান ছিলেন বলে তাকে সাহায্যকারী ঋষি বলা হয়েছে, দেশত্যাগী মুহাজিরগনকে চলমান মানুষ এবং মদীনার আশ্রয়দানকারীগণকে অতিথিগণকে আশ্রয়দানকারী, অতিথিবৎসল বলা হয়েছে।
Wednesday, April 19, 2023
ইঞ্জিল বা বাইবেলের সাথে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ঘাতকতা
ইঞ্জিল বা বাইবেলের সাথে খৃষ্টানদের বিশ্বাস ঘাতকতা
ক) হযরত ঈসা আ. খৃষ্টানদেরকে ইঞ্জিল কিতাবের ধারক বাহক বানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব পালন করেনি। তারা তাদের হক্কানী উলামাগণের তোয়াক্কা না করে সেই ওযীরে আজম সেন্টপলের অনুসারী হয়ে প্রকৃত খৃষ্টান ধর্মকে দাফন করে ছেড়েছে। সেন্টপল ইঞ্জিলের মধ্যে এমন সব মনগড়া আকীদার সংযোজন করেছিল, যা ইঞ্জিল শরীফে ছিল না এবং হযরত ঈসা আ. কখনও বলেননি। উদাহরণ স্বরূপ: তারা এ ধারণা বদ্ধমূল করে নিয়েছিল যে, ঈসা আ. খোদার পুত্র ছিলেন, তাঁর মাতা মরিয়ম আ. খোদার স্ত্রী ছিলেন। আবার তাদের আরেক দলের ধারণা- “খোদা তিনি জন”। আল্লাহ তিন খোদার একজন মাত্র। তাদের অপর এক অংশের মত- হযরত ঈসা আ. স্বয়ং আল্লাহ; আল্লাহ তা‘আলাই হযরত ঈসার আকৃতিতে দুনিয়ার আগমন করেছিলেন।” যেমনটি ধারনা হিন্দুদের (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ কুরআন স্পষ্ট ঘোষণা করছে যে, ঈসা আ. এই শিরক বা ত্রিত্ববাদের কথা কখনও বলেননি।
وَإِذْ قَالَ اللَّـهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَـٰهَيْنِ مِن دُونِ اللَّـهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚإِن كُنتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ ﴿١١٦﴾
(সূরা মায়িদা,১১৬-১১৭)
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের আরকটি জঘন্য আক্বীদা হল- “ঈসা আ. সারা বিশ্বের মানুষদের পাপ মোচনের জন্য শূলীবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন যারা ঈসা আ.- কে মানবে এবং তার ক্রসমৃত্যুকে বিশ্বাস করবে, তাদের সব পাপ মোচন হয়ে যাবে।” খৃষ্টানদের এ আক্বীদাও চরম মিথ্যা। তাদের এ গর্হিত দাবীর সমর্থন মূল ইঞ্জিলের কোথাও নেই। কুরআনে কারীমও তাদের এ আক্বীদাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন – وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ ﴿١٥٧﴾ (সূরা নিসা, আয়াত-১৫৭)
এ ছাড়া অসংখ্য আয়াত ও সহীহ হাদীসে বর্ণনা এসেছে, যে, হযরত ঈসা আ. জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আসমানে উত্থিত হয়েছেন এবং তিনি আসমানেই আছেন। অতঃপর কিয়ামতের পূর্বে তিনি আসমান থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি শেষনবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীনে ইসলামের অনুসরণ করবেন; খৃষ্টানদের ক্রশচিহ্ন ধ্বংস করবেন, শুকর কতল করবেন এবং তাঁর সম্পর্কে খৃষ্টানরা “খোদার পুত্র” ইত্যাদি বলে যে সকল অবাস্তব আক্বীদা প্রচার করছে, সে সব বাতিল ঘোষণা করবেন।
وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَـٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ ﴿٦١﴾
(সূরা যুখরূফ, আয়াত-৬১),(বুখারী শরীফ. হাদীস নং: ৩৪৪৮)
খ) وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّـهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَـٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ ﴿٦﴾
ইঞ্জিল শরীফে আছে, হযরত ঈসা আ. বলেন- “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্য রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি। আমার পূর্বের কিতাব তাওরাতকে আমি আসমানী সত্য কিতাব বলে থাকি এবং আমি আমার পরবর্তী নবীর ব্যাপারে সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে আহমদ।” (সূরা সফ, আয়াত -৬)
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল- ঈসা আ. স্বয়ং তাঁর পরবর্তী শেষ নবী আহমদ মুস্তফা সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়ে গেছেন; তাঁকে মান্য করার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন এবং তাঁকে চেনার জন্য তাঁর গুণাবলীর বিশদ ব্যাখ্যা করে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশ খৃষ্টান তাদের নবী ও তাদের কিতাবে প্রদত্ত এ নির্দেশ অমান্য করেছে। তারা শেষ নবীর ওপর ঈমান আনেনি। বরং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার জন্য বহুবার তারা ক্রুসেড যুদ্ধ করেছে। হাজার হাজার মুসলমানকে তারা শহীদ করেছে। মুসলমানদের রক্তের মধ্যে তাদের ঘোড়ার পেট পর্যন্ত ডুবে গেছে। অথচ সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী সহ বিভিন্ন মুসলিম সেনাপতি যখন খৃষ্টানদেরকে পরাজিত করেছিলেন, তখন তার প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে খৃষ্টানদেরকে মাফ করে দিয়েছিলেন।
গ) ইঞ্জিলের উপরোক্ত বর্ণনায়, এ ছাড়াও ইঞ্জিলের বিভিন্ন স্থানে ঈসা আ. এর ঘোষণা বিবৃত হয়েছিল যে, ঈসা আ. বলেছেন “হে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়। আমি তোমাদের নিকট রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। একথা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, তাদের নবী বলেছেন যে, আমি বনী ইসরাঈলের নিকট প্রেরিত হয়েছি, সারা বিশ্বের নিকট নয়। তাই প্রশ্ন হল খৃষ্টানরা স্কুল-কলেজ খুলে, মিশনারী হাসপাতাল খুলে, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করে, এরূপে আরো বিভিন্ন রকম সেবা (?) মূলক কাজ করে, চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সকল লোকদের খৃষ্টান ধর্মের দিকে দাওয়াত দিচ্ছে কেন? কী হেতু এর? তারা কি মনে করেছে, সারা দুনিয়ার লোক বনী ইসরাঈল; যাদের নিকট ঈসা আ. প্রেরিত হয়েছিল? অন্যথায় যারা বনী ইসরাঈল নয়, তাদেরকে কেন খৃষ্টান ধর্মের দাওয়াত দেয়া হচ্ছে? তারা কি মনে করছে-তাদের কিতাবে বর্ণিত শেষ নবী-“আহমদ” এখনও আবির্ভূত হননি? যদি তাদের এ বিশ্বাস থাকে যে, তাদের কিতাবে যে আখিরী নবীর ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে, তিনি আবির্ভূত হয়েছেন, তাহলে তাদের উচিৎ অন্যদের ত্রিত্ববাদের দাওয়াত না দিয়ে নিজেরা সেই “আহমাদ” এর দীনে ইসলাম কবুল করা। আমার উপরোল্লিখিত এ সকল মোটা মোটা প্রশ্নের উত্তর খৃষ্টান জগত দিবেন কি? নাকি তাদের পাদ্রীগণ মুখে মহর লাগিয়ে বাকহীন সাজবেন? যদি তা-ই হয়, তবে তাদেরকে বলছি, আপনারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য সে সকল কলা-কৌশল অবলম্বন করেছেন, তা অবিলম্বে পরিহার করুন। অন্যথায় আপনাদের ধর্ম মান্য করার দাবী মিথ্যা প্রতিপন্ন হবে। এবং প্রমাণিত হবে যে আপনারা আসলে আপনাদের ধর্মগ্রন্থই বিশ্বাস করেন না।
বরং সারা বিশ্বে নেতৃত্বের মতলবে শুধু মুখে বাইবেল বা ইঞ্জিল মান্য করার দাবী করেন মাত্র।
Sunday, April 16, 2023
হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত
হযরত উসমান রাযি. এর শাহাদাত
মদীনার নিয়ন্ত্রণ দখল করে তারা খলীফা হযরত উসমান রাযি. এর বাস ভবন অবরোধ করে। মদীনার অধিকাংশ মুসলমানই তখন হজ্জে গিয়েছিলেন। তাই মদীনা এক প্রকার জনশূন্যই ছিল। সন্ত্রাসীরা ঘোষণা দিল। আমাদের ব্যাপারে যারা হস্তক্ষেপ না করবে শুধু তারাই জানের নিরাপত্তা পাবে। তাদের মোকাবিলায় তখন উপস্থিত মদীনাবাসীদের শক্তি ছিল একেবারেই অপর্যাপ্ত। তাই তারা নিশ্চুপ থাকলেন।
সন্ত্রাসীরা খলীফার বাসভবন অবরোধ করে খাদ্য ও পানি বন্ধ করে দেয়। হযরত উসমান রাযি. ভবনের ছাদে আরোহণ করে সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে তাদের দাবী ও কার্যাবলীর অযৌক্তিকতা বুঝাতে চেষ্টা করেন। তবুও তারা খলীফার পদত্যাগের দাবীতেই অটল থাকে। কিন্তু হযরত উসমান রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তার প্রতি আরোপিত সুস্পষ্ট ও কড়া নির্দেশের কারণে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেন।
Saturday, April 15, 2023
বেফাক পরীক্ষা রেজাল্ট ২০২৩ দেখুন
বেফাক পরীক্ষা রেজাল্ট ২০২৩ দেখুন
আল্লাহর রহমতে বেফাক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে
যারা দেখবেন তারা এই লিংকে যান
Wifaqedo. come
অথবা বেফাকুল মাদারিসিল কওমীয়া বাংলাদেশ তে যান
Tuesday, April 11, 2023
আহলে হাদীস নাম ইংরেজ সরকারের অবদান
আহলে হাদীস নাম ইংরেজ সরকারের অবদান
শুরুর দিকে এ দলটি নিজেদেরকে মুহাম্মাদী, সালাফী, লা-মাযহাবী, ওয়াহাবী, আছারী ইত্যাদি বলে পরিচয় দিত। কিন্তু এসব পরিচয়ে তারা তেমন সুবিধা করতে পারছিল না। তাই বাটালবী সাহেব ইংরেজ সরকার বরাবর দরখাস্ত করলেন “আমার সম্পাদিত এশায়াতুস সুন্নাহ পত্রিকায় ১৮৮৬ইং সনে প্রকাশ করেছিলাম যে, ওয়াহাবী শব্দটি ইংরেজ সরকারের নিমকহারাম ও রাষ্ট্রদ্রোহীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং এ শব্দটি হিন্দুস্তানের মুসলমানদের ঐ অংশের জন্য ব্যবহার করা সমীচীন হবে না যাদেরকে আহলে হাদীস বলা হয় এবং যারা সর্বদা ইংরেজ সরকারের নিমকহালালী, আনুগত্য ও কল্যাণই কামনা করে যা বারবার প্রমাণিতও হয়েছে এবং সরকারী চিঠি-পত্রেও এর স্বীকৃতি আছে। অতএব এ দলের প্রতি ওয়াহাবী শব্দ ব্যবহারের জোর প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে এবং গভর্নমেন্ট বরাবর অত্যন্ত আদব ও সবিনয় নিবেদন করা যাচ্ছে যে, সরকারীভাবে এই ওয়াহাবী শব্দ রহিত করে আমাদের উপর তা প্রয়োগের নিষেধাজ্ঞা জারী করা হোক। -আপনার অনুগত আবূ সাঈদ মুহাম্মাদ হুসাইন, সম্পাদক এশায়াতুস সুন্নাহ”।
অনুগত বান্দার এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন প্রাদেশিক গভর্নর দফতর থেকে “তার দরখাস্ত মঞ্জুর করা হল এবং তাদের জন্য আহলে হাদীস নাম সরকারীভাবে বরাদ্দ করা গেল”-মর্মে চিঠি পাঠানো হয়। সরকারের তরফ থেকে পাঠানো সেসব চিঠির তালিকা লক্ষ্য করুন- পাঞ্জাব গভর্নর সেক্রেটারি মি. ডব্লিউ এম এন- চিঠি নং ১৭৫৮, সি পি গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৪০৭, ইউ পি গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৩৮৬, বোম্বাই গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ৭৩২, মাদ্রাজ গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ১২৭, বাঙ্গাল গভর্নমেন্ট- চিঠি নং ১৫৫ (সূত্র: এশায়াতুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩২-৩৯, সংখ্যা ২, খণ্ড ১১)।
আহলে হাদীস খেতাব বরাদ্দ পেয়ে বাটালবী সাহেব দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে হাদীস মানার নামে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করেন। এ কাজে তিনি নিজের সবটুকু শ্রম-সাধনা ইংরেজের সন্তুষ্টি অর্জনে বিলিয়ে দেন। তারপর কুদরতের কারিশমা দেখুন, পঁচিশ বছর পর সেই এশায়াতুস সুন্নাহ পত্রিকায় সেই মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালবী লিখলেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যেতে চায় তার জন্য সহজ পথ হল, তাকলীদ (মাযহাবের ইমামের অনুসরণ) ছেড়ে দেয়া।’ (সূত্র: এশায়াতুস সুন্নাহ, খণ্ড ১১, সংখ্যা ২, পৃষ্ঠা ৫৩)। এ যেন নিজের হাঁড়ি নিজেই হাটে ভাঙ্গার নামান্তর।
বাটালবী সাহেব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ইংরেজের সেবা করে গেছেন। ইতিহাস এর সাক্ষ্য বহন করে। তিনি মরে গেছেন কিন্তু তার বই-পুস্তক আর ভ্রান্ত মতবাদ আজও রয়ে গেছে। সেগুলোর মাধ্যমে এখনো হাজার হাজার মুসলমান গোমরাহ হচ্ছে।
Sunday, April 9, 2023
ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের কাহিনী
ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের কাহিনী
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের লোমহর্ষক কাহিনীঃ
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর ইসলাম এবং মুসলমানদের শক্তি ও শান্তি শৃঙ্খলার উৎস ছিল নিযামে খিলাফাত বা সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক খিলাফত ব্যবস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইন্তিকালের পর সর্বপ্রথম খলীফা মনোনীত হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.।
তাঁর পর খলীফা নিযুক্ত হন হযরত উমর রাযি. এই দুই খলীফার কালজয়ী আদর্শ শাসনে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও সফলতা যখন পরিস্ফুটিত ও সু-প্রমাণিত হয়ে প্রকাশ পায় তখনই ইয়াহুদী খৃষ্টান চক্র তাদের সকল ষড়যন্ত্রের মূল টার্গেট বানায় ‘নিযামে খিলাফাত’ কে। নতুন করে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির মূল শক্তি খিলাফত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দুরভিসন্ধিতে ইসলামের তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন হযরত উসমান যিন্নুরাইন রাযি. এর খিলাফতকালের প্রাথমিক পর্যায়ে হিজরী ২৫ সনে ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলমান দলভুক্ত হয় আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামে এক কুখ্যাত ইয়াহুদী মুনাফিক।
এসময় হযরত উসমান রাযি. এর নেতৃত্বে পারস্য, মিশর, সিরিয়া ও ইরাক ইত্যাদি অঞ্চল বিজিত হওয়ার পর লক্ষ লক্ষ লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার হিড়িক চলছিল। এর মধ্য আব্দুল্লাহ বিন সাবা ছাড়াও তার মত আরো অনেক সংখ্যক মুনাফিক ইসলামের মূলে আঘাত হানার মানসে বাহ্যতঃ ইসলাম গ্রহণ করে।
Thursday, April 6, 2023
আখিরী নবী ﷺ এর কতিপয় গুণাবলী
আখিরী নবী ﷺ এর কতিপয় গুণাবলী
আয়াতটির আলোকে আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর কতিপয় গুণাবলী আলোচ্য আয়াতটিতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহের উদ্ধৃতি দিয়ে আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে সকল গুণাবলীর অবতারণা করা হয়েছে, তা নিম্নরূপ:
ক) আখিরী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, সোয়া লক্ষ আম্বিয়ায়ে কিরামের আ. মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মাত্র তিন শত তের জনকে রাসূলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। নবী ও রাসূলের মধ্যে মর্যাদা ও বিধানগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। রাসূলগণের মর্তবা সাধারণ নবীগণের ঊর্ধ্বে। সংজ্ঞা হিসেবে নবী বলতে বুঝায় যিনি আল্লাহর পয়গাম বান্দাদের নিকট পৌছিয়ে থাকেন। তাঁর উপর স্বতন্ত্র কিতাব নাযিল হওয়া বা তাঁকে নতুন শরী‘আত প্রদান করা শর্ত নয়। অপর দিকে রাসূল বলা হয়, এরূপ দীন প্রচারক নবীকে; যাঁকে নতুন কিতাব ও নতুন শরী‘আত প্রদান করা হয়েছে । অথবা কোন কাফির সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। সেই স্বতন্ত্র আসমানী কিতাব ও নতুন শরী‘আত প্রাপ্ত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে “সাইয়্যিদুল মুরসালীন বা রাসূলগণের সরদার” মনোনীত করেছেন।
Wednesday, April 5, 2023
ফিকহ শাস্ত্রে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর অবদান
ফিকহ শাস্ত্রে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর অবদান
ইসলামী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় যেমনঃ তাফসীর, হাদীস, ফিকহ, মাগাযী ইত্যাদির শুরু ও সুচনা যদিও ইসলামের প্রারম্ভ থেকে হয়েছিল তবুও যত দিন পর্যন্ত সেগুলো একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রের মর্যাদা লাভ করেনি, তত দিন পর্যন্ত তার সঙ্গে কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম যুক্ত হয়নি। সে হিসেবে হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত ফিকহশাস্ত্রের সঙ্গেও কোন ব্যক্তি বিশেষের নাম যুক্ত হয়নি। হিজরী দ্বিতীয় শতকের শুরুর দিকে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী ইমাম আবূ হানীফা নু’মান ইবনে সাবেত রহ.-এর সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা সাধনায় ফিকহশাস্ত্র পূর্ণতা লাভ করে এবং একটি সতন্ত্র বিদ্যায় রূপ নেয়। এজন্য ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিকহ আবিষ্কারক হিসেবে ভূষিত হন। ড. ফিলিপ হিট্টির ভাষায়ঃ
الاما م ابو حنيفة الذى وضع الاساس لاول مدارس شرع الاربع فى الاسلام.
অর্থঃ “আবূ হানীফা রহ. সেই ব্যক্তি, যিনি ইসলামে সর্বপ্রথম ফিকহ শরী‘আর ভিত্তি স্থাপন করেন।”
অর্থাৎ আবূ হানীফা রহ. সহীহ হাদীসের আলোকে ইস্তিমবাত, ও গবেষণার মাধ্যমে ফিকহে ইসলামীকে এমন পূর্ণতা ও সামগ্রিকতা দান করেন যে, তিনি ফিকহে ইসলামীর মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হন। তিনি যেমন ঘটিত বিষয়ে ফাতাওয়া ভাণ্ডার গড়ে তুলেছিলেন, তেমনি সম্ভাব্য ও ঘটিতব্য মাসআলার ফাতাওয়া ভাণ্ডারও গড়ে তুলেছিলেন। ফলে তার ফাতাওয়া ভাণ্ডার বিশাল আকার ধারণ করেছিল। আবূল ফজল কিরমানী তার ইরশাদুল মারাম গ্রন্থে বলেন,-“আবূ হানীফা রহ.-এর মাসআলার সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো” আল্লামা আইনী রহ. তার ইনায়া গ্রন্থে বলেন, “আবূ হানীফা রহ.-এর মাসআলা বারো লাখ সত্তর হাজারের কিছু বেশি।” এর দ্বারা অনুমান করা যায় কী বিশাল ফিকহী ভাণ্ডারই না তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আর এ কারণেই পরবর্তী সকল ফিকহ ও মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহকে পুঁজি করে।
উদাহরণতঃ শাফেয়ী মাযহাবের ইমাম হলেন ইমাম শাফেয়ী রহ.। তিনি ফিকহ শিখেছেন ইমাম মুহাম্মাদ রহ.-এর নিকট থেকে। আর ইমাম মুহাম্মাদ রহ. ছিলেন ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর প্রথম সারির শিষ্য। মালেকী মাযহাবের প্রবর্তক হলেন, ইমাম মালেক রহ.। তিনিও আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহ থেকে বেশ উপকৃত হয়েছেন। কাযী আবূল আব্বাস মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ধারাবাহিক সনদে আব্দুল আযীয আদ দারা ওয়ারদী হতে বর্ণনা করেন, ‘ইমাম মালেক রহ. ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর কিতাবসমূহ গভীরভাবে অধ্যয়ন করতেন এবং তা থেকে উপকৃত হতেন।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে আবূ হানীফা রহ. মদীনা সফরকালে ইমাম মালেক রহ. তাঁর সাথে মসজিদে নববীতে মিলিত হতেন তারপর তারা উভয়ে ইশার নামাযের পর থেকে ফজরের নামায পর্যন্ত ইলমী আলোচনায় মশগুল থাকতেন। (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনে আবিল আওয়াম-১০৩)
হাম্বলী মাযহাবের প্রবর্তক ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. ফিকহ ও হাদীস হাসিল করেছেন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রহ. থেকে। যাদের ফিকহের ভিত্তি ছিল ফিকহে আবূ হানীফা রহ.। হাফেয আবূল ফাতাহ সাইয়িদুন নাস ‘উয়ূনুল আসার’ গ্রন্থে লিখেন, “হযরত আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. বলেন, আমার পিতা (আহমাদ ইবনে হাম্বল) ইমাম আবূ ইউসুফ ও মুহাম্মাদ রহ. থেকে তিন তাক পরিমাণ ইলমে শরী‘আহ লিপিবদ্ধ করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি সেগুলো অধ্যয়ন করতেন? আব্দুল্লাহ বললেন, মাঝে মাঝে অধ্যয়ন করতেন।” (আরো দেখুন বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ ১০/৩৪৭)
এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, আবূ হানীফা রহ.-এর পর হতে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মুহাদ্দিস ও ফকীহের আগমন ঘটেছে তারা সকলেই কোন না কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং কোন না কোন ইমামের ফিকহের আলোকে জীবন যাপন করেছেন। সুতরাং পরবর্তী সকল মুহাদ্দিস ও ফকীহ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর ফিকহের কাছে ঋণী। এমন কি এ কথা বলাও অতিরঞ্জন হবে না যে, ইমাম সাহেব পরবর্তী গোটা মুসলিম যাহান তাঁর ও তাঁর ফিকহের কাছে চিরঋণী। ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর বিখ্যাত উক্তিটি লক্ষ করুন, মাযহাবের একজন মান্যবর হওয়া সত্ত্বেও তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন- الناس عيال ابي حنفة في الفقه
“ফিকহ বিষয়ে সকল মানুষ আবূ হানীফা রহ.-এর কাছে দায়বদ্ধ। (তারীখে বাগদাদ ১৩/৩৪৬; সিয়ারু আ’লামিন নবালা ৬/৪০৩, তাহযীবুত তাহযীব ১০/৪৫০)
তিনি আরও বলেছেন,
ما طالب احد الفقه الا كان عيالا على ابي حنفة
“যে কেউ ফিকহ অন্বেষণ করবে তাকে আবূ হনীফার কাছে দায়বদ্ধতা স্বীকার করতেই হবে। (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনে আবিল আউয়াম ৭)
ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর ফিকহ আহোরণ ও সংকলন পদ্ধতিঃ
ইমাম আবূ হানীফা রহ. কীভাবে ফিকহ আহরণ করতেন তা স্বয়ং তার যবানীতেই শুনুন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সহীহ সনদে ইমাম আবূ হানীফা রহ. এর যে
নীতিগুলো উল্লেখিত হয়েছে তার সারকথা এই-
১। মাসআলার সমাধান যখন কিতাবুল্লাহতে পাই তখন সেখান থেকেই সমাধান গ্রহণ করি।
২। সেখানে না পেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ ও সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করি, যা নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। সহীহ হাদীস আমাদের শিরোধার্য, একে পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর শরনাপন্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
৩। এখানে যদি না পাই তাহলে সাহাবায়ে কেরামের সিদ্ধান্তগুলোর শরণাপন্ন হই।
৪। কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রাসূল্লিল্লাহ ও ইজমায়ে সাহাবার সামনে কিয়াস চলতে পারে না। তবে যে বিষয়ে সাহাবীদের একাধিক মত রয়েছে সেখানে ইজতিহাদের মাধ্যমে যে মত কুরআন-সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী বলে বোধ করি তা গ্রহণ করি।
৫। মাসআলার সমাধান এখানেও পাওয়া না গেলে ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছে থাকি। তবে এ ক্ষেত্রেও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হই না। (আল ইনতিকা ফী ফাযাইলিল আইম্মাতিছ ছালাছাতিল ফুকাহা, ইবনে আব্দিল বার ১২/২১৬-২৬৪, ফাযাইলু আবী হানীফা আবূল কাসিম ইবনু আবিল আউয়াম ২১-২৩, মাখতুত: আবী হানীফা ওয়া আসহাবিহী, আবূ আব্দুল্লাহ আস সাইমারী (মৃত্যু ৪৩৬ হি.) পৃষ্ঠা : ১০-১৩, তারিখে বাগদাদ ১৩/৩৬৮, মানাকিবুল ইমাম আবূ হানীফা, মুয়াফফাক আল মক্কী ১/৭৪-১০)
ফিকহে মুতাওয়ারাস এর সংকলন এবং ফিকহে জাদীদে আহরণের যে নীতিমালা ইমাম সাহেবের নিজের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে তা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের সকল ইমামের সর্বসম্মত নীতি। কোন ফিকহ তখনই ইসলামী ফিকহ হতে পারে যখন তা উপরোক্ত নীতিমালার ভিত্তিতে সংকলিত ও আহরিত হয়। ফিকহ সংকলন ও আহরণের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণে ইমাম সাহেব রহ. কতটুকু সফল হয়েছেন তা তার সমসাময়িক স্বীকৃত ইমামগণের বক্তব্য থেকে জানা যেতে পারে, যারা তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ইত্যাদি সকল ইসলামী শাস্ত্রের ইমাম ছিলেন, ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ. (মৃত্যু-১৬১ হি.) বলেন, “আবূ হানীফা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ইলম অন্বেষণ করেছেন। তিনি ছিলেন (দ্বীনের প্রহরী) দ্বীনের সীমানা রক্ষাকারী যেন আল্লাহর হারামকৃত কোন বিষয়কে হালাল মনে করা না হয়। কিংবা হালালের মতো তাতে লিপ্ত না হয়। যে হাদীসগুলো তার কাছে সহীহ সাব্যস্ত হতো অর্থাৎ যা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিগণের সনদে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি তা গ্রহণ করতেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লাম-এর কর্ম থেকে যেটি সর্বশেষ সেটি গ্রহণ করতেন আর কুফার আলেমগণকে যে সকল হাদীসের উপর প্রতিষ্ঠিত দেখেছেন সে সকল হাদীসও তিনি গ্রহণ করতেন। (কেননা এটাই ছিল সাহাবা যুগ থেকে চলমান আমল ও ধারা) (আল ইনতিকা, ইবনে আব্দিল বার পৃষ্ঠা: ২৬২) ফিকহে হানাফীর ভিত্তিই যখন হাদীস ও সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত তখন হাদীস ও সুন্নাহর সঙ্গে এর সম্পর্ক কতখানি মজবুত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্যই ইমাম ইবনুল মুবারক রহ. বলেছেন, ‘আবূ হনীফার ফিকহকে শুধু রায় বলো না। কেননা তা হলো হাদীসের তাফসীর।’ (ফাযাইলু আবী হানীফা, ইবনু আবিল আওয়াম-২৩)
সংকলন পদ্ধতি:
১২০ হিজরীতে হাম্মাদ রহ. এর ইন্তেকালের পর ইমাম আবূ হানীফা রহ. তার আসনে সমাসীন হলেন। এদিকে ইসলামী সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। ইবাদাত ও মু’আমালাত সম্পর্কিত বিষয়াদিতে এত মাসআলা দেখা দিল যে, এর সমাধানে আইনের একটি সুবিন্যস্ত সংকলন ছাড়া কিছুতেই কাজ চলছিল না। তাই ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিকহ সংকলনের ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু এই মহাগুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দিতে একদল দক্ষ, কর্মঠ ও অভিজ্ঞ আলেমের প্রয়োজন ছিল। সে মতে তিনি তার অগণিত ছাত্রদের মধ্য হতে বাছাই করে চল্লিশ জন দক্ষ ও কর্মঠ ছাত্র নিয়ে ফিকহ বোর্ড গঠন করেন।
ইমাম ত্বহাবী রহ. আসাদ ইবনে ফুরাত হতে অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেন, “আবূ হানীফা রহ. এর যে সকল ছাত্র ফিকহ সংকলনের কাজ আঞ্জাম দেন তাদের সংখ্যা (৪০) চল্লিশ জন।” এরা হলেন-
১. কাযী আবূ ইউসুফ
২. ইমাম মুহাম্মাদ
৩. ইমাম যুফার
৪. ওয়াকী ইবনুল জাররাহ
৫. ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া
৬. আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক
৭. দাউদ ইবনে নুসাইর
৮. হাফস ইবনে গিয়াস
৯. ইউসুফ ইবনে খালিদ
১০. আফিয়া ইবনে ইয়াযিদ
১১. হিব্বান ইবনে আলী
১২. মুনদিল ইবনে আলী
১৩. আলী ইবনে মুসহীর
১৪. কাসীম ইবনে মা’আন
১৫. আসাদ ইবনে আমর
১৬. ফযল ইবনে মুসা
১৭. আলী ইবনে যারইয়ান
১৮. হিশাম ইবনে ইউসুফ
১৯. ইয়াহইয়া ইবনে সাইদ আল কাত্তান
২০. শুআইব ইবনে ইসহাক
২১. হাফস ইবনে আব্দুর রহমান
২২. হাকাম ইবনে আব্দুল্লাহ
২৩. খালিদ ইবনে সুলাইমান
২৪. আঃ হামিদ ইবনে আব্দুর রহমান
২৫. আবূ কাসেম যাহহাক ইবনে মাখলাদ
২৬. মাক্কী ইবনে ইবরাহীম
২৭. হাম্মাদ ইবনে দালীল
২৮. আব্দুল্লাহ ইবনে ইদরীস
২৯. ফুজাইল ইবনে ইয়ায
৩০. হাইসাম ইবনে বাশীর
৩১. নূহ ইবনে দাররাহ
৩২. যুহাইর ইবনে মুআবিয়া
৩৩. শরীক ইবনে আব্দুল্লাহ
৩৪. নসর ইবনে আব্দুল কারীম
৩৫. মালিক ইবনে মা’ফুল
৩৬. জাবীর ইবনে খাযিম
৩৭. জারীর ইবনে আব্দুল হামীদ
৩৮. হাসান ইবনে যিয়াদ
৩৯. হাম্মাদ ইবনে আবী হানীফা
৪০. আবূ ইসমাতা নূহ ইবনে মারয়াম
সংকলন পদ্ধতি ছিল এরূপ, বোর্ডের সামনে কোন একটি মাসআলা পেশ করা হতো। সবাই এ ব্যাপারে এক মত না হলে অত্যন্ত স্বাধীনভাবে বিতর্ক শুরু হয়ে যেতো। এই বিতর্ক কখনও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আবার কখনও কয়েকদিন পর্যন্ত চলত। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ধ্যান ও ধৈর্য্য সহকারে সকলের বক্তব্য শুনতেন। সবশেষে তিনি এমন পাণ্ডিত্যপূর্ণ ফায়সালা পেশ করেন যে, সকলেই তা মানতে বাধ্য হতো। আবার কখনও এরূপ হতো যে, ইমাম সাহেবের ফায়সালার পরও কেউ কেউ নিজ নিজ মতের উপর অটল থাকতেন। তখন ইমাম সাহেবের ফায়সালার পাশাপাশি ওই সব মতগুলোকেও লিপিবদ্ধ করে নেওয়া হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত অধিকাংশ সদস্য কোন ব্যাপারে একমত না হতো ততক্ষন পর্যন্ত কোন মাসআলার ফায়সালা না করার বিধান ছিল। হাফেজ আবূল মাহাসেন রহ.- বলেন, এ সংকলনের বিন্যাস ছিল নিম্নরূপঃ
প্রথমে পবিত্রতার অধ্যায়, অতঃপর নামায ও রোযার অধ্যায়, তারপর ছিল ইবাদতের অন্যান্য অধ্যায়। অতঃপর মু’আমালাত ও লেনদেন এবং সর্বশেষে ছিল উত্তরাধিকারের অধ্যায়। পরবর্তীতে ইমাম মালেক রহ. ইমাম আবূ হানীফা রহ. সংকলিত ফিকহের এই বিন্যাস অনুযায়ী বিখ্যাত কিতাব মুয়াত্তা সংকলন করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. এর বর্ণনা অনুযায়ী এটা এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। তিনি লিখেন, “যে বৈশিষ্ট্যে ইমাম আবূ হানীফা রহ. একক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী তা হল, তিনিই সর্ব প্রথম শরী‘আতের ইলমকে সংকলিত করেছেন এবং বিষয় ভিত্তিক বিন্যাসে অধ্যায় ও পরিচ্ছেদ বিন্যস্ত করেছেন। এরপর ইমাম মালেক রহ. মুয়াত্তা গ্রন্থে তাঁর অনুসরণ করেছেন এবং সুফিয়ান সাওরীও তার গ্রন্থে ঐ নীতি অনুসরণ করেছেন। এ ব্যাপারে কেউ আবূ হনীফা রহ.-এর অগ্রবর্তী হতে পারেন নি।’
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ সতর্কতা ও পূর্ণতার সঙ্গে ফিকহ সংকলনের কাজটি আঞ্জাম পেয়েছিল। যা হোক ইমাম সাহেবের জীবদ্দশাতেই এ সংকলন প্রকাশিত হয়ে সকলের নিকট সমাদৃত হয়। এমনকি সে সময় তার সমকক্ষের দাবীদার ব্যক্তিবর্গও তাঁর এ সংকলন থেকে উপকৃত হন।
যায়েদা বলেন, আমি সুফিয়ান সাওরী রহ.-এর শিয়রে একটি কিতাব দেখতে পেলাম যে কিতাবটি তিনি পাঠ করছিলেন। অনুমতি নিয়ে আমি কিতাবটি দেখতে লাগলাম। দেখি সেটা আবূ হানীফা রহ.-এর ‘কিতাবুর রেহেন’ (বন্ধক সংক্রান্ত মাসআলার সংকলন) আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি আবূ হনীফার কিতাব পাঠ করছেন? তিনি বললেন, আফসোস যদি তাঁর সবগুলো রচনাই আমার কাছে থাকতো।” (হযরত আবূ হানীফা রহ., শিবলী নোমানী পৃ: ১৫৩ বাংলা অনুদিত)
এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, ফিকহ সংলন ও গ্রন্থনায় ইমাম সাহেবের কী প্রভাব-বিস্তারক অবদান রয়েছে। তাঁর এই অনবদ্য ও অতুলনীয় অবদানের কথা আজকের কতিপয় আহলে হাদীস বন্ধু অস্বীকার করলেও ইমাম বুখারী রহ.-এর দাদা উস্তাদ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে দাউদ কুরাইবী যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি বলেছেন, মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য হলো, নিজেদের নামাযে ইমাম আবূ হানীফার জন্য দু’আ করা। কেননা তিনি উম্মাহর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও ফিকহ সুরক্ষিত করে গিয়েছেন।